যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি স্থগিত করলো রাশিয়া - দৈনিকশিক্ষা

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি স্থগিত করলো রাশিয়া

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ‘নিউ স্টার্ট’ স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। আজ মঙ্গলবার তাঁর বার্ষিক ‘স্টেট অব দ্য ন্যাশন’ ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এ ঘোষণা দিয়েছেন। 

পুতিন বলেছেন, ‘আমি আজ এ ঘোষণা দিতে বাধ্য হলাম যে স্ট্র্যাটেজিক অফেনসিভ আর্মস ট্রিটিতে অংশগ্রহণ স্থগিত করছে রাশিয়া।’ রুশ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়, তাহলে রাশিয়ারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হওয়া দরকার।

পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে শুধু নিউ স্টার্ট চুক্তিই কার্যকর ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ ২০১০ সালে এই চুক্তিতে সই করেছিলেন। চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া মোট কী পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করতে পারবে, তার সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। তাতে উভয় দেশের সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫৫০টি দূরপাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের সুযোগ ছিল। ২০২১ সালে চুক্তির মেয়াদ পাঁচ বছরের জন্য বাড়িয়েছিল সামরিক দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দুই দেশ।

ভাষণে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ বাড়িয়ে তোলার অভিযোগ করে তিনি বলেন, বৈশ্বিক সংঘাতের মঞ্চে মস্কোকে পরাজিত করতে পারবে, এমন একটি ভুল ধারণা নিয়ে তারা এটা করছে।

রাশিয়ার পতাকাশোভিত মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন পুতিন। দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক অভিজাত ব্যক্তিদের সামনে দেওয়া এই বক্তব্যে তিনি বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়া যেসব বিষয়ের মুখোমুখি হয়েছে, তা ‘সাবধানে ও ধারাবাহিক প্রচেষ্টার’ মধ্য দিয়ে সমাধান করা হবে।

পশ্চিমাদের বৈশ্বিক সংঘাতের বিষয়ে সতর্ক করে পুতিন বলেছেন, রাশিয়াকে এই যুদ্ধে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। যুদ্ধে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের দুঃখ–কষ্ট তিনি অনুধাবন করেন।

পুতিন বলেন, ইউক্রেনের জনগণ কিয়েভের বর্তমান শাসক গোষ্ঠী ও তাদের পশ্চিমা তাঁবেদারদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। যাঁরা দেশটিকে রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে পুরোপুরি দখল করে আছে।

পশ্চিমা দেশগুলো আঞ্চলিক একটি যুদ্ধকে বৈশ্বিক সংঘাতের পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায় মন্তব্য করে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, পশ্চিমাদের তৎপরতাকে রাশিয়া ঠিক এভাবেই দেখছে। এর যথাযথ জবাব দেওয়া হবে। কারণ, এটা রাশিয়ার অস্তিত্বের বিষয়।

যুদ্ধে রাশিয়াকে পরাজিত করা অসম্ভব বলে মন্তব্য করেন ভ্লাদিমির পুতিন। তাঁর ভাষ্যমতে, রুশ সমাজকে বিভক্ত করতে পশ্চিমাদের যে চেষ্টা, তার সামনে কখনো নতি স্বীকার করবে না রাশিয়া। আর ইউক্রেন যুদ্ধের পেছনে বেশির ভাগ রুশ নাগরিকের সমর্থন রয়েছে।

নিহত রুশ সেনাদের প্রতি সম্মান

আজ পুতিন ভাষণ দিয়েছেন ক্রেমলিনের কাছেই গোস্তিনি ডেভর এক্সিবিশন সেন্টারে। সেখানে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন রাশিয়ার পার্লামেন্ট সদস্য, সেনাসদস্য, বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। ভাষণে গত বছর ইউক্রেনের চার অঞ্চলকে রাশিয়ার সঙ্গে অঙ্গীভূত করার বিষয়টি উল্লেখ করেন পুতিন। এ সময় উপস্থিত ব্যক্তিরা তাঁকে দাঁড়িয়ে সম্মান জানান। এ ছাড়া যুদ্ধে যেসব রুশ সেনার মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের স্মরণে উপস্থিত সবাইকে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন পুতিন। একই সঙ্গে নিহত সেনাদের পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার জন্য একটি বিশেষ তহবিল গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

