দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় গত মার্চ মাসে প্রাণ হারিয়েছে ৫৬৪ জন। তাদের মধ্যে ৬৯ জনই স্কুল-মাদ্রাসা-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এ সময়ে ৪৮৬টি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ১ হাজার ৯৭ জন। এসব দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ৩৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ বা ১৯৪ জন মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহী। মার্চে ৪০ শতাংশের বেশি দুর্ঘটনা বেশি হয়েছে আঞ্চলিক সড়কে।
গতকাল বুধবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের মার্চ মাসের সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে তারা।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মার্চ মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৮৬টি। এতে ৫৬৪ জন নিহত এবং ১ হাজার ৯৭ জন আহত হয়েছে। সড়কে নিহতের মধ্যে নারী ৮৮ ও শিশু ৭৩ জন। এ সময়ে ১৭৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৯৪ জন, যা মোট নিহতের ৩৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১০৭ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ১৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছে ৮১ জন, অর্থাৎ ১৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এ সময়ে ৬টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত ও ১৯টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত এবং ৪ জন আহত হয়েছে।
সড়কে নিহতদের পেশাগত পরিচয় বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা দেশে মার্চে সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল-মাদ্রাসা-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৯ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ২, বিমানবাহিনীর সার্জেন্ট ১, আনসার সদস্য ১, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক ১৯, দন্তচিকিৎসক ১, পল্লীচিকিৎসক ২, সাংবাদিক ৪, আইনজীবী ৩, বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা ৬, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ৯, ওষুধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ২১, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ৩৪, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ১৭, পোশাকশ্রমিক ৫, পদ্মা ব্রিজের রেলশ্রমিক ১, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিক ১, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মচারী ১ জন রয়েছেন।
বেসরকারি সংগঠনটি জানিয়েছে, মার্চ জুড়ে প্রায় ৩৮ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। তবে একক জেলা হিসেবে ময়মনসিংহে সবচেয়ে বেশি ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। সবচেয়ে কম ফেনী ও জামালপুর জেলায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৮৫টি মুখোমুখি সংঘর্ষে, ২৪২টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১০৪টি পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দিয়ে, ৩৯টি যানবাহনের পেছনে আঘাতে ও ১৬টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে। দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ ছিল সবচেয়ে বেশি ২৫ শতাংশ। আর দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৮৫৩টি। সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলো সবচেয়ে বেশি ঘটেছে সকালে।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৪ শতাংশের বেশি এবং প্রাণহানিও ২৪ শতাংশের বেশি। ঢাকা বিভাগে ১১৯টি দুর্ঘটনায় ১৩৭ জন। সবচেয়ে কম ময়মনসিংহ বিভাগে। ৩০টি দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত হয়েছে। একক জেলা হিসেবে ময়মনসিংহে সবচেয়ে বেশি ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সবচেয়ে কম ফেনী ও জামালপুর জেলায়। চারটি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।