যৌন নির্যাতনের অভিযোগে চট্টগ্রামে এক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিক্ষোভ হয়েছে। এসময় তাদের হাতে লাঞ্ছিতও হয়েছেন সেই শিক্ষক। শিক্ষার্থীরা বই, খাতা, কলম, পানির বোতল ছুড়ে মারেন তার মুখে। সকাল থেকে শুরু হওয়া অবরোধ কর্মসূচি দুপুরে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু হলে প্রায় চার ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর পুলিশ নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে যান এবং তাকে উদ্ধার করেন। অভিযুক্ত শিক্ষক নগরীর চকবাজারস্থ কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দাবির মুখে রোববার (১ জানুয়ারি) বিকেলে তাকে দক্ষিণ পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অভিযোগ করে জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে মো. আলাউদ্দিন প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ছাত্রীদের বিভিন্ন কৌশলে যৌন নিপীড়ন করতেন। শিক্ষার্থীদের নানা কৌশলে চাপ দিয়ে ফেইসবুক-মেসেঞ্জারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করতেন। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের তিনি প্রায় সময় অফিস রুমে ডেকে নিয়ে নানাভাবে বাজে প্রস্তাব দিতেন। কেউ তার কথায় রাজি না হলে ফেল করিয়ে দেওয়াসহ বহিষ্কারের হুমকি দিতেন। এমনকি নারী অভিভাবকরাও রেহাই পেতেন না তার দৃষ্টি থেকে। স্কুলের প্রতিটি সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট করে তিনি চেষ্টা করতেন এসব অপকর্ম ঢাকার। এসব অভিযোগ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েও কোনো ফল না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন।
স্কুলটির এক ছাত্রী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন সহ্য করেছি। স্যারের (প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন) কথা না শুনলে ফেল করিয়ে দিত। ওনার কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে যে কাজই করি না কেন, খুঁত বের করতেন। অনেক অভিযোগ করেছি, বিষয়টি সবাই জানেন। কিন্তু ভয়ে কেউ কিছু বলতেন না। এমনকি স্কুলের ম্যাডামরাও কেউ তার রুমে একা যেতেন না। আমরা আর কত সহ্য করব।’
আন্দোলনে আসা মোহাম্মদ সোলায়মান নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে এখানে পড়ত। এখন বড় মেয়েকে সদরঘাটের ওখানে একটি কলেজে ভর্তি করিয়েছি। আমার বাসা কাপাসগোলায়। কিন্তু ওই শিক্ষকের ভয়ে এখানে ভর্তি করানোর সাহস করিনি। মানসম্মানের ভয়ে কাউকে কিছু বলার সাহস করিনি এতদিন। আজ যখন মেয়েরা দাঁড়িয়েছে, তাই আমরাও তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছি।’
এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনকে কোনো অভিযোগ করেছেন কিনা জানতে চাইলে অভিভাবকরা জানান, আমরা জেনেছি, ২০১৩ সালে ৯ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে যৌন হয়রানির অভিযোগে আলাউদ্দিনকে বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু চসিক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ২০১৯ সালে তিনি আবার স্বপদে ফিরে এসেছেন। এরপরও আমরা অভিযোগ করেছি। অভিযোগের পর তিনি বিভিন্ন প্রভাবশালীর সঙ্গে তার তোলা ছবি দেখিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন।
এ নিয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘আপত্তিকর’ কথোপকথনের স্ক্রিনশটের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেউ আমাকে সালাম দিলে আমি কি তার উত্তর দেব না?’ এরপর তিনি আর কথা বলতে রাজি হননি। গতকাল সকাল ১০টা থেকে আন্দোলন শুরু হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে দুপুর দেড়টার দিকে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর মোস্তফা টিনু পুলিশের সহায়তায় আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে অভিযুক্ত শিক্ষক আলাউদ্দিনকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নিরাপত্তা বলয়ে স্কুল থেকে বের করে আনেন।
জানা যায়, সর্বশেষ ২৫ ডিসেম্বর চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিনের যাবতীয় কর্মকা- ও অসদাচরণের কথা উল্লেখ করা হয়।
এদিকে এ ঘটনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে মোহাম্মদ আলাউদ্দিনকে দক্ষিণ পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে সংযুক্তির আদেশ দেওয়া হয়েছে।