যুক্তরাজ্যে দৈনন্দিন জীবনে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে বহু কিশোরী। এর ফলে রাস্তাঘাটে একা চলাফেরায় ভয় পাচ্ছে তারা। সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে এমন উদ্বেগজনক তথ্য।
জরিপটি পরিচালনা করেছে সার্ভেশন নামে একটি সংস্থা। এতে এক হাজার কিশোর ও এক হাজার কিশোরীর (বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছর) কাছে নিরাপত্তা অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।
জরিপে অংশ নেয়া ২৭ শতাংশ কিশোরী জানিয়েছে, তারা কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। ৪৪ শতাংশ কিশোরী বলেছে, তারা রাস্তায় একা চলাফেরায় নিরাপদবোধ করে না।
১৩ বছরের কিশোরী ববি জানিয়েছে, স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে কখনোই নিজেকে খুব একটা নিরাপদ মনে হয় না তার। সেকেন্ডারি স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই এ ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সে।
ববির কথায়, এটি কখনো কখনো ভীতিকর হতে পারে। মানুষজন চিৎকার করে বলে, ‘তোমাকে দেখতে সুন্দর লাগছে’। কখনো কখনো রাস্তায় তারা আমার হাত ধরেছে। একবার আমার চেয়ে বয়সে দুই বা তিনগুণ বড় কিছু লোক আমার পিছু নিয়েছিল।
১৪ বছর বয়সী প্রিন্সেসও জানিয়েছে, স্কুল থেকে ফেরার পথে তার ভয় লাগে। এ জন্য ভিন্ন পথও বের করে রেখেছে, যেন প্রয়োজন হলে সেদিক দিয়ে আসা যায়। তা ছাড়া বাসায় ফেরার পথে এ কিশোরীকে বারবার পেছনে ফিরে দেখতে হয়, কেউ আছে কি না।
অন্য কিশোরীরা বলেছে, নিরাপত্তার খাতিরে কী পোশাক পরে বাইরে বের হবে, তা নিয়েও সতর্ক থাকতে হচ্ছে। ১৫ বছর বয়সী সোনিয়ার কথায়, বাইরে যা ঘটে তার সাথে আপনাকে কেমন দেখাচ্ছে সেটির বিশাল সম্পর্ক রয়েছে। আমি যদি ক্রপ-টপ বা আঁটসাঁট পোশাক পরি, তাহলে আমার দিনটা শান্তিতে কাটবে না।
১৮ বছর বয়সী রোফেদার ভয়, যদি সে যৌন হয়রানিকে উপেক্ষা করে বা রুখে দাঁড়ায়, তাহলে হয়তো বিপদ আরো বেড়ে যেতে পারে। তার বক্তব্য, যা সামলাতে পারবেন না, ঘটনা সে পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া উচিত নয়।
শুধু মেয়েরাই নয়, রাস্তায় একা চলতে ভয় পাওয়ার কথা জানিয়েছে প্রায় এক-চতুর্থাংশ (২৪ শতাংশ) কিশোরও। ১৫ বছর বয়সী অ্যাশলে জানায়, যদি একদল ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে এবং আমি একা থাকি ও চার পাশে অন্ধকার হয়, অবশ্যই আমি নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় থাকব। তারা আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। আপনি সোস্যাল মিডিয়ায় অনেক ভিডিও দেখবেন, যেখানে লোকদের আক্রমণ করা হচ্ছে এবং এটি আপনাকে আতঙ্কিত করবে।
নারীদের নিরাপত্তার প্রচারণায় কাজ করা ‘আওয়ার স্ট্রিটস নাউ’ নামে একটি সংগঠনের সদস্য রোজি। ১৬ বছর বয়সী এ কিশোরীর মতে, কাউকে যৌন হয়রানি করা কেন ঠিক নয়, এ বিষয়ে মানুষকে বোঝানোর জন্য আরও অনেক কিছু করা দরকার।
রোজির কথায়, তাদের বলতে হবে, এটি অপরাধ, কোনো প্রশংসা নয়। এতে খুশি হওয়ার কিছু নেই। নিজের কাজ করছে এমন কারো জন্য রাস্তার অন্য পাশ থেকে চিৎকার করতে হবে- এটি এমন কোনো বিষয় নয়।