২৪ মে থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন আলোচনার খোরাক জোগাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপিসহ সবপক্ষই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগকে নিজেদের পক্ষে বলে বক্তব্য রেখেছেন শুরুর দিকে। পরে অবশ্য এটি যে বাংলাদেশের নির্বাচনসহ নিজস্ব ইস্যুতে দেশটির অবস্থান এবং এর পেছনে ভূরাজনীতি-কূটনীতি-অর্থনীতিসহ নানা ইস্যু থাকতে পারে, সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। আবার একটা অংশের বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগ অনেকটা সুগম করতে পারে আগামী সংসদ নির্বাচন। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, যেহেতু এই ভিসানীতি বাস্তবায়ন শুরু করেছে ওয়াশিংটন, তাই এরই মধ্যে অনেকেই হয়তো আবেদন করেও ভিসা পাননি। যদিও ভিসার আবেদন ব্যক্তিগত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কাদের ভিসা দেয়া হচ্ছে না বা হবে না, তা প্রকাশিত হওয়ার কথা না।
বহুল আলোচিত এই ইস্যু নিয়ে অনেক প্রশ্ন মানুষের মনে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, সেসব প্রশ্নের খুব সুনিদিষ্ট বা হ্যা/না টাইপ উত্তরও অজানা। তারপরও নিজের কাজের জায়গা থেকে সেসব প্রশ্ন উত্থাপন ও তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যেতে পারে।
৩ মে’র সিদ্ধান্ত ২৩ মে কেন?
বিশ্বব্যাংকের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াশিংটনে থাকা অবস্থায় ৩ মে নতুন ভিসানীতির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। স্মরণ করা যেতে পারে, তারপর বিবিসি’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে যে সব দেশ স্যাংশন দেয়, তা্দের কাছ থেকে কোনকিছু না কেনার সিদ্ধান্তের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবশেষ জাপান-যু্ক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দুটো কাজ করেছি, আপনারা খোঁজ নিয়েন।
ঠিক সেদিনই যুক্তরাষ্ট্রসহ চারটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা বা পুলিশ এসকর্ট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আসে। এরপর ২৩ মে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেন। প্রশ্ন ওঠে, এই সিদ্ধান্ত তো আরো তিন সপ্তাহ আগের। কেন সেটি আগে জানানো হলো না বা কেন সাংবাদিকরা তা জানতে পারলেন না? এই প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, এটা তাদের (আমেরিকা) সিদ্ধান্ত, আমরা কেন তা ঘোষণা করবো? একই দিন প্রতিমন্ত্রী জানান, ৩ মে থেকেই এটি তারা জানেন। এটি নিয়ে ওয়াশিংটনে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের ব্রিফও করেছেন। এটা ওয়াশিংটন আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে, তাই আগে এটি প্রকাশ না করারও অনুরোধ ছিল দেশটির। পাশাপাশি, এমন নীতি যেন কার্যকর না হয়, শেষ পর্যন্ত ঢাকা সেই চেষ্টাও যে চালিয়ে গেছে, তাও বলার অপেক্ষা রাখে না।
কেন, কাদের জন্য এই ভিসানীতি?
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বাংলাদেশের জন্য এই নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার কারণ হিসেবে “অবাধ, সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া” এগিয়ে নেয়ার্ কথা উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ি বা জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তা, সরকারি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এই ভিসা নীতির আওতায় আসবেন। এখন প্রশ্ন হলো, উল্লিখিত ক্যাটাগরির কে বা কারা কিভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে, তা কোন উপায়ে নির্ধারণ করা হবে? তার উত্তরও পেয়েছি। সম্প্রতি বিএনপি’র একটি সেল থেকে সারাদেশে যেসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে “হয়রানিমূলক মামলা” আছে, তার তালিকা, বাদীর নাম, তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ বিস্তারিত জানাতে বলা হয়েছে। ফলে নির্বাচন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত কর্মকর্তারা কে কি করছেন, তা যুক্তরাষ্ট্রকে জানানোর নানান প্রস্তুতি যে বিরোধী দল নিচ্ছে তা বলা যেতে পারে। পাশাপাশি, যারা এ ধরনের ঘটনায় নির্দেশদাতা, তারাও ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন বলে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্র
কেন বাংলাদেশকে আগাম হুশিয়ারি?
