মিরপুরের স্বাদ ভারতীয় ক্রিকেট দল আগেও পেয়েছে। সাত বছর পরে ওই স্বাদ আবার দিল টাইগাররা। শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের মন্থর উইকেটে ১৮৬ রানে রোহিত-বিরাটদের প্যাকেটও করে দেন অভিজ্ঞ স্পিনার সাকিব আল হাসান ও দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা পেসার এবাদত হোসেন। ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়লেও মেহেদি মিরাজের দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত ১ উইকেটে জিতেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
ভারতকে নাগালে পেয়েও ম্যাচটি হারতে বসেছিল বাংলাদেশ। শেষ উইকেটে করতে হতো ৫১ রান! মিরাজের সঙ্গী কেবল মুস্তাফিজুর রহমান! হারের প্রান্তে দাঁড়িয়ে শট খেলতে শুরু করেন মিরাজ। বাউন্ডারি মারতে গিয়ে ক্যাচও তুলে দেন তিনি। কিন্তু উইকেটরক্ষক কেএল রাহুল উপরে ওঠা মিরাজের ক্যাচ নয় যেন ম্যাচই ছেড়ে দেন। ওই মিরাজ ৩৯ বলে চারটি চার ও দুই ছক্কায় ৩৮ রানের ইনিংস খেলে চার ওভার থাকতে দলকে জয় এনে দিয়েছেন।
ডিসেম্বরে শুরু। শীত জেকে না বসলেও শিশির পড়তে শুরু করেছে। দ্বিতীয় ইনিংসে বল ভিজে যাওয়ার চিন্তায় রোববার শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে টস জিতে শুরুতে বোলিং করার বিষয়ে ভাবতে হয়নি নিয়মিত অধিনায়ক তামিম ইকবালের ইনজুরিতে নেতৃত্বভার পাওয়া লিটন দাসের। বল হাতে ভালোও করেন দলের বোলাররা।
ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে ডানহাতি স্পিনার মেহেদি মিরাজ ব্রেক থ্রু দেন। তিনি তুলে নেন শিখর ধাওয়ানকে (৮)। অন্য ওপেনার রোহিত রান তুলছিলেন। তর সঙ্গে কোহলি সেট হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ভারতীয় অধিনায়ক ২৭ রান করে ফেরায় ওই জুটি জমেনি। রান পাননি সাবেক অধিনায়ক কোহলিও। তিনি ফিরে যান ৯ রান করে।
বিপদে পড়া দলকে টানছিলেন শ্রেয়াস আয়ার ও কেএল রাহুল। এর মধ্যে চারে নামা আয়ার আউট হন ২৪ রান করে। ক্রিজে এসে দৃঢ়তা দেখাতে শুরু করেন ওয়াশিংটন সুন্দর। তিনি ৪৩ বল খেলে ১৯ রান করে ফিরে যান। পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে মাঠে আসা কেএল রাহুল দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। নবম ব্যাটার হিসেবে ফিরে যাওয়ার আগে ৭০ বলে পাঁচটি চার ও চারটি ছক্কায় ওই রান তোলেন তিনি।
জবাব দিতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ওপেনিং করতে নামা নাজমুল শান্ত। দলের ২৬ রানে ফেরেন তিনে নামা এনামুল হক। তিনি করেন ১৪ রান। ওই ধাক্কা ৪৪ রানের জুটি গড়ে সামলান লিটন দাস ও সাকিব আল হাসান। লিটনের ব্যাট থেকে আসে ৬৩ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ৪১ রান। দলীয় শতকের আগে সাকিব আল হাসান ৩৮ বলে ২৯ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন।
তবু ম্যাচ পক্ষে ছিল বাংলাদেশের। পাঁচে ও ছয়ে নামা দুই অভিজ্ঞ মিডল অর্ডার ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ ধীরে ব্যাটিং করলেও দলকে টানছিলেন। রিয়াদ ৩৫তম ওভারের শেষ বলে ৩৫ বলে ১৪ রান করে আউট হন। পরের বলেই বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন মুশফিক। তিনি করেন ৪৫ বলে ১৮ রান। দলের রান তখন ১২৮। জিততে দরকার ৫৯।
তখনও ম্যাচ হাতছাড়া হয়নি বাংলাদেশের। ক্রিজে ছিলেন আফিফ ও মেহেদি মিরাজ। কিন্তু বাঁ-হাতি আফিফ জুটি দিতে পারেননি। তিনি ৬ রান করে ফিরে যান। পরেই এবাদত এসে হিট উইকেট হন। পেসার হাসান মাহমুদও রানের খাতা খুলতে পারেননি। হারের চিন্তা মাথায় না নিয়ে মুস্তাফিজকে নিয়ে মিরাজ লড়াই চালিয়ে যান এবং ভক্তদের ভাসান জয়ের উল্লাসে।
এর আগে বাংলাদেশ দলের হয়ে ১০ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন সাকিব আল হাসান। ভারতের বিপক্ষে তৃতীয় স্পিনার হিসেবে পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা পেসার এবাদত ৪৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নেন। ভারতের হয়ে মোহাম্মদ সিরাজ তিনটি এবং কুলদীপ সিং ও ওয়াশিংটন সুন্দর দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। ভারতের বিপক্ষে সিরিজ নিশ্চিতের ম্যাচে ৭ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামবে বাংলাদেশ।