যেভাবে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেন ইসরাত জাহান - দৈনিকশিক্ষা

যেভাবে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেন ইসরাত জাহান

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

যুক্তরাষ্ট্রে ইউনিভার্সিটি অব মেমফিসে সোশিওলজি বিভাগে অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টিতে শিক্ষকতা শুরু করেছেন কিশোরগঞ্জের মেয়ে ইসরাত জাহান। জেলার সৌরবালা সরকারি গার্লস স্কুল এবং গুরুদয়াল  সরকারি কলেজে পড়াশোনা করেছেন। কলেজ শেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেও দেখেছেন বড় হওয়ার স্বপ্ন। সে অনুযায়ী তৈরি করেছেন নিজেকে। সেই ইসরাত যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেমফিসে অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টিতে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছেন।

তিনি এ বছর জানুয়ারি থেকে সেখানে শিক্ষকতা শুরু করেন। ইসরাত জাহান বলেন, অন্য সবার মতো আমিও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে অনেকগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম। কয়েক জায়গায় ‘অপেক্ষমাণ তালিকায় নাম এলেও শেষ পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ময়মনসিংহের মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজটের কথা সবার জানা। তার ওপর সবাই বলতেন, ইংরেজিতে পড়ে আর কী হবে? আশপাশে দেখতাম কেউ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, কারও পড়ার বিষয় চিকিৎসা, কারও প্রকৌশল। সবাই বিসিএস ক্যাডার হতে চান। সরকারি চাকরির পরীক্ষার জন্য শুরু থেকেই তৈরি হচ্ছিলেন অনেকে। কিন্তু পড়ার আগ্রহ থেকে সরে যাইনি কখনো। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি বলে  নিজেকে দুর্বল ভাবিনি কখনো।

নিজেকে গড়েছেন যেভাবে : ২০১০ সালে ক্লাস শুরু করে ইসরাত ২০১৬ সালে স্নাতকের ফাইনাল পরীক্ষা দেন। কলেজে ইংরেজি নিয়ে পড়লেও তার ইংরেজি বলা বা বোঝার মধ্যে অনেক ঘাটতি ছিল। ভালো ইংরেজি লিখতে পারলেও ব্যবহারিক জ্ঞান কম ছিল। তবু কলেজের পাঠ্যক্রম খুব মন দিয়ে অনুসরণ করে গেছেন, ফলে বিভাগের ফলাফলে সব সময় প্রথম হয়েছেন। স্নাতক শেষে আর সবার মতো তিনিও যখন সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার ব্যাপারে ভাবছিলেন, তখন এক বন্ধুর সঙ্গে কথা হয় তার। ওই বন্ধু তখন ভিনদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তাকে বললেন, ‘আমি কি পারব?’ সে বলল, চেষ্টা থাকলে যে কেউ পারবে। শুধু ভর্তির চাহিদাগুলো পূরণ করতে হবে। ইসরাত জাহান বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শেষে ২০১৮ সাল থেকে বিদেশে   পড়তে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। ভালো করে একটা ই-মেইল লিখতে পারতাম না, ইংরেজি বলতে ভীষণ ভয় পেতাম। এত সংকটের মধ্যে জিআরই পরীক্ষায় অংশ নিই। প্রথমবার খুব একটা ভালো স্কোর করতে পারিনি। দ্বিতীয়বার প্রস্তুতি নিতে নিতেই এমন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজে বের করি, যেখানে ভর্তির জন্য জিআরই স্কোর প্রয়োজন হয় না (করোনার জন্য এই সুযোগ দেওয়া হয়েছিল)। সব বিশ্লেষণ শেষে আবেদন পাঠালাম। 

যেদিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেমফিস থেকে ই-মেইল পেলাম, আমি সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পূর্ণ তহবিলসহ (ফুল ফান্ডেড) পড়ার সুযোগ পেয়েছি, সেদিনের অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গিয়ে শুরুতে বেশ হিমশিম খেতে হয়েছে। দেশে যেখানে অনেক সময় নিয়ে পড়ার সুযোগ পেতাম, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রে সবকিছুরই মনে হচ্ছিল সময়সীমা খুব কম। তবে ভালো দিক হলো, শিক্ষকরা ভীষণ আন্তরিক। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করি। স্নাতকোত্তরে বাংলাদেশে নারী স্বাস্থ্য ও বৈষম্য নিয়ে গবেষণা করেছি। এ বছর জানুয়ারিতে ইউনিভার্সিটি অব মেমফিসে সোশিওলজি বিভাগে অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টিতে শিক্ষকতা শুরু করি। ইসরাত জানান, এ বছরই পিএইচডি গবেষণা শুরু করবেন। বাংলাদেশের নারীদের স্বাস্থ্য উন্নয়নে কীভাবে আরও কার্যকর উপায় বের করা যায় সেটিই হবে গবেষণার বিষয়।

শিক্ষকের বয়ান : গোপী নাথ ঘোষ। মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক তিনি। সেই সুবাদে সরাসরি শিক্ষক ছিলেন ইসরাত জাহানের। শিক্ষক গোপী নাথ ইসরাত জাহান সম্পর্কে বলেন, তার জানার আগ্রহটা   বরাবরই ভালো ছিল। ডিপার্টমেন্টেও প্রথম হতো। আমরা বুঝতে পারতাম ওর মধ্যে এক্সট্রা অনেক প্রতিভা আছে।  কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ইচ্ছা করলেই আমরা কিছু করতে পারি না। সেও পারত না। এরপরও সীমাবদ্ধতার মধ্যে সবকিছুতেই এগিয়ে থাকত। এ জন্যই আজ যুক্তরাষ্ট্রের মতো  দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সে।

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032269954681396