মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন। অনেক ইতিবাচক দিক থাকলেও মোবাইলের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশে মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৯৬ শতাংশ, যা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ। পাকিস্তানের অবস্থানও একই। সর্বোচ্চ ৯৮ শতাংশ উদ্বিগ্ন মানুষ মালয়েশিয়ায়।
মোবাইল সম্পর্কের উন্নতি ঘটায়—এমন ভাবনার দিক থেকে শীর্ষে বাংলাদেশ। দেশে মোবাইলে বেশি সময় ব্যয় করেন নারীরা।
মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ওপর গবেষণা জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে এই জরিপ চালায় মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিনর এশিয়া। এটি চালানো হয় ২০২২ সালের জুলাইয়ে। গবেষণা জরিপে অংশ নেন এই আট দেশের ৮ হাজার ২২৭ জন। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে অংশ নেন ১ হাজার ১৫৫ জন।
গবেষণা জরিপে বলা হয়, মোবাইল ফোন ব্যবহারে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা এখন একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। এটি ব্যবহারকারীর আচরণে প্রভাব ফেলছে। কখন, কোথায় ও কীভাবে তাঁরা নিজেদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছেন এবং কী ধরনের অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপ ব্যবহার হচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ আছে ব্যবহারকারীদের। বাংলাদেশে এ বিষয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ৭৩ শতাংশ ও অপেক্ষাকৃত কম উদ্বিগ্ন ২৩ শতাংশ ব্যবহারকারী। তবে জরিপে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের মানুষের ৭৬ শতাংশ মনে করেন, মোবাইল ব্যবহারে বন্ধু, পরিবারের সদস্য, সহকর্মী, সেবাদানকারী, সঙ্গী ও শিশুদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে।
এই আটটি দেশের মধ্যে ১৯৯৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত জন্ম নেওয়া প্রজন্মের (জেন জেড) ৬৬ শতাংশ মনে করে মোবাইলের কারণে সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে। ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত জন্ম নেওয়া (মিলেনিয়াল) প্রজন্মের মধ্যে ৭১ শতাংশ, ১৯৬৫ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত (জেন এক্স) প্রজন্মের ৭০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত (বেবি বুমারস) প্রজন্মদের মধ্যে এই ধারণা পোষণ করেন ৭০ শতাংশ।
জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশের জেন জেড-এর ৫০ শতাংশ মনে করেন মোবাইল ফোনে জীবনমানের উন্নতি হয়। এই মত মিলেনিয়ালদের ক্ষেত্রে ৫২ শতাংশ, জেন এক্সের ক্ষেত্রে ৬৪ শতাংশ ও বেবি বুমারদের ক্ষেত্রে ৭১ শতাংশ।
দিনে কমপক্ষে পাঁচ ঘণ্টা মোবাইল ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৪ নম্বরে। দেশের ৫২ শতাংশ লোক দিনে কমপক্ষে পাঁচ ঘণ্টা মোবাইল ব্যবহার করেন। দিনে সর্বোচ্চ ব্যবহার করে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে, ৭৩ শতাংশ। দেশে মোবাইল ফোনে বেশি সময় ব্যয় করের নারীরা, ৫৪ শতাংশ। পুরুষদের ৫১ শতাংশ।
টেলিনরের জরিপ বলছে, আগামী এক থেকে দুই বছরে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যবহার ৭২ শতাংশ বাড়বে, যা এই আট দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ মোবাইল ব্যবহারকারী মনে করেন, তাঁরা প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলা নিয়ে উদ্বিগ্ন। যা আটটি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম উদ্বিগ্ন ভিয়েতনামের মানুষ, ৭৯ শতাংশ। বয়সের দিক থেকে বেশি উদ্বিগ্ন জেন জেড প্রজন্মের ৫৫ শতাংশ মানুষ। প্রযুক্তি ব্যবহারে সবচেয়ে ভালো ভারসাম্য বজায় রেখেছেন ইন্দোনেশিয়ার মানুষ, ৮৮ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ, ৭১ শতাংশ।
মোবাইল ব্যবহারে নারীদের জীবনমান উন্নয়নে এগিয়ে আছে থাইল্যান্ড, ৭৬ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। জরিপে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের নারীদের ৫৯ শতাংশ মনে করেন, জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে। পুরুষের ক্ষেত্রে এমন মত ৫০ শতাংশের।
জরিপে অংশ নেওয়া বাংলাদেশিদের ৯৪ শতাংশ মনে করেন, মোবাইল ফোনে সংযোগ আর্থিক সেবাপ্রাপ্তি বাড়িয়েছে। ৯৫ শতাংশ মনে করেন, শিক্ষার সুযোগ বাড়িয়েছে এবং ৯১ শতাংশ মনে করেন, স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ বৃদ্ধি হয়েছে। জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ নিজেদের পরিবেশ নিয়ে সচেতন মনে করেন।
টেলিনরের এই গবেষণা জরিপের তথ্য নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ডিজিটাল মিডিয়া গবেষক মো. সাঈদ আল-জামান বলেন, গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা বলতে ব্যবহারকারীরা কী বোঝেন, সেটা প্রশ্নের দাবি রাখে। কারণ, এর সর্বজনীন সংজ্ঞা নির্ধারণ করা কঠিন। দেশে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারকারী দুই ধরনের। একশ্রেণির ডিজিটাল জ্ঞান বেশি, অন্য শ্রেণির কম। ডিজিটাল জ্ঞানের সঙ্গে গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার সচেতনতা ওঠানামা করে।