যেভাবে বঙ্গভবন থেকে বিদায় নেবেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ - দৈনিকশিক্ষা

যেভাবে বঙ্গভবন থেকে বিদায় নেবেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব পালন করা মো. আবদুল হামিদকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানাবে বঙ্গভবন। রোববারই বঙ্গভবনে আবদুল হামিদের শেষ কার্যদিবস। দীর্ঘ এক দশক ধরে বঙ্গভবনে থাকার সময় আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপ্রধানের বাসভবনকে তার স্বভাবসুলভ হাস্যরসে বলেছেন, ‘জেলখানা’। নিজেকে তুলনা করেছেন, ‘খাঁচার পাখির’ সঙ্গে। সেই ‘খাঁচা’ থেকে সোমবার বের হচ্ছেন এই বর্ষীয়ান রাজনীতিক।

সোমবার বঙ্গভবনে নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের শপথ গ্রহণের পর শুরু হবে আবদুল হামিদের বিদায় পর্ব। ইতোমধ্যে বিদায় অনুষ্ঠান আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বঙ্গভবন। এটিই হবে দেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো রাষ্ট্রপতিকে সামরিক কায়দায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানো। বড় ধরনের আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে বিদায় নেয়ার পর আবদুল হামিদ রাজধানীর নিকুঞ্জে তার নিজ বাড়িতে উঠবেন।

সোমবার বেলা ১১টায় দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন শপথগ্রহণের মধ্য দিয়ে দায়িত্বভার নেবেন। শপথ পাঠ করাবেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। শপথ অনুষ্ঠানে আবদুল হামিদ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিসভার সদস্যসহ বিশিষ্টজনরা উপস্থিত থাকবেন।

শপথের পর আবদুল হামিদ ও সাহাবুদ্দিন চেয়ার বদল করবেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন।

প্রেস সচিব আরও বলেন, ‘সোমবারই মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বঙ্গভবন থেকে বিদায় নেবেন। আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে তাকে বিদায় দেয়া হবে। তিনি নিকুঞ্জে নিজ বাড়িতে উঠবেন।’

গত ১৭ এপ্রিল বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আবদুল হামিদের সম্মানে এক বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এর আগে গত মার্চে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে বিদায়ী মতবিনিময় করেছিলেন।

বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে, নতুন রাষ্ট্রপতির শপথের পর দুপুর সাড়ে ১২টায় আবদুল হামিদের বিদায় পর্ব শুরু হবে। প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) তাকে গার্ড অব অনার ও অভিবাদন জানাবে। বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল গ্রাউন্ডে এই গার্ড অব অনার দেয়া হবে।  

এরপর বিদায়ী রাষ্ট্রপতিকে ফুলে সজ্জিত একটি খোলা জিপে করে বঙ্গভবনের ফোয়ারা এলাকা থেকে প্রধান ফটকের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিদায়ী রাষ্ট্রপতিকে বহনকারী জিপটিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে টেনে নিয়ে যাবেন। এ সময় রাস্তার দুই পাশ থেকে ফুলের পাপড়ি ছিটানো হবে।

এরপর প্রধান ফটক থেকে ভিভিআইপি প্রটোকলে বিদায়ী যাত্রা করবেন আবদুল হামিদ। দীর্ঘ ১০ বছর পর বঙ্গভবন ছেড়ে নিকুঞ্জে তৈরি করা নিজের নতুন বাড়িতে যাবেন তিনি। বসবাস শুরু করবেন নিকুঞ্জ-১-এর ক-ব্লকের ৩ নম্বর রোডের নতুন ঠিকানায়।

প্রথম কোনো রাষ্ট্রপতির আনুষ্ঠানিক বিদায়

বাংলাদেশে এর আগে ২০ জন রাষ্ট্রপতি বিদায় নিয়েছেন। তবে কেউই কার্যত আনুষ্ঠানিক বিদায় পাননি। আবদুল হামিদকে বঙ্গভবন আনুষ্ঠানিক বিদায় দিচ্ছে। সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতিকে সামরিক কায়দায় গার্ড অব অনার ও প্রটোকল দিয়ে নিজের ঠিকানায় পৌঁছে দেবে।

