গত ১৬ জুলাই যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) শিক্ষকদের লিফট বন্ধ ও বাসের চাবি কেড়ে নেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে টানা ১২ দিনের মত ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। অনেক বিভাগে স্পেশাল সেমিস্টারের পরীক্ষা চলমান থাকলেও শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে তা স্থগিত করা হয়েছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছে সেসব শিক্ষার্থীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। করোনারকালীন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার পর আবারও বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় তারা চাকরির পরীক্ষায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন। শিক্ষকরা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে গত ১৬ জুলাইয়ের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবিতে অনড় থাকলেও গত ১৮ দিনেও এ ঘটনার বিচার করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে যবিপ্রবিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনা শুরু চলতি বছরের ৯ জুলাই সরকারী প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জ্বালানী ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডিন, চেয়ারম্যান ও দপ্তর প্রধানদের বৈঠকে ১০ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)। সিদ্ধান্তের পর কতিপয় শিক্ষার্থী জোরপূর্বক শিক্ষকদের পরিবহনের চাবি ছিনিয়ে নেওয়া ও লিফট বন্ধ করার অভিযোগে শিক্ষক সমিতির ঘোষিত কর্মসূচি 'শিক্ষকদের অপমানের বিচার না হওয়া পর্যন্ত সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে কর্মবিরতি' চলছে। অন্যদিকে গত ৩১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো: আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২ আগষ্ট থেকে সকল ক্লাস স্বশরীরে অনুষ্ঠিত হবে। আজ ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় চরম বিড়ম্বনা ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের কতিপয় ব্যয় স্থগিত/হ্রাসকরণ ও বিদেশভ্রমণ সীমিতকরন প্রসঙ্গে সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, যবিপ্রবিতে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ২৫ শতাংশ বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে হবে।এই মর্মে গত ১০ জুলাই (সোমবার) সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ১০ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ জুলাই কতিপয় শিক্ষার্থী হঠাৎ বেলা আড়াই টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সকল রুটের পরিবহনের চাবি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। প্রশাসনিক, একাডেমিক ভবনের লিফটসমূহও বন্ধ করে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ভবনের লিফটম্যানদের সরিয়ে লিফটগুলো বন্ধ করে দেয়। বাধ্য হয়ে সিনিয়র শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনেকে লাইনবাসে, ভ্যান বা অটোতে করে বাড়ি ফিরে যায়।
পরবর্তীতে ১৮ জুলাই (মঙ্গলবার) এঘটনার বিচার চেয়ে উপাচার্য বারবার অভিযোগ করে যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি। অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত ১৬ জুলাইয়ের ঘটনায় শিক্ষকবৃন্দ চরমভাবে অপমানিত ও অসম্মানিত বোধ করেছেন। উক্ত অপমান ও লাঞ্চনা'র তদন্তক্রমে সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত ২২ জুলাই শনিবার হতে শিক্ষকগণ সকল প্রকার একাডেমিক কার্যক্রম হতে বিরত থাকেন। এদিকে ৩১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো: আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২ আগস্ট (বুধবার) থেকে সকল ক্লাস স্বশরীরে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির কর্ম বিরতিতে বিড়ম্বনায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। অনলাইন ক্লাস হওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাড়িতে চলে যায়,ক্লাস অফলাইনে হওয়ার ঘোষণা আসলেও শিক্ষকরা ক্লাসে না ফেরায় অনেকেই এব্যাপারে নিশ্চয়তা না পেয়ে দোটানায় পড়েছে, আবার দীর্ঘদিন ক্লাস না হওয়ায় সেশনজটের আশঙ্কায় ভুগছে শিক্ষার্থীরা। আবার সেমিস্টার পরীক্ষার কোর্স রেজিষ্ট্রেশন ফি জমাদানের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ আগস্ট পর্যন্ত। এনিয়েও চলছে নানা সমালোচনা।
শিক্ষকদের চলমান কর্মসূচি বিষয়ে জানতে চাইলে যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো: গালিব বলেন, আগামী শনিবার কর্মসূচি সম্পর্কে শিক্ষকদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হবে ।
শিক্ষকদের একটি সূত্রে জানা যায়, শিক্ষকদের অপমানের সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন ও বিচার না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা তাদের কর্মবিরতি কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
এ বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকারী প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জ্বালানী ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য চলতি বছরের ৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডিন, চেয়ারম্যান ও দপ্তর প্রধানদের বৈঠকে ১০ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিক্ষকগণ এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে অনলাইন ক্লাসে ফিরেছিলেন। জ্বালানী ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য একটি স্বার্থান্বেষী মহল কুচক্রের অংশ হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লিফট ও বাস বন্ধ করে দেয় যাতে শিক্ষকগণ চরমভাবে অপমানিত হয়ে সকল প্রকার ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছিলেন। ঘটনার সত্যতা যাচাই ও দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য শিক্ষকদের সম্মতিক্রমে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তদন্ত প্রতিবেদন পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে শিক্ষকদের জানানো হয়েছে। তবে অনলাইন ক্লাসের সময়সীমা শেষ হলেও শিক্ষকদের ক্লাসে না ফেরায় শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়বে।
শিক্ষকদের কোনো কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্ষতি ও পিছিয়ে পড়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। শারীরিক অসুস্থতার দরুণ চিকিৎসা নিতে আমি আগামী ৯ আগষ্ট পর্যন্ত দেশের বাইরে অবস্থান করবো, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি সম্মান জানিয়ে শিক্ষকরা আগামী ৯ আগষ্ট পর্যন্ত ক্লাসে ফিরতে পারতেন। আমি শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানাবো তারা যেন শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু পড়ার পরিবেশ ও সেশনজটের দিক বিবেচনায় তারা যেন ক্লাসে ফেরেন।