সচরাচর কোনো দেশে শাসনতান্ত্রিক বা রাজনৈতিক সংস্কার চাইলে নির্বাচনের পর পদক্ষেপ নেয় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে কেনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অন্তত আট মাস আগে শাস্তিমূলক এই পদক্ষেপ নেয়া হলো তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। প্রশ্ন উঠেছে, এই প্রচেষ্টা কি কেবলই নির্বাচন বা গণতন্ত্রের স্বার্থে? নাকি এর আড়ালে অন্য কোন চাওয়া পাওয়া প্রত্যাশা প্রাপ্তির সমীকরণ আছে? মনে আছে, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্র প্রশ্ন তুললেও কূটনৈতিক পন্থার বাইরে কিন্তু তখন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সেই দৃষ্টিভঙ্গীতে দৃশ্যমান পরিবর্তন লক্ষণীয়। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে বাইডেন প্রশাসন যে একটা মূল্যবোধ নির্ভর পররাষ্ট্রনীতি জোরালোভাবে বাস্তবায়নে বাংলাদেশে চেষ্টা চালাচ্ছেন তা বলেন অনেকেই। সে কারণে নাইজেরিয়া বা উগান্ডায় ঘটনার পর পদক্ষেপ নিলেও বাংলাদেশে আগাম শাস্তিমূলক এই ভিসা পদ্ধতি ঘোষিত হয়েছে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। আবার তারই অংশ হিসেবে এলিট ফোর্স র্যাব ও তার সাবেক বর্তমান শীর্ষ কয়েক কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি। তারপর থেকেই ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সুষ্ঠু নির্বাচন ও মানবাধিকার ইস্যুতে নানা দৌড়ঝাঁপও চোখে পড়ার মত। আর বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য অর্থাৎ পোশাকশিল্পের একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যে সবচে বড় বাজার- সেটিও মনে রাখা জরুরি। কারণ কেবল রিজার্ভ নয়, স্থানীয় রাজনীতিতেও বড় ফ্যাক্টর এই গার্মেন্টস খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। সাথে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে সামরিক ও অসামরিক বাহিনীর সদস্যদের যে অংশগ্রহণ, তারও নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত অর্থাৎ সংখ্যা বাড়া-কমার মত বিষয়গুলো পরোক্ষভাবে হলেও যে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করে, তাও সবার জানা। এসব নির্ভরশীলতার সমীকরণেই বাংলাদেশকে আগাম ভয় যুক্তরাষ্ট্র দেখাচ্ছে কি না, সে প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।
বিশেষ কোন দলকে ক্ষমতায় চায় ওয়াশিংটন?
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি কিংবা আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র পশ্চিমাদেশগুলোর তৎপরতা থেকে অনেকেই মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে পছন্দ করে না। কেউ কেউ আরো একধাপ এগিয়ে বলছেন, বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চায় তারা। অবশ্য এসব কথার গ্রহণযোগ্য কোনো ভিত্তি নেই। কূটনীতির খোঁজখবর যারা রাখেন, তারা জানেন, যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকারের তালিকায় তার ব্যবসা বাণিজ্য বিনিয়োগ। এর সাথে সবচে গুরুত্বপূর্ণ হলো এই অঞ্চলকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থরক্ষা ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রভাব কমানোর চেষ্টা। এমনকি ভিসানীতির ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে, তাও ভাবার সুযোগ কম। তবে হ্যাঁ, যেহেতু রাজনীতিকসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক বেসামরিক আমলাদের বিশেষ করে তাদের সন্তানদের পড়াশোনাসহ নানা কাজে স্বপ্নের গন্তব্য আমেরিকা, তাই তাদের মধ্যে খানিকটা ভয় যে কাজ করছে, তা বোধকরি বলার অপেক্ষা রাখে না।
কেবলই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নাকি ভূ-রাজনীতির কৌশল?
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ব ক্ষমতার যে নানা মেরুকরণের চেষ্টা, তাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মাথাব্যথা, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব। বাংলাদেশে অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশীদার যে চীন- সেটি নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের টেনশন থাকা অস্বাভাবিক নয়। কয়েক বছর আগে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ – বিআরআইতে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। আর যুক্তরাষ্ট্র-জাপান মিত্রদের উদ্যোগ ইন্দোপ্যাসিফিক রুপরেখা গেল এপ্রিলে প্রকাশ করেছে ঢাকা। তার মানে হলো, বাংলাদেশও এখনো কোনো পক্ষে হেলে পড়তে চায় না। বরং “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়” – সেই মূলনীতি অনেকটা অক্ষুন্ন রেখে এখনো ওয়াশিংটন বেইজিং – দু’পক্ষকেই সামলাচ্ছে ঢাকা। তবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোর দেখার যে দৃষ্টিভঙ্গী, তাতে বড় ভাবনা জুড়ে চীনের উপস্থিতি ও দেশগুলোর সাথে বেইজিংয়ের সম্পর্কের মাত্রা। বিশেষ করে বিনিয়োগ-প্রকল্প বাস্তবায়ন বা উন্নয়নের নামে বাংলাদেশের সাথে যেন চীনের ঘনিষ্ঠতা মাত্রা না ছাড়ায় সে প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নানা উদ্যোগ-ব্যবস্থা , কৌশল থাকতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন।
সুযোগ নিচ্ছে চীন?
