যশোর শিক্ষাবোর্ডে এক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া নিয়ে সমালোচনা চলছে। সমালোচিত এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরের দিনই আবেদন জমা দেয়ার শেষ সময় উল্লেখ করা হয়েছে।
বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল তৈরির জন্য প্রতি বছর দৈনিক ও কাজ নেই, মজুরি নেই ভিত্তিতে কিছু সংখ্যক লোক নিয়োগ দেয়া হয়। সেখানে অঘোষিতভাবে কর্মচারীদের সন্তানরা কাজ করেন। এবারই আগের নিয়মে পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। সূত্র দাবি করেছে, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নেতাদের পছন্দের লোক নিয়োগ দিয়ে বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জানা যায়, পূর্ব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে বোর্ড সচিব (চলতি দায়িত্ব) ডক্টর বিশ্বাস শাহিন আহম্মদ গত ৮ মে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ইস্যু করেন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে তিনটি পদে নিয়োগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। পদ তিনটি হচ্ছে, স্ক্যানিং অপারেটর, এডিটিং অপারেটর ও সর্টিং অপারেটর। স্ক্যানিং অপারেটর পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা সর্বনিম্ন এসএসসি পাস, ২০২৩ সালের পয়লা মে বয়স সর্বোচ্চ ৩০ বছর, এডিটিং অপারেটর পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা সর্বনিম্ন এইচএসসি পাস, পয়লা মে বয়স সর্বোচ্চ ৩০ বছর এবং সর্টিং অপারেটর পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা সর্বনিম্ন এসএসসি পাস, বয়স সর্বোচ্চ ৩০ বছর হতে হবে।
প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পাঁচটি শর্ত দেয়া হয়। শর্তগুলো হচ্ছে- কাজের মেয়াদ এসএসসি পরীক্ষা ২০২৩-এর ফল প্রকাশ পর্যন্ত। যে দিন কাজ থাকবে সেই দিনের মজুরি দেয়া হবে; কাজ না থাকলে মজুরি দেয়া হবে না। উপরোক্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীর বয়সসীমা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিলযোগ্য। আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন, জীবন বৃত্তান্ত, এক কপি ছবি ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রসহ আগামী ০৯.০৫.২০২৩ তারিখ অফিস চলাকালীন সরাসরি অথবা ডাকযোগে সচিব, মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড যশোর বরাবর পৌঁছাতে হবে এবং অসম্পূর্ণ বা নির্দিষ্ট সময়ের পরে প্রাপ্ত আবেদন বাতিল বলে গণ্য হবে।
গোপনে স্বাক্ষরিত এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে নানা সমালোচনা শুরু হয়। কর্মচারীরাই প্রশ্ন তুলেছেন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরের দিনই চাকরি প্রত্যাশীরা আবেদন করবেন কীভাবে। অনেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানা কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। তারা কীভাবে ঘোষণার এক দিনের মধ্যে আবেদনপত্র জমা দেবেন। এক দিনের মধ্যে ডাকযোগে শিক্ষাবোর্ডে আবেদনপত্র পৌঁছানোর উপায়ই বা কী? তা ছাড়া, চাকরি বিধি অনুযায়ী আবেদনপত্র পৌঁছানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে প্রার্থীদের। কিন্তু যশোর শিক্ষাবোর্ডের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে তা করা হয়নি বলে অভিযোগ কোনো কোনো কর্মচারী-কর্মকর্তার।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ বলছেন, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, সব কিছু আগে থেকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা কেবলমাত্র নিয়ম রক্ষা। কিন্তু সেই নিয়ম রক্ষার বিজ্ঞপ্তিটিই বিধিবহির্ভূতভাবে প্রকাশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে শিক্ষাবোর্ডের চলতি দায়িত্বে থাকা সচিব ডক্টর বিশ্বাস শাহিন আহম্মদকে কল করলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর আহসান হাবীব বলেন, আগে চেয়ারম্যানরা ইচ্ছে মতো এই নিয়োগ দিতেন। কেউ জানতেও পারতো না। আমরা একটি সিস্টেম চালু করেছি। হাতে সময় না থাকায় এক দিনের মধ্যে নিয়োগ চূড়ান্ত করতে এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। এক দিনেই আমরা যে সংখ্যক লোক নেবো তার চেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে।