যুদ্ধাপরাধী মুঈনুদ্দীনের মামলায় যুক্তরাজ্যে লড়বে সরকার - দৈনিকশিক্ষা

যুদ্ধাপরাধী মুঈনুদ্দীনের মামলায় যুক্তরাজ্যে লড়বে সরকার

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালতে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চৌধুরী মুঈনুদ্দীন মানহানি মামলা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের আইনি তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেশটির সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া এক রায়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাংলাদেশ গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের কার্যক্রম ও রায় নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, শহীদ পরিবারসহ দেশের আইনজ্ঞরা। তবে সরকার-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের আদালতের দেওয়া রায়ের পর বিষয়টি নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। মুঈনুদ্দীনের মামলায় সরকার পক্ষভুক্ত হয়ে জবাব দেবে। 

আইনজ্ঞরা বলছেন, প্রতিটি দেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম। যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট রেওয়াজ ভেঙে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা করেছেন। অথচ এই মামলায় বাংলাদেশ সরকার প্রতিনিধিত্ব করেনি। সরকারের উদাসীনতা ও কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণে এমনটি ঘটেছে। এতে চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করা আরও কঠিন হতে পারে। তারা অবিলম্বে সরকারকে যুক্তরাজ্যের আদালতে আইনজীবী নিয়োগ করে তার বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের আগমুহূর্তে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে  ৩ নভেম্বর চৌধুরী মুঈনুদ্দীন এবং অপর যুদ্ধাপরাধী আশরাফুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায়ে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সারসহ ১৮ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীকে হত্যার দায়ে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। মুঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যে এবং আশরাফুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। মুঈনুদ্দীন ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে  যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব লাভ করেন।

জানা গেছে, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে  যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে মুঈনুদ্দীনকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে  বাংলাদেশে তার ফৌজদারি অপরাধের বর্ণনা যুক্ত করা হয়েছিল। ২০২০খ্রিষ্টাব্দে  তৎকালীন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল প্রতিবেদনটি টুইটারে (বর্তমানে এক্স) শেয়ার করেন। এর পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ৬০ হাজার পাউন্ড ক্ষতিপূরণ চেয়ে মানহানি মামলা করেন চৌধুরী মুঈনুদ্দীন। মামলাটি ব্রিটিশ হাইকোর্টে খারিজ হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়। গত ২০ জুন আদালত অভিযোগটি আমলে নেন এবং মুঈনুদ্দিনকে মামলা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। রায়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ বিচার ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের (বিলিয়া) পরিচালক ড. মিজানুর রহমান  বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত রেওয়াজ ভঙ্গ করে অন্য দেশের আদালত ও বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং এর মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধী মুঈনুদ্দীনের পক্ষেই দেশটির আদালত অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। এটি দুঃখজনক। এর ফলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা কঠিন হতে পারে।’ সরকারের করণীয় প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. মিজান বলেন, ‘প্রীতি প্যাটেলের বিরুদ্ধে করা মানহানি মামলায় বাংলাদেশ সরকারকে বিবাদী করা হয়নি। কিন্তু এ মামলায় বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিষয় জড়িয়ে আছে। তাই মামলার শুরু থেকেই সরকারের আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া উচিত ছিল। এখনও আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে সরকার শক্ত অবস্থান নিতে পারে।’
বিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধ গবেষক শাহরিয়ার কবির  বলেন, ‘যুক্তরাজ্য মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে। এর সুযোগ নিচ্ছে যুদ্ধাপরাধীসহ বিভিন্ন দেশের খুনিচক্র। কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে দেশটিকে এটি বোঝাতে হবে। তা না হলে মুঈনুদ্দীনকে দেশে ফেরানো যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘মুঈনুদ্দীনের মামলায় আইন মন্ত্রণালয় কেন আগে ব্যবস্থা নেয়নি– সেই প্রশ্ন তোলা দরকার। বহুবার এ বিষয়ে সরকারকে আমরা সতর্ক করেছি। যুক্তরাজ্যের কোনো আদালতে আমাদের কোনো বিষয় বিচার্য হতে পারে না। কিন্তু সেটাই হয়েছে। সরকারের উদাসীনতায় তা হয়েছে।’
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব  বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের আদালত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়গুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই আদেশকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।’

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের ছেলে জেনোসাইড বিশেষজ্ঞ তৌহীদ রেজা নূর বলেন, ‘এ রায় অপ্রত্যাশিত এবং  শহীদ পরিবারের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক। চৌধুরী মুঈনুদ্দীন অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে আমার বাবাসহ বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছিল। এটি সর্বজনবিদিত। এর প্রত্যক্ষদর্শী ও দালিলিক তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।’ তিনি অবিলম্বে মুঈনুদ্দীনকে দেশে এনে রায় কার্যকরের জোর দাবি জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের (বাংলাদেশ সরকার) অনুপস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের আদালত রায়টি দিয়েছেন। আমরা রায়টি পর্যালোচনা করছি। সরকার এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’ বিষয়টি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নজরে দেওয়া হলে তিনি বলেন, ‘সরকার অবশ্যই এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আমরা ইতোমধ্যে আইনগত ও কূটনৈতিকভাবে কাজ শুরু করেছি। কিন্তু কীভাবে শুরু হয়েছে, সেটি বলা ঠিক হবে না। বিষয়টি পলাতক যুদ্ধাপরাধীদের– এটি মনে রাখতে হবে।’

শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028150081634521