মহাজাগতিক ঘটনা সূর্যগ্রহণের সময় তা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে পৃথিবীর মানুষ। বিভিন্নভাবে তা দেখার চেষ্টা করে। অনেকে কুসংস্কারে বিশ্বাস করে মেনে চলেন কিছু নিয়ম। অনেকে বিজ্ঞানের পরামর্শ মেনে নিজেদের মতো করে উপভোগ করার চেষ্টা করেন সময়টা। প্রাণিজগতের বাকিরা কী করেন?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, দিনের বেলায় হুট করেই রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় প্রাণীদের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করাই স্বাভাবিক। তবে ওই সময় তাদের ভেতরে ঠিক কি কাজ করে, তা যথার্থভাবে বলা মুশকিল।
প্রাণীরা মানুষের মতো ঘড়ি দেখে প্রতিটা দিন পার করে না। তারা নিজেদের ‘জৈবিক ঘড়ি’ মেনে ২৪ ঘণ্টা কাটায়। যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘সার্কাডিয়ান রিদমস’। এই ঘড়ি মেনে নির্দিষ্ট সময় খাবার, ঘুম ও শিকারে যায় এরা। এর মধ্যে দিনেই রাতের পরিবেশ হলে তারা আসলে কী করবে তা বুঝতে পারে না।
এর প্রধান কারণ, এসব মহাজাগতিক ঘটনা বিরল। বহু বছর পরপর তা দেখা যায়। এ কারণে এমন এমন অনেক প্রাণী আছে যারা জীবদ্দশায় কখনো এমন দেখেনি। মানুষের ক্ষেত্রে হয়তো তথ্যগুলো সবার জানা থাকে, প্রাণীদের ক্ষেত্রে তা নাও থাকতে পারে।
মহাজাগতিক ঘটনার সময় প্রাণীদের আচরণগত পরিবর্তন নিয়ে কাজ করছেন সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ সিসিলিয়া নিলসন। তিনি বলেন, ‘আলো হচ্ছে এমন একটি জিনিস, যা গাছ থেকে শুরু করে প্রতিটি প্রাণীর ওপর প্রভাব ফেলে। আমরা কিন্তু চাইলেই সূর্যকে আড়াল করতে পারি না। প্রকৃতি তা পারে।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, আজ থেকে ১০০ বছর আগেও এ নিয়ে গবেষণা করেন নিউজিল্যান্ডের একদল বিজ্ঞানী। শত শত প্রাণী হাজির করেছিলেন তারা। ওই সময় পরিবর্তনগুলো পর্যবেক্ষণ করেন। এর মধ্যে মৌমাছিরা মৌচাকে ফিরতে শুরু করে, প্যাঁচারা অস্থির হয়ে যায়।
২০০৭ সালেও এমন গবেষণা করা হয়। যাতে জানা যায়, সূর্যগ্রহণের সময় যখন অন্ধকার হয় তখন সাউথ ক্যারোলিনার চিড়িয়াখানার জিরাফ ভয়ে ভয়ে দ্রুতলয়ে হাঁটতে থাকে। কচ্ছপ তখন সঙ্গিনী খুঁজে। এমনকি মৌমাছিরাও শব্দ করা বন্ধ করে দেয়।
২০০৭ সালের গবেষণার পর চার ধরনের প্রাণী বেছে নেওয়া হয়। এরা হলো, সূর্যগ্রহণের সময় স্বাভাবিক আচরণকারী, সন্ধ্যার মতো কাজ শুরু করা প্রাণী, যাদের মধ্যে অস্থিরতা চলে আছে ও যারা ব্যতিক্রমী কাজ করে।
এদের মধ্যে ভালুক এ সময় ঘুমাতে শুরু করে, আর পাখিরা অস্থির হয়ে যায়। অনেকে কোথাও লুকিয়ে যায়, সূর্য ‘উঠলে’ আবার বের হয়।
তবে এসব প্রাণীরা সূর্যগ্রহণ দেখে এ প্রতিক্রিয়া জানায় নাকি মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখে প্রতিক্রিয়া জানায়, তা বলা মুশকিল। কেয়ার্নির নেব্রাস্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এমা ব্রিনলি বাকলে বলছেন, সূর্যগ্রহণের সময় পাখিদের প্রতিক্রিয়া হয় ভিন্ন ভিন্ন। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশের কারণই এখনো স্পষ্ট নয়।
সূর্যগ্রহণের সময় মাছেরা আশ্রয় খোঁজে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মাকড়শা তাদের সুতো নষ্ট করে ফেলে। তবে এসব প্রতিক্রিয়ার প্রধান কারণ হতে পারে হুট করেই রাতের মতো হওয়া। এমনটাই বলছে বিজ্ঞান। এতে কিছু প্রাণী ভয় পেয়ে যায়, কিছু প্রাণী মানিয়ে নিতে চেষ্টা করে। যদিও এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা এখনো বাকি।
বছরের প্রথম বিরল এক সূর্যগ্রহণের সাক্ষী হতে চলেছে বিশ্ব। সোমবার মেক্সিকো, আমেরিকা, কানাডা অতিক্রম করবে এটি। পরে উত্তর আমেরিকা ঘুরে যাবে এ পূর্ণ সূর্যগ্রহণ। এবারও এমনই পরীক্ষা চালানো হবে।