রজনীকান্ত বর্মণের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ফাইনালে লাল সবুজদের প্রতিপক্ষ ছিল মালদ্বীপ। সেই শেষ, তারপর আর দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে দ্বীপ রাষ্ট্রের বিপক্ষে জয় পায়নি তারা। দীর্ঘ দুই দশকের প্রতীক্ষা ফুরিয়েছে। কুড়ি বছর এবার বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে এই দলটির বিপক্ষে জয় পেলেন জামাল ভূঁইয়ারা।
বেঙ্গালুরুতে প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত ৩-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ। যে জয় টুর্নামেন্টে বাংলাদেশকে দেখাচ্ছে সেমিফাইনালের স্বপ্ন।
খেলার ১৮ মিনিটে হামজা মোহাম্মদের অসাধারণ গোলে এগিয়ে যায় মালদ্বীপ। তবে বিরতিতে যাওয়ার আগ মুহূর্তে রাকিব হোসেনের গোলে সমতায় ফিরে বাংলাদেশ।
৪-৪-২ ফরম্যাশনে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে দেখা গেল বাংলাদেশকে। মালদ্বীপকে পেছনে ফেলে গোল নিয়ন্ত্রণেও এগিয়ে থাকলো তারা। তবে ঘর সামলে প্রতি-আক্রমণ নির্ভর কৌশলে খেলে ১৮ মিনিটে বিপরীত স্রোতে গোল করে মালদ্বীপ। দলটির আক্রমণভাগের প্রাণভ্রমরা হামজা মোহাম্মদ ডি-বক্সের বেশ বাইরে থেকে ডানপায়ের কোনাকুনি শটে হতবাক করে দিলেন বাংলাদেশের ফুটবলারদের।
এরপর কিছুক্ষণের জন্য মনে হচ্ছিল, তাল কেটে গেছে বাংলাদেশের। তবে সেটা হয়নি। পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ আরও সংঘবদ্ধ হয়ে আক্রমণ চালিয়ে বিরতিতে যাওয়ার আগেই সমতায় ফিরেছে। বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে ডু-অর-ডাই ম্যাচের প্রথমার্ধে বাংলাদেশের স্বপ্ন বাঁচানো গোলটি করেন রাকিব হোসেন।
লেবাননের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে হেরে যাওয়া ম্যাচের একাদশে দুটি পরিবর্তন এনে মালদ্বীপের বিপক্ষে দল সাজান বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। দুই ফরোয়ার্ড মজিবর রহমান জনি ও সুমন রেজার জায়গায় কোচ মাঠে নামান মিডফিল্ডার মোহাম্মদ হৃদয় ও উইঙ্গার রাকিব হোসেনকে।
নিজের সহজাত রাইট উইঙ্গটা তরুণ সতীর্থ ফয়সাল আহমেদ ফাহিমকে দিয়ে একটু বাঁ দিকে চেপে খেলতে দেখা যায় গত ম্যাচে বদলী হিসেবে খেলা রাকিবকে। আক্রমণ রচনার মূল দায়িত্বে ছিলেন আবাহনীর মিডফিল্ডার মোহাম্মদ সোহেল। বেশ ক’জন ভীতি জাগানিয়া থ্রু পাসও ঠেলেছিলেন। তবে সেগুলো কাজে লাগানো যায়নি। ষষ্ঠ মিনিটে মোহাম্মদ সোহেলের রক্ষণ চেরা পাসে রাকিব বলের নাগাল পাননি।
এর পাঁচ মিনিটর পর জামাল ভুঁইয়ার কর্নারে সোহেল রানার হেড মালদ্বীপ কিপারের গ্লাভসে যায়। প্রথম পনের মিনিটেই চারটি কর্নার ও বেশ কটি থ্রো-ইন আদায় করে বাংলাদেশ মাঠের নিয়ন্ত্রণ ভালোভাবেই নিয়েছিল। তবে ১৮ মিনিটে আলী ফাসিরের পাসে হামজা মোহাম্মদের আচমকা শট নাগালে থাকা সত্যেও রুখতে ব্যর্থ হন বাংলাদেশ কিপার আনিসুর রহমান জিকো।
পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ হাল ছাড়েনি। ২৫ মিনিটে জামালের আরেকটি কর্নারে তপুর হেড ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়। ৩৩ মিনিটে সোহেল রানার কর্নারে তপুর আরেকটি হেড জালে প্রবেশ করার আগে ক্লিয়ার করেন হুসেইন নিহান। ফিরতি বলটি মালদ্বীপের আহমেদ নুমানের হাতে লেগে জালে প্রবেশের আগে কিপার বল আয়ত্বে নেন। বাংলাদেশ সোচ্চার হয়েছিল পেনাল্টির দাবিতে।
যদিও সেই দাবি ভারতীয় রেফারির কাছে ধোপে টিকেনি। তবে ৪২ মিনিটে সোহেল রানার ক্রসে তপু বক্সে পেয়ে হেড করে বাড়ান পোস্টের বাঁ দিকে। সেখান থেকে রাকিব সুযোগ সন্ধানী হেডে বল জালে জড়িয়ে দেন। প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে বাঁ দিক থেকে আক্রমণে উঠেছিলেন রাকিব। প্রায় দূরহ কোণ থেকে আচমকা শট নেন রাকিব। যা শেষ মুহূর্তে ফিস্ট করে মালদ্বীপকে রক্ষা করেন কিপার হুসেইন শরীফ।
ম্যাচের ৯০ মিনিটে মোরসালিনের অসাধারণ গোলে ৩-১ হয়। কাউন্টার অ্যাটাক থেকে বল পেয়ে বিশ্বনাথ ডান দিকে মোরসালিনকে ছাড়েন। মোরসালিন সামোহ আলীকে বডি ডজে ছিটকে ফেলে কোনাকুনি শটে কিপারকে পরাস্থ করেন। যোগ করা সময়ের শুরুতে হামজা মোহাম্মদের বক্সের বাইরে থেকে ডানপায়ের শট পোস্ট কাঁপিয়ে ফিরে আসলে অনেক দিন বড় বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারে বাংলাদেশ।