বাংলাদেশের প্রথম ও ষষ্ঠ রাষ্ট্রপতি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেনাবাহিনীর একদল বিপদগামী সদস্যের হামলায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। আরেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে সেনাসদস্যদের হাতে নিহত হন।

মুক্তিযুদ্ধকালে দেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তবে তার বঙ্গভবনে ওঠা হয়নি। তৃতীয় রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও চতুর্থ রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মুহম্মদউল্লাহ তাদের মেয়াদ শেষ না করেই বিদায় নেন। এর মধ্যে সংবিধান সংশোধন করে আবারও রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রবর্তনের ফলে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি হন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পর নতুন প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতি হন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের কুশীলবদের একজন খন্দকার মোশতাক আহমদ। তবে বিপ্লব-পাল্টা বিপ্লবে তিন মাসেরও কম সময় দায়িত্ব পালন করে তাকে বিদায় নিতে হয়।

রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েম, বিচারপতি আব্দুস সাত্তার এবং আবুল ফজল মুহম্মদ আহসান উদ্দিন চৌধুরীকে চাপের মুখে পদ থেকে সরে যেতে হয়েছে। সায়েমকে সরিয়ে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হন এবং জিয়া হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পর আব্দুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি হন। পরে আব্দুস সাত্তারকে সরিয়ে আবুল ফজল মুহম্মদ আহসান উদ্দিন চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি করেন তৎকালীন সিএমএলএ (প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক) হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পরে তাকে সরিয়ে নিজেই দেশের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। গণআন্দোলনে এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হলে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর দেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি (১৪তম) হন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। তিনি ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির পদ থেকে প্রধান বিচারপতির পদে ফিরে যান।

পরবর্তী সময়ে আবদুর রহমান বিশ্বাস, সাহাবুদ্দীন আহমদ ও অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ প্রত্যেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাদের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করলেও তাদের বিদায়টা আনুষ্ঠানিক হয়নি। তারা তিনজনই অনেকটা নীরবে বঙ্গভবন ত্যাগ করেন। দেশের অষ্টাদশ রাষ্ট্রপতি একিউম বদরুদ্দোজা চৌধুরী দেড় বছরের কিছু বেশি সময় দায়িত্ব পালনের পর অভিশংসন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে পদত্যাগ করে বঙ্গভবন ছাড়েন। দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি ছিলেন স্পিকার জমির উদ্দিন সরকার (ভারপ্রাপ্ত)। দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিল্লুর রহমান চার বছরের মতো দায়িত্ব পালন করে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন।

জিল্লুর রহমান মৃত্যুর আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন জাতীয় সংসদের তৎকালীন স্পিকার আবদুল হামিদ। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হন। পরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল আবদুল হামিদ দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

 

 

জঙ্গি ছাত্রশিবির, ছাত্রদল সব নষ্টের চেষ্টা করেছে: আইনমন্ত্রী - dainik shiksha জঙ্গি ছাত্রশিবির, ছাত্রদল সব নষ্টের চেষ্টা করেছে: আইনমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ভর করে ধ্বংসযজ্ঞ: নৌবাহিনী প্রধান - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ভর করে ধ্বংসযজ্ঞ: নৌবাহিনী প্রধান কোটা সংশোধনের প্রজ্ঞাপন জারি: সব গ্রেডের চাকরিতে কোটায় ৭ - dainik shiksha কোটা সংশোধনের প্রজ্ঞাপন জারি: সব গ্রেডের চাকরিতে কোটায় ৭ তিন শতাধিক পরীক্ষা পেছানোয় শিক্ষায় স্থবিরতা - dainik shiksha তিন শতাধিক পরীক্ষা পেছানোয় শিক্ষায় স্থবিরতা শিক্ষা ক্যাডারদের এমপিওর তথ্য মেলেনি আজও - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারদের এমপিওর তথ্য মেলেনি আজও দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে  - dainik shiksha please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028848648071289