মেধাবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি আদায় চলছেই - দৈনিকশিক্ষা

মেধাবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি আদায় চলছেই

দৈনিক শিক্ষাডটকম, সুতীর্থ বড়াল |

যে শিক্ষার্থীরা মেধাবৃত্তি পাবেন, তাদের কাছ থেকে বেতন আদায় করা যাবে না- সরকারের এমন নির্দেশনা থাকলেও তার তোয়াক্কা করছে না নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেক হাইস্কুল ও কলেজ মেধাবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায় করেই চলেছে। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, ভর্তি ফি, নিবন্ধন ফি, উন্নয়ন ফি, টিউশন ফিসহ সবধরনের ফি-এর টাকাই বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করছে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে বৃত্তি পাওয়া এসব শিক্ষার্থী তাদের প্রাপ্য আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।  

প্রসঙ্গত, পঞ্চম, অষ্টম, এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফলাফল অর্জনকারীরা সরকারের মেধাবৃত্তির আওতায় আসেন। তাদের পরের শ্রেণিগুলোতে বিনামূল্যে পড়াসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানই সরকারের এসব নিয়মের তোয়াক্কা করছে না। এ তালিকায় আছে রাজধানীর ভিকারুনন্নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল মডেল হাইস্কুল, ডেমরার সামসুল হক খান স্কুল এন্ড কলেজ, মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ এবং নরসিংদীতে ব্যবসায়ী কাদের মোল্লার প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত নাছিমা কাদের মোল্লা হাইস্কুলসহ অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে মেধাবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের পুরো মাসিক বেতন (টিউশন ফি) দিতে হচ্ছে। অভিভাবকরা অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাছিমা কাদের মোল্লা হাইস্কুলের একজন অভিভাবক দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, মেধাবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও টিউশন ফি আদায়ের অভিযোগ দিয়েছিলাম শিক্ষা অধিদপ্তরে। গিয়ে দেখি প্রায় সবাই কাদের মোল্লার গোলাম। কাদের মোল্লার কাছ থেকে ফ্রি বাস পাওয়ার জন্য পাগল ঢাকার অনেক সরকারি কলেজ। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ১১ মে জারি করা নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৩ (খ) ২ নম্বর নির্দেশনায় রয়েছে- ‘সব বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ লাভ করবে। সরকারি অনুমোদিত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক বেতন দাবি করবে না। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক বেতন দাবি করলে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ ছাড়া ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডও একই নির্দেশনার কথা জানিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে। 

এদিকে, শিক্ষাবোর্ডের নির্দেশনার বিষয়টি উল্লেখ করে অভিভাবকরা কলেজ কর্তৃপক্ষকে বেতন দিতে অস্বীকৃতি জানালেও তা শুনতে নারাজ প্রতিষ্ঠানগুলো। কর্তৃপক্ষ উল্টো মেধাবৃত্তিপ্রাপ্তদের আবেদন করার পরামর্শ দেয়। আর অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীভেদে অর্ধেক বা আংশিক বেতন মওকুফ করা হচ্ছে।

অভিভাবকরা বলছেন, বোর্ডের নির্দেশনার পরও বেতন মওকুফের আবেদন করতে বলা স্বেচ্ছাচারিতার শামিল। এটা অন্যায়ও।

তারা জানান, কলেজের নির্দেশনা অনুযায়ী আবেদন করলে অর্ধেক বেতন নেয়। আর আবেদন না করলে পুরো বেতনই দিতে হয়। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি মাসের বেতন দিয়েছেন বৃত্তিপ্রাপ্ত এক শিক্ষার্থী। তার বেতনের রশিদে দেখা গেছে, মাসিক বেতন ও পরীক্ষার ফি বাবদ চার হাজার ৬৫০ টাকা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। শুধু এ শিক্ষার্থীই নন, বৃত্তিপ্রাপ্ত সব শিক্ষার্থীর কাছ থেকেই এভাবে অর্থ আদায় করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীর বাবা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বৃত্তিটা আমার মেয়ের অর্জন। এটা সম্মানের। বোর্ড এই অর্জনকে সম্মান জানিয়ে বেতন ছাড়া লেখাপড়ার সুযোগ দিচ্ছে। কিন্তু বোর্ডের নির্দেশনা মানছে না কর্তৃপক্ষ। তার মানে আমার মেয়ের মেধাকে অবমূল্যায়ন করা হলো। টাকার অংকের চেয়ে বড় কথা হলো, বৃত্তি দিয়েও বেতন নেয়া হচ্ছে।

বিষয়টি শিক্ষপ্রতিষ্ঠান প্রধান বা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে ভিকারুনন্নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমি বিষয়টি কলেজের অধ্যক্ষকে জানিয়েছি। 

কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, অর্ধেক বেতন দিতে হবে। তিনি বলেছেন, এতো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বেতন না নিলে কলেজ চলবে কীভাবে।

এদিকে সরকারের শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নানা দপ্তরও বিভিন্ন সময় মেধাবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন না নেয়ার তাগাদা দিয়ে থাকে। তবে এমন পরিস্থিতিতে বৃত্তিবিষয়ক নীতিমালায় নির্দেশনা অনুসরণ করে মেধাবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে পড়াশোনার সুযোগ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে মাউশি। গত শনিবার মাউশি অধিদপ্তরও এ সংক্রান্ত এক চিঠি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। 

প্রসঙ্গত, বৃত্তিপ্রাপ্তদের কাছ থেকে বেতন আদায়ে কেনো শাস্তি নয়- ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩ অক্টোবর তা জানতে চেয়েছিলো হাইকোর্ট।

 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এমফিল-পিএইচডি ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এমফিল-পিএইচডি ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনে ছদ্মবেশে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা অনুপ্রবেশ করে: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha কোটা আন্দোলনে ছদ্মবেশে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা অনুপ্রবেশ করে: প্রধানমন্ত্রী ‘শ্রীলঙ্কা স্টাইলে’ গণভবন দখলের ষড়যন্ত্র ছিলো: কাদের - dainik shiksha ‘শ্রীলঙ্কা স্টাইলে’ গণভবন দখলের ষড়যন্ত্র ছিলো: কাদের সেই আসিফ মাহতাব ডিবি হেফাজতে - dainik shiksha সেই আসিফ মাহতাব ডিবি হেফাজতে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টিকটককে ঢাকায় এসে ব্যাখ্যা দিতে হবে - dainik shiksha ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টিকটককে ঢাকায় এসে ব্যাখ্যা দিতে হবে ১০ দিন পর মোবাইলে ফোরজি সেবা চালু - dainik shiksha ১০ দিন পর মোবাইলে ফোরজি সেবা চালু রাবিতে এমফিল-পিএইচডিতে ভর্তি আবেদনের শেষ সময় ৩০ জুলাই - dainik shiksha রাবিতে এমফিল-পিএইচডিতে ভর্তি আবেদনের শেষ সময় ৩০ জুলাই দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0075051784515381