সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। অনেকেই জানতে চাচ্ছেন, সরকার পেনশনভোগীদের যে বাড়তি অর্থ দেবে, তার নিরাপত্তা কতটুকু বা অর্থের সংস্থান হবে কীভাবে। পুরো প্রক্রিয়া কতটুকু ঝামেলামুক্ত হবে– এমন প্রশ্ন করছেন অনেকেই। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে, জনগণের দেওয়া অর্থ সর্বোচ্চ নিরাপত্তার সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে লাভজনক খাতে বিনিয়োগের জন্য সর্বজনীন পেনশন তহবিল ব্যবস্থাপনা নামে আলাদা একটি বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর আওতায় বিনিয়োগে তিন খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এসব বিনিয়োগে যে আয় হবে, তা থেকেই শতভাগ নিরাপত্তার সঙ্গে পেনশনভোগীদের অর্থ দেওয়া সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন করেন। প্রাথমিকভাবে চার ধরনের নাগরিকের জন্য প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাসী– এ চার প্রকারের প্যাকেজ রাখা হয়েছে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ছয় হাজারের বেশি গ্রাহক প্রথম কিস্তি পরিশোধ করেছেন। এতে পেনশন কর্তৃপক্ষের হিসাবে মোট চাঁদা জমা হয়েছে ৩ কোটি টাকার বেশি। তবে অর্থ পরিশোধ করেননি, কিন্তু নিবন্ধন করেছেন এমন সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। পেনশনের নিবন্ধন থেকে শুরু করে চাঁদা পরিশোধ– সবই ২৪ ঘণ্টা অনলাইনে করা যাচ্ছে। মানুষ তাদের সুবিধাজনক সময়ে নিবন্ধন করছেন। এতে আবেদনকারীর সংখ্যাও প্রতিমুহূর্তে বাড়ছে।
পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গ্রাহকদের পেনশন সুবিধা দিতে সরকারের বাড়তি কোনো টাকার প্রয়োজন হবে না। গ্রাহকদের চাঁদার ওপর বার্ষিক ৭ থেকে ৮ শতাংশ হারে মুনাফা ধরেই পেনশনের অর্থের জোগান দেওয়া সম্ভব। পেনশন তহবিলে সুবিধাভোগীদের যে অর্থ জমা হবে, সেখান থেকে কোনো অর্থ সরানো হবে না। এমনকি জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের যাবতীয় পরিচালন ব্যয় বাবদ সরকারের আলাদা বরাদ্দ থাকবে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ তহবিলের অর্থ দীর্ঘ মেয়াদে লাভজনক ও নিরাপদ বিনিয়োগ করবে।
খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী নিরাপদ ও দীর্ঘ মেয়াদে মুনাফা পাওয়া যায়– এমন খাতে তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হবে। এ খাতে এখন ৮ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাওয়া যাচ্ছে। তহবিল আরও বড় হলে একটি অংশ সরকারের লাভজনক অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হবে। এ ছাড়া একটি অংশ ক্রেডিট রেটিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারিত প্রথম সারির ১০ সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে দীর্ঘমেয়াদি এফডিআর আকারে রাখা হবে।
অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, তহবিল ব্যবস্থাপনায় একটি বিধিমালা তৈরির কাজ প্রায় চূড়ান্ত। এ ক্ষেত্রে যেসব বিনিয়োগে ঝুঁকি কম, সেগুলোকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সুরক্ষা নিশ্চিত করে ভালো রিটার্ন পাওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
সরকার চাইছে, যারা পেনশন স্কিমে চাঁদা দেওয়া শুরু করবেন, তারা যেন মেয়াদ পূর্ণ করেন। এরপরও যদি কেউ মেয়াদ পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত চাঁদা দিতে না পারেন, তাহলেও মুনাফাসহ জমা দেওয়া অর্থ ফেরত পাবেন। এমনকি চাঁদার এক কিস্তি দেওয়ার পর, যদি আর না দেন, তাহলেও তিনি মুনাফাসহ জমা দেওয়া টাকা ফেরত পাবেন। তবে যখন খুশি, তখন চাইলেই টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না। যিনি পেনশন স্কিম গ্রহণ করবেন, তাঁর বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হলেই চাঁদার অর্থ মুনাফাসহ ফেরত পাবেন। পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর মুনাফার হার ঘোষণা করবে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে গ্রাহক তাঁর ইউনিক পেনশন আইডি দিয়ে প্রবেশ করে প্রতিবছর শেষে মুনাফাসহ জমা হওয়া টাকার পরিমাণ জানতে পারবেন। কোনো গ্রাহক পেনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের পর টানা ১০ বছর চাঁদা দিলেই তিনি পেনশন পাওয়ার যোগ্য হবেন। তবে গ্রাহককে পেনশন সুবিধা পেতে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর জমাকৃত টাকা ও সরকার ঘোষিত মুনাফার স্থিতির ভিত্তিতে ৬০ বছর বয়স থেকে তিনি প্রতি মাসে পেনশন পাবেন।
সূত্র : সমকাল