মেহেরপুরের মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সের দুই শতাধিক ভাস্কর্য ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। ভাঙা ভাস্কর্যগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। গত সোমবার এ ঘটনা ঘটে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর সোমবার সারাদেশের মতো মেহেরপুরের মুজিবনগরেও ছাত্র-জনতা আনন্দ মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। তাদের মধ্যে কিছু দুষ্কৃতকারী মুবিজনগর সরকারের শপথ নেওয়ার স্থানে নির্মিত প্রায় ৬০০ ভাস্কর্যের মধ্যে দুই শতাধিক ভাস্কর্য ভাঙচুর করে। ঐতিহাসিক এই স্থানটির ভাস্কর্যগুলো ভাঙচুর করায় অনেকে নিন্দা প্রকাশ করেছেন। নতুন যারা সরকারে আসবেন, তারা যেন দ্রুত ভাস্কর্যগুলো মেরামত করেন সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী দেশের মানচিত্রে মহান মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরকে ভাগ করে প্রায় ৬০০টি ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয় মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন চিত্র। দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে যান ঐতিহাসিক মুজিবনগরে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে।
মুজিবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার দেওয়া আনসার সদস্য আজিমুদ্দিন শেখ ও সিরাজ উদ্দিন বলেন, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই এপ্রিল মুজিবনগরের বৈদ্যনাথতলা আম্রকাননে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা ও শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার। তারা ওই সরকারকে গার্ড অব অনার দেওয়া সদস্য হওয়ায় প্রতি বছর অনেক দর্শনার্থী তাদের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে আসে। দেশের মানুষ যেসব ভাস্কর্য ও স্মৃতিসৌধ দেখার জন্য আসত, ভাস্কর্য ভেঙে ফেলায় তারা আর আসবে না। তাদের কথাও আর কেউ শুনবে না।
তারা জানান, মুজিবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার দেওয়া ১২ জন সদস্য ছিলেন। তাদের মধ্যে ১০ জনই মারা গেছেন। তারা বেঁচে থেকে এই দৃশ্য দেখে গেলেন। ভাস্কর্যগুলো ভাঙার সময় প্রশাসনের কাউকে তা রক্ষা করতে দেখা যায়নি। মানুষের বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঠেকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে পুলিশ প্রশাসন। আনসার সদস্য যারা ছিলেন তারা নিরুপায় হয়ে কমপ্লেক্স ছেড়ে পালিয়ে যান।
এ বিষয়ে মুজিবনগর থানার সাবেক ওসি উজ্জল কুমার দত্তের মোবাইল ফোনে কল দিলে রিসিভ করেন ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঘটনা ঘটার পর তাঁকে এখানে ওসি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারবেন না জানিয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতি সম্পর্কে পরে সব জানতে পারবেন।
তবে এলাকাবাসী জানান, ঘটনার দিন সাবেক ওসি উজ্জল কুমার জনরোষের ভয়ে থানার প্রাচীর টপকে বের হয়ে যান। ফলে থানায় উপস্থিত থাকা নারী ও পুরুষ কনস্টেবল, এএসআই, এসআইরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকেন। পরে ঘটনা স্বাভাবিক হলে ওসি থানায় ফেরত আসেন। তখন থানার অন্য সদস্যরা ওসির নির্দেশ মানতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বাধ্য হয়ে মেহেরপুরের পুলিশ সুপার এস এম নামজুল হক রাতেই ডিবির ওসি সাইফুল ইসলামকে মুজিবনগর থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়ে দেন। সাবেক ওসিকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করে নেন। এতে মুজিবনগরের সব স্থাপনা অরক্ষিত হয়ে যায়।
মুজিবনগরের ইউএনও খাইরুল ইসলাম ও মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক শামীম হাসান এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।