সাবিহা সুমি, দৈনিক শিক্ষাডটকম : ‘মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি’র দাবি মেনে স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন না করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা। পাশাপাশি প্রকাশ্যে সপ্তম শ্রেণির বই ছেড়ার ঘটনায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অব্যাহতিপ্রাপ্ত খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে।
রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ‘স্কুল পাঠ্যপুস্তকের বিষয় নিয়ে মৌলবাদী-
ধর্মব্যবসায়ীদের পাকিস্তান অথবা আফগানিস্তানে চলে যেতে বলেছেন তিনি।
পৃথক লিখিত বক্তব্য দেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। এছাড়াও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী, বিশ্ব শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মাহফুজা খানম ও শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফসহ অনেকে বক্তব্য দেন।
তারা বলেন, পাঠ্যপুস্তকে মুদ্রণ ও তথ্যগত যেসব ভ্রান্তি আছে তা দ্রুত নিরসন করা দরকার। তবে সেই প্রক্রিয়া মৌলবাদী অপশক্তির দাবি মেনে করা যাবে না। এছাড়াও পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা কমিটিতে জীববিজ্ঞানী, চিকিৎসাবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও প্রথিতযশা শিক্ষাবিদদের রাখার জন্যেও প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আসিফ মাহতাব সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে তৃতীয় লিঙ্গের শরিফ-শরীফার রচনা ছিঁড়ে ফেলে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন- এটিকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। তার এই কর্মকাণ্ডের পর ঝিম মেরে বসে থাকা হেফাজত এবং তাদের সহযোগী জামায়াতসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন মাঠে নেমে পড়েছে। অথচ আমরা বহুবার মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছি। এদের সঙ্গে কোনো ধরনের আপস বা সমঝোতা বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ, দেউলিয়া, সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারকে কোনোভাবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাছে মাথা নত করা যাবে না। আসিফের বক্তব্য ধর্মের অপব্যবহার। তিনি এ সময় এবারের সংসদে সংরক্ষিত আসনে তৃতীয় লিঙ্গের জনপ্রতিনিধি পাঠাতেও আহ্বান জানিয়েছেন।’
অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘‘স্বাধীনতাবিরোধী রাজনীতিতে যে কাজটি করে থাকে একইভাবে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির কাজ শুরু করেছে। বিএনপি ও জামায়াত বলেছে নতুন কারিকুলাম বাদ দিতে হবে। একই সঙ্গে চরের পীর (চরমোনাই) ও হেফাজতও বলেছে পাঠ্যপুস্তকে ‘শরিফা’ বিষয়সহ গোটা কারিকুলাম বাদ দিতে হবে। সব মিলিয়ে এটি একটি রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করতে চাচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা। আশা করছি সরকার পিছু হটার আত্মঘাতী পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকবে।’’
অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারকে ধর্ম ব্যবসায়ীদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে রুখে দাড়াতে হবে।’ শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফও চলতি সংসদে তৃতীয় লিঙ্গের জনপ্রতিনিধি পাঠাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘তালেবানি শিক্ষক আসিফ মাহতাব ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের মগজ ধোলাই করে ফেলেছে, যার কারণ তাকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় চাকরিচ্যুত করার পর শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসিফ মাহতাব বই ছিঁড়ে ফেলে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ করেছে। তাকে এ ঘটনায় অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করতেও সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।’