সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ। তিনি অরাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবেই পরিচিত। তার হাত ধরে ঢাবি অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে অনেকেই প্রত্যাশা করছেন। তেমনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কেও (রাবি) এগিয়ে নিতে রাজনীতি সংশ্লিষ্ট না, এমন কাউকে উপাচার্য হিসেবে চাচ্ছেন সচেতন শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত ২৪ জন উপাচার্য নিয়োগ পেয়েছেন। অনিয়ম-দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ তাদের পিছু ছাড়েনি। এসব অভিযোগের কিছু আবার সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল।
এদিকে শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট দেশত্যাগের পর ৮ আগস্ট সর্বশেষ উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার পদত্যাগ করেছেন। পরে উপ-উপাচার্যদ্বয়, পুরো প্রক্টরিয়াল বডি ও ১০টি হলের প্রাধ্যক্ষসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা ৭৬ জন শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম কার্যত অকেজো হয়ে পড়েছে।
ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের সেশনজট চরম আকার ধারণ করছে। তাই ক্যাম্পাস সচল করতে অতিদ্রুত উপাচার্য চান শিক্ষার্থীরা। এক্ষেত্রে দলীয় ও রাজনৈতিক পরিচয় চয় না বরং ঢাবি উপাচার্যের মতো শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসনিক দক্ষতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষককে উপাচার্য হিসেবে প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা কাটাতে শিক্ষক-কর্মকর্তারাও সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নাইমা জান্নাত বলেন, আমরা বিগত দিনগুলোতে দেখেছি উপচার্যরা এসে তার দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেন। আমরা সবাই চাই রাবিতে শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য নিয়োগ হোক। যারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের কাছে তুলে নিয়ে যাবে। আমরা দেখেছি বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের ১ হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে থাকতে পারে না। ইতোমধ্যে ঢাবিতে অরাজনৈতিক একজন ভিসি নিয়োগ হলো। আমরাও ঢাবির ভিসির মতোই একজন ভিসি চাই।
ইলেকট্রনিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক হিরা বলেন, ভিসি হতে হবে উদার। যার কাছে গেলে শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হবে না। বিগত দিনগুলোতে আমরা দেখেছি, কেউ যখন ছাত্রলীগের কোনো অপকর্মের বিরুদ্ধে রাবির উপাচাযের্র কাছে আভিযোগ নিয়ে যেত, তখন তারা তাদের কিছুই করত না। বরং তারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রশ্রয় দিতো। আমরা রাবিতে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসনিক দক্ষতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য চাই।
ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, উপাচার্য হোক শিক্ষার্থীদের জন্য, যেন কোনো দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী না হয়। বিগত উপাচার্যরা বিভিন্ন দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন, প্রজেক্ট আর নিয়োগে যতটা নজর দিয়েছেন, সেই তুলনায় কম নজরই একাডেমিক দিকে দিয়েছেন। একাডেমিক দিকে নজর দিলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দৈন্যদশা দেখতে হতো না। উপাচার্য আসে, উপাচার্য যায় আমাদের দেখার কেউ থাকে না। থাকা-খাওয়া, ইন্টারনেট, ক্লাস-পরীক্ষা, র্যাগিং, হ্যারেজমেন্ট, কাগজপত্র উত্তোলনসহ বিভিন্ন সমস্যা কেউই সমাধানের উদ্যোগ নেন না সেভাবে। আমরা চাই এমন একজন উপাচার্য আসুক যিনি শিক্ষার্থীদের দুঃখ-কষ্ট বুঝবেন।