কয়েক দশক ধরে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় বেশ কিছুদিন ধরে শিক্ষার্থীরা তাদের ঋণ মওকুফের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের দাবিকে যথাযথ মনে করেই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শিক্ষার্থীদের জন্য অন্তত ১০ হাজার ডলার ঋণ মওকুফের ঘোষণা দেন। সম্প্রতি বাইডেনের এ উদ্যোগকে আটকে দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। শিক্ষা ঋণ মওকুফ কর্মসূচির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩০ হাজার কোটি ডলার। ধারণা করা হচ্ছে শিক্ষা ঋণ মওকুফ পরিকল্পনা স্থগিতের ফলে চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ঘাটতির পরিমাণ কমাতে রায়টি উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখবে।
রয়টার্সে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাইডেনের পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত উপার্জনকারী দম্পতির একজন সন্তানের ক্ষেত্রে ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার ডলার পর্যন্ত শিক্ষা ঋণ মওকুফ করা। তবে সম্প্রতি দেশটির সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস ৬-৩ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের ব্যবধানে শিক্ষার্থীদের ৪৩০ কোটি ডলারের শিক্ষা ঋণ মওকুফে বাইডেনের প্রস্তাবে স্থগিতাদেশ দেন। সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, কংগ্রেসের সম্মতি ছাড়াই এ ধরনের তহবিল দেয়ার জন্য বাইডেনের একতরফা সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্টের আইনি কর্তৃত্বকে অতিক্রম করেছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে রিপাবলিকানরা।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অনুমান করা হয়, শিক্ষা ঋণ মওকুফ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জের ধরে পরবর্তী দশকজুড়ে মার্কিন করদাতাদের কাছ থেকে বার্ষিক প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলার পরিমাণ অর্থ আদায় করতে হতো। যার মধ্যে প্রতি মাসে ২৫০ কোটি ডলার করে আগামী এক দশক ধরে প্রায় ৩৭ হাজার ৯০০ কোটি ডলার পরিমাণ অর্থ আহরণের বাধ্যবাধকতা ছিল।
ইউএস ট্রেজারি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের বিপরীতে ৪৩ হাজার কোটি ডলার চার্জ নেয়। যার মধ্যে বিভিন্ন ত্রাণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন অন্তর্ভুক্ত। তবে কিছু কর্মসূচি স্থগিতের পদক্ষেপের ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরের ঘাটতির পরিমাণ ১ দশমিক ৩৭৫ ট্রিলিয়ন ডলারে সীমিত রাখা সম্ভব হয়। এর আগের বছর ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৭৭৫ ট্রিলিয়ন ডলার। ফেডারেল আর্থিক বছর শেষ হয় ৩০ সেপ্টেম্বর।
রয়টার্সের পক্ষ থেকে মন্তব্য চেয়ে অনুরোধ করা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা ও ট্রেজারি বিভাগের মুখপাত্ররা তাতে সাড়া দেননি। এদিকে আর্থিক ওয়াচডগ সংগঠন কমিটি ফর এ রেসপন্সিবল ফেডারেল বাজেটের (সিআরএফবি) জ্যেষ্ঠ পলিসি ডিরেক্টর মার্ক গোল্ডওয়েন অনুমান করছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৩২ হাজার কোটি ডলার প্রাক-অনুমোদিত খরচ কমে যাবে। এ খরচগুলো সাধারণত ত্রাণ ও ঋণ কর্মসূচিসহ অন্যান্য উদ্যোগের সঙ্গে সম্পর্কিত।
চলতি বছর কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস স্বল্প রাজস্ব আহরণ, উচ্চ খরচ ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়ের কারণে ১ দশমিক ৫৩৯ ট্রিলিয়ন ডলার বর্ধিত ঘাটতির পূর্বাভাস দিয়েছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, বাইডেনের শিক্ষা ঋণ মওকুফ পরিকল্পনা স্থগিতের জের ধরে চলতি বছরের রাজস্ব ঘাটতি ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় কিছুটা কমতে পারে। সে অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ ৪৩০ বিলিয়ন ঋণ মওকুফের কর্মসূচি হাতে নেয়। তবে রিপাবলিকান পার্টির নেতৃত্বাধীন রাজ্যগুলো শিক্ষা ঋণ মওকুফের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে মামলা করে। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টও এসব রাজ্যের সঙ্গে একমত পোষণ করল।