গত এক বছর ধরে খাদ্য পণ্যসহ সার্বিক মুদ্রাস্ফীতি অসহনীয় পর্যায়ে উপনীত হয়েছে উল্লেখ করে উদ্বেগ জানিয়েছেন দেশের ২৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক। তারা বলছেন, মুদ্রস্ফীতির কারণে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের পক্ষে জীবনধারণ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এ দুর্বিষহ পরিস্থিতি উত্তরণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সোমবার দৈনিকশিক্ষাডটকমের পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান বিশিষ্ট নাগরিকরা। ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, রাশেদা কে চৌধুরী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য রামেন্দু মজুমদার, সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, বাংলাদেশে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ, রোবায়েত ফেরদৌস, ড. জোবায়দা নাসরিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরীসহ ২৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
বিবৃতিতে তারা বলছেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, গত প্রায় এক বছর ধরে খাদ্য পণ্যসহ সার্বিক মুদ্রাস্ফীতি অসহনীয় পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। সরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বিএসএসের তথ্য অনুযায়ী আগস্ট মাসে খাদ্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ ও সার্বিক মুদ্রাস্ফীতি ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। এ পরিস্থিতিতে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের পক্ষে জীবন ধারণ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ডিম ও মাংসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে আমিষ জাতীয় খাদ্যাভাব পুষ্টির ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
তারা আরো বলেন, সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী এবং ব্যবসায়ীদের মতে ডলার সংকটের ফলে সমস্যা ঘনীভূত হয়েছে। বহুদেশে যুদ্ধের কারণে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিলো এবং অধিকাংশ দেশে তা সত্ত্বেও মুদ্রানীতি, ব্যয় সংকোচন ও বাজার ব্যাবস্থায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে মূদ্রাস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি যে, বাংলাদেশ অদ্যাবধি মূদ্রাস্ফীতি কমাতে সক্ষম হয়নি। উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকার কার্যকর ব্যবস্থাপনায় সমর্থ হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে যে, উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা বাজারে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে এবং তারাই বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, এমনকি গৃহীত পদক্ষেপও বাস্তবায়নে সমর্থ হচ্ছে না। এ পরিস্থিতি কোনো অবস্থায় কাম্য নয়।
বিবৃতিতে তারা বলেন, আমরা একান্তভাবে প্রত্যাশা করি, সরকার প্রয়োজনে সামাজিক শক্তির সহায়তায় এই দুর্বিষহ পরিস্থিতি উত্তরণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিশেষ করে মাংস, ডাল, পেয়াজ, ডিম, আলুসহ পণ্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনবেন। জনদুর্ভোগ নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।
বিবৃতিতে আরো স্বাক্ষর করেছেন গবেষক ও সংস্কৃতি কর্মী ড. সেলু বাসিত, অর্থনীতিবিদ ড. আর এম দেবনাথ, রাজনীতিবিদ অসিত বরন রায়, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, সংস্কৃতি কর্মী এ কে আজাদ, আইনজীবী অ্যাডভোকেট পারভেজ হাসেম, খেলাঘরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহির, সমাজ কর্মী জাহাঙ্গীর আলম সবুজ, সংস্কৃতি কর্মী অলক দাস গুপ্ত, জাতীয় শ্রমিক জোটের কার্যকরী সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশের (ইনসাব) সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (বিসিএল) সাধারণ সম্পাদক গৌতম শীল।