১৯৯১ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়েছিল। এর পর থেকে ইউক্রেন যুদ্ধই রাশিয়ার সবচেয়ে বড় সামরিক পদক্ষেপ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ অনেক পশ্চিমা নেতার ভাষ্য, এই যুদ্ধে পুতিন অবশ্যই পরাজিত হবেন।

ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরু হয় গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি। আগামী শুক্রবার এই যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে রুশ বাহিনী তিন দফায় বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। তবে এরপরও ইউক্রেনের এক–পঞ্চমাংশ অঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, বেপরোয়া পশ্চিমাদের সঙ্গে তিনি অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার এক যুদ্ধে আটকে পড়েছেন। এর আগে তিনি দাবি করেছিলেন, পশ্চিমারা রাশিয়াকে ভেঙে ফেলতে চায় এবং দেশটির বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ হাতিয়ে নিতে চায়। তবে এই দাবি নাকচ করেছে পশ্চিমারা।

নিষেধাজ্ঞার পরও এগিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া

১৯৯৯ সালের শেষ দিনে রাশিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিনের কাছ থেকে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব বুঝে নেন ভ্লাদিমির পুতিন। আজকের ভাষণে তিনি বলেন, আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নিষেধাজ্ঞা দিয়েও রাশিয়াকে ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়েছে পশ্চিমারা।

পুতিন বলেন, ‘তারা (পশ্চিম) চেয়েছিল মানুষকে দুর্ভোগের মধ্যে ফেলতে। তবে তাদের হিসাব–নিকাশ শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। তারা যেমনটা ভেবেছিল, তার চেয়ে রাশিয়ার অর্থনীতি ও ব্যবস্থাপনা এখন অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে।’
রাশিয়ার অর্থনীতি নিয়ে একই ভাষ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলেরও (আইএমএফ)। 

সংস্থাটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, রাশিয়ার ২ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে চলতি বছরে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আসতে পারে। এই প্রবৃদ্ধির হার ভারত ও চীনের চেয়ে বেশ কম। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে রাশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, তার চেয়ে অনেকটা বেশি।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়া পশ্চিমামুখী হয়ে পড়েছিল বলে ভাষণে উল্লেখ করেন রুশ প্রেসিডেন্ট। বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে অনেকটা ঠাট্টাচ্ছলে তিনি বলেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার জেরে যেসব রুশ ধনকুবের প্রমোদতরিসহ অন্যান্য সম্পদ হারিয়েছেন, তাঁদের জন্য সাধারণ রুশ নাগরিকেরা চোখের পানি ফেলেননি।

তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এশিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বেড়েছে। এই অর্থনীতিকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আজকের ভাষণে রুশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজ দেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন পুতিন।

মোবাইল ছেড়ে বইয়ে মন - dainik shiksha মোবাইল ছেড়ে বইয়ে মন ফেসবুক-টিকটক আপাতত বন্ধ থাকছে - dainik shiksha ফেসবুক-টিকটক আপাতত বন্ধ থাকছে কলেজে ভর্তির সময় বাড়লো, ক্লাস শুরু ৬ আগস্ট - dainik shiksha কলেজে ভর্তির সময় বাড়লো, ক্লাস শুরু ৬ আগস্ট জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৭ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৭ জন চিহ্নিত স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষা ১১ আগস্টের পর - dainik shiksha স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষা ১১ আগস্টের পর পিএসসির সব পরীক্ষা ৩১ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত - dainik shiksha পিএসসির সব পরীক্ষা ৩১ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.01001501083374