যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতি ও সহযোগী অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কুমার সরকারকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে স্ত্রী জয়া শাহার করা মামলার শুনানিতে তার জামিন না মঞ্জুর করে নাটোর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক মোহাম্মদ আবদুর রহিম এ আদেশ দেন। বাদী পক্ষের আইনজীবী আলেক শেখ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আলেক শেখ বলেন, উনি (সঞ্জয় সরকার) আজকে জামিন চেয়েছিলেন। উনার নামে উনার স্ত্রী (জয়া সাহা) নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছিলেন। আজ সেই মামলায় জামিন নিতে আসলে তাকে জজ সাহেব জামিন না দিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন।
এ বিষয়ে সঞ্জয় কুমারের আইনজীবী শাহজাহান কবীর বলেন, আদালত তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ..আশা করি তিনি জামিন পাবেন। আমরা আগামী রবিবার আবারো জামিনের জন্য চেষ্টা করবো।
মামলার আসামী সঞ্জয় সরকার পাবনা জেলার চড়াডাঙ্গা উপজেলার সুশান্ত কুমার সরকারের ছেলে। অন্যদিকে তার স্ত্রী জয়া সাহা নাটোর জেলার উপরবাজার উপজেলার রতন কুমার সাহার বড় মেয়ে। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। সম্প্রতি এল.এল.এম শেষ বর্ষের পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আট বছর পূর্বে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে ড. সঞ্জয় সরকারের সঙ্গে জয়া সাহার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় জয়ার বাবা মেয়ের কল্যাণের কথা ভেবে উপহার হিসেবে ২৫ লক্ষ টাকা, ২০ ভরি স্বর্ণালংকার, টিভি, ফ্রিজসহ প্রয়োজনীয় যাবতীয় ফার্ণিচার প্রদান করে। আট বছরের সংসারকালে প্রায় সময় যৌতুকের জন্য সঞ্জয় তার স্ত্রীকে নানাভাবে নির্যাতন করতেন। সর্বশেষ প্লাট কেনার জন্য সঞ্জয় তার স্ত্রীকে বাপের বাড়ি থেকে যৌতুক বাবদ ১০ লক্ষ টাকা এনে দেয়ার জন্য নির্যাতন করে। কিন্তু তার স্ত্রী এতে অস্বীকৃতি জানালে গত বছরের জুন মাসে স্ত্রীকে জোরপূর্বক শ্বশুরবাড়ি রেখে আসে সঞ্জয়। তারপর থেকে উভয়ই একবছর আলাদা থাকছেন। তাদের সংসারে সাড়ে চার বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। এদিকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি শ্বশুর বাড়ির লোকজন সঞ্জয়কে সংসার করার অনুরোধ করলেও যৌতুকের টাকা না দিলে তাতে অসম্মতি জানান সঞ্জয়। এ ঘটনার পর গত মার্চে তার বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(গ) এবং ৩০ ধারায় মামলা করেন স্ত্রী জয়া শাহা। মামলায় সঞ্জয় ছাড়াও আরো তিন জনকে আসামী করা হয়েছে। তারা হলেন- সঞ্জয়ের বাবা সুশান্ত কুমার সরকার, মা উষা রানী সরকার ও ভাই দুর্জয় কুমার সরকার।
এর আগে গত ৪জুন এসব ঘটনার বিচারের দাবিতে ইবির প্রেস কর্ণারে সংবাদ সম্মেলন করেন বাদী জয়া শাহা। জয়া অভিযোগ করেন, বিয়ের পর থেকেই মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি তাকে শারীরিক নির্যাতন করতেন সঞ্জয়। সেন্ডেল, বেল্ট, ঝাঁটা, হাতা, খুন্তি, বেলনা থেকে শুরু করে হাতের কাছে যখন যা পেতেন তা দিয়েই শারীরিক নির্যাতন করতেন। অনেক সময় মারতে মারতে অসুস্থ হয়ে পড়লে গাড়ী ভাড়া করে তাকে বাপের বাড়িতে রেখে আসতো সঞ্জয়। এছাড়া তাকে বিভিন্ন সময় মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হতো। তাকে ছাড়াও তার সাড়ে চার বছরের সন্তানকেও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন তিনি।
এসব অভিযোগ ছাড়াও সঞ্জয় কুমারের বিরুদ্ধে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে বিভাগের এক ছাত্রীকে মানসিক নিপীড়ন ও হুমকির অভিযোগ রয়েছে। এতে ওই ছাত্রী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। পরে ছাত্রীর বাবার অভিযোগে গঠিত তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিললে সঞ্জয় ভুক্তভোগী ছাত্রীর কোনো কোর্সে সংশ্লিষ্ট থাকতে পারবে না বলে প্রশাসন সিন্ধান্ত প্রদান করেন।