১৪ জুন, প্রধানমন্ত্রীর সাথে সুইজারল্যান্ড সফরে রাশিয়া-চীন-ভারতসহ কয়েকটি দেশের উদ্যোগ ব্রিকস ব্যাংকে আগামী আগস্টে বাংলাদেশ যুক্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেন। একদিন আগে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী অবস্থানকে সমর্থন করে বেইজিং। এমনকি আগামী নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন চীন সফর করেন, সেজন্য নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে বেইজিং। সম্প্রতি চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন নীতিনির্ধারক ঢাকা সফর করেছেন। রোহিঙ্গা সংকটের প্রত্যাশিত সমাধান প্রত্যাবাসন, পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করার প্রচেষ্টাও অব্যাহত রেখেছে চীন। আমাদের মনে আছে, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে তৎকালীন চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কোয়াডকে বেইজিং-বিরোধী ক্লাব উল্লেখ করে তাতে যোগ দিলে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কে প্রভাব পড়তে পারে বলে হুঁশিয়ার করেন। এমন অবস্থায় এপ্রিলে যে আইপিএস বা ইন্দোপ্যাসিফিক রুপরেখা ঘোষণা করেছে ঢাকা, তাকে স্বাগত জানিয়েছে চীন। কারণ সেখানে সুস্পষ্টভাবে কোনো পক্ষ নেয়নি ঢাকা। অনেকে মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের বিরোধ বা দূরত্ব যত বাড়বে, সেই অনুপাতে ঢাকা-বেইজিং ঘনিষ্ঠতা বাড়তে পারে। চীনের বিশ্বব্যাপী যে প্রভাব বাড়ছে, তা কমাতে সারাবিশ্বে গণতন্ত্র ছড়িয়ে দেয়ার কাজটি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প সরকার আমেরিকার এই নীতি বাস্তবায়নে খুব সিরিয়াস না হলেও জো বাইডেন প্রশাসন শুরু থেকেই তা করার চেষ্টা করছে। একাধিক গণতন্ত্র সম্মেলন আয়োজন তার বড় উদাহরণ।
আরো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আসতে পারে?
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছেন বিরোধী দল রিপাবলিক্যানের ৬ কংগ্রেসম্যান। এরপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধানকে একই রকম ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছেন ইইউ পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্য। এবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাট দলের ৬ জন কংগ্রেসম্যান পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশ ইস্যুতে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। খোদ বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর আশংকা, আগামী নির্বাচনের আগে এ ধরনের তৎপরতা বা প্রচেষ্টা আরো বাড়তে পারে। পাশাপাশি, বাংলাদেশ সরকার বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যে অবস্থান এই ইস্যুতে, তাতেও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যে দূরত্ব তা কমানোর কোন দলীয় প্রচেষ্টা অন্তত দৃশ্যমান নয়। এমন অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা গুঞ্জন, ভোটের আগে এসব ইস্যুতে আরো কঠোর অবস্থানে যেতে পারে ওয়াশিংটন। যদিও ভিসা নীতির যে সামষ্টিক প্রভাব, তা যে দীর্ঘমেয়াদী হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কি করবে বাংলাদেশ?
একটা পক্ষ মনে করেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এ ধরনের ভিসা নীতি দিতো না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সে হিসেবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই তো এই সংকট থেকে মুক্তির সবচে উত্তম পথ। আবার আরেক পক্ষ বলছেন, গণতন্ত্র বা মানবাধিকারই যদি যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্ডা হতো তাহলে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে কেন এত ঘনিষ্ঠতা যুক্তরাষ্ট্রের? তাদের ভাষ্য, তার মানে এর পেছনে অন্য কৌশলগত কারণ আছে ওয়াশিংটনের। এমন অবস্থায় ধীরে চলো নীতি অনুসরণের পরামর্শ দিচ্ছেন কেউ কেউ। সেক্ষেত্রে প্রতিবেশী ভারতের অবস্থান, তাদের চাওয়া পাওয়া বিশেষ করে দেশটির নিরাপত্তার মতো মৌলিক ইস্যুতে আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে যে সমর্থন পেয়েছে নয়াদিল্লি, তার ওপর ভরসা করতে চান ক্ষমতাসীনদের একটা অংশ। সে বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্র আবারো দিল্লির চোখে ঢাকাকে দেখবে কিনা, সেটি দেখার অপেক্ষা।
লেখক : মাহফুজ মিশু, সাংবাদিক