সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেট্রোরেলের চলতি মাসের প্রথম ১৮ দিনের আয়ের সঙ্গে আগের ছয় মাসের আয়ের তুলনা করে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল পোস্টগুলোতে দাবি করা হচ্ছে, চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৮ দিনে মেট্রোরেল আয় করেছে ২০ কোটি টাকা। যেখানে আগের ছয় মাসে আয় ছিল ১৮ কোটি টাকা। ভাইরাল পোস্টগুলোতে এই আগের ছয় মাস কোন বছরের সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই। ফলে পোস্টগুলোর কমেন্টে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করতে দেখা গেছে। ভাইরাল একটি পোস্টের কমেন্টে হাফেজ হুমায়ুন কবির নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে মন্তব্য করে লেখা হয়েছে, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমরা এমন স্বাধীনতাই চেয়েছিলাম!’ মুহাম্মদ ইয়াসিন আহমেদ নামে একজন লিখেছেন, ‘একটাবার চিন্তা করুন, এ দেশে তাহলে কি পরিমাণ দুর্নীতি করে গেছে ফ্যাসিবাদ সরকার...! চিন্তার বাইরে তাদের দুর্নীতির পরিমাণ।’ সোলাইমান সম্রাট নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকলে সবই সম্ভব!’
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভাইরাল পোস্টগুলোতে উল্লেখ করা ছয় মাসের হিসাবটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাব। পোস্টগুলোতে সূত্র হিসেবে গত ৪ মার্চ দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর থেকে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের জুন পর্যন্ত ১৮ কোটি ২৮ লাখ ৬ হাজার ৫১৪ টাকা আয় হয়েছে। অডিট ফার্মের নিরীক্ষা করা ২০২২-২৩ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী জুন মাস পর্যন্ত মোট আয় ১৮ কোটি ২৮ লাখ ৬ হাজার ৫১৪ টাকা।
প্রসঙ্গত, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ এবং ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৪ নভেম্বর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন।
অর্থাৎ ছয় মাসের হিসাবটি চলতি বছরের নয় এবং ফেসবুক পোস্টগুলোতে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা যুগান্তরের প্রতিবেদনেও ছয় মাসের কোনো উল্লেখ নেই। বরং বলা হয়েছে, মেট্রোরেল চালুর পর থেকে অর্থাৎ ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের জুন পর্যন্ত মেট্রোরেল আয় করেছে ১৮ কোটি ২৮ লাখ ৬ হাজার ৫১৪ টাকা। ওই সময় মেট্রোরেল চলাচল করত উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত।
ফেসবুকে ভাইরাল দাবিটি প্রসঙ্গে এমআরটি-৬ এর (মতিঝিল-উত্তরা) অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মো. জাকারিয়া বলেন, মেট্রোরেল মতিঝিল পর্যন্ত চালু হওয়ার পর থেকেই তাদের প্রতিদিন গড় আয় ১ কোটি টাকা ও গড় যাত্রী ৩ লাখ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৬ মাসের আয় নিয়ে যা ছড়িয়েছে সেটি সঠিক নয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ডিএমটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ জানিয়েছিলেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৯ লাখ ৯ হাজার ৪৯ জন যাত্রী মেট্রোরেলে ভ্রমণ করেছে। এতে আমাদের আয় হয়েছে ২০ কোটি ৬৭ লাখ ৩ হাজার ৫৯১ টাকা। এর মধ্যে দুই শুক্রবার সাপ্তাহিক বন্ধ ছিল।
তিনি বলেন, গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) আমাদের আয় হয়েছে মাত্র ৫৪ লাখ ৯১ হাজার ১৪০ টাকা। ওই দিন ভায়াডাক্ট দেবে যাওয়ার কারণে সকাল সাড়ে ৯টার পর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল।
এর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ যাত্রী ভ্রমণ করেছে মেট্রোরেলে। এই বিষয়ে মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, এদিন ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৮৯২ জন যাত্রী মেট্রোরেলে ভ্রমণ করেছে। এতে সেদিন মেট্রোরেলের আয় হয়েছে সর্বোচ্চ ১ কোটি ৪৬ লাখ ৫৭ হাজার ৫৬৬ টাকা। এ ছাড়া গড়ে প্রতিদিন ৩ লাখ মানুষ মেট্রোরেল ভ্রমণ করে।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় মেট্রোরেলের দুটি স্টেশন ভাঙচুর করা হয়। এরপর থেকেই বন্ধ থাকে চলাচল। তবে গত ২৫ আগস্ট আবার মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়। আর ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবারেও মেট্রোরেল চালু হয়েছে। এদিন আন্দোলনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত কাজীপাড়া স্টেশন চালু হয়। তবে মিরপুর-১০ স্টেশন এখনো চালু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি কর্তৃপক্ষ।