রক্ষা করতে হবে ওজোনস্তর  - দৈনিকশিক্ষা

রক্ষা করতে হবে ওজোনস্তর 

সাধন সরকার, আমাদের বার্তা |

আজ ১৬ সেপ্টেম্বর ‘আন্তর্জাতিক ওজোন স্তর সুরক্ষা দিবস’। ওজোন স্তরের ক্ষয় ও তার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী গণসচেতনতা তৈরিতে প্রতি বছর দিবসটি পালন করা হয়। মূলত ‘ভিয়েনা প্রটোকলের’ মাধ্যমে ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে এ সংকটের সূত্রপাত। অতঃপর ‘মন্ট্রিল প্রটোকলের’ মাধ্যমে ওজোন স্তরের ক্ষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে একটা আইনি কাঠামোয় নিয়ে আসা হয়। জীববৈচিত্র্যে ভরা আমাদের এই পৃথিবী। ওজোন স্তর এই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের এমন একটি স্তর যেখানে তুলনামূলক বেশি মাত্রায় ওজোন গ্যাস থাকে। এই স্তর প্রধানত স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের নিচের অংশ। এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০ থেকে ৫০ কিলোমিটার ওপরে অবস্থিত। বায়ুমণ্ডলের ওজোনের প্রায় ৯০ শতাংশ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। ফরাসি পদার্থবিদ চার্লস ফ্যাব্রি ও হেনরি বুইসন ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে ওজোন স্তর আবিষ্কার করেন। ওজোন স্তর সূর্য থেকে বিকিরিত হয়ে আসা অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পৃথিবী ও তার জীবজগৎকে রক্ষা করে চলেছে।

সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির ৯৯ শতাংশ শোষণ করে নেয় এই ওজোন স্তর। দুঃখের বিষয়, মনুষ্য কারণসহ অন্যান্য কারণে গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবে দিন দিন ক্ষয়ে যাচ্ছে এই ওজোন স্তর! যার ফলে তৈরি হচ্ছে ওজোন হোল বা গর্ত। ক্ষয়িষ্ণু ওজোন স্তর রক্ষায় ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে গৃহীত ভিয়েনা কনভেনশন এবং পরবর্তী সময় ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ সেপ্টেম্বর গৃহীত মন্ট্রিল প্রটোকল পৃথিবীর প্রাণমণ্ডল রক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে। ২০৪০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ মন্ট্রিল প্রটোকল অনুযায়ী ক্ষতিকর সব গ্যাসের নিগর্মন বন্ধ হওয়ার কথা রয়েছে। ওজোন স্তর সংরক্ষণে বিশ্বব্যাপী গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের ১৬ তারিখ পালিত হয়ে আসছে-‘বিশ্ব ওজোন স্তর সংরক্ষণ দিবস’।  

ভিয়েনা কনভেনশনের আওতায় ওজোন স্তর ক্ষয়ের দায়ী দ্রব্যগুলো ব্যবহার নিষিদ্ধ বা সীমিত করার জন্য ওজোন স্তর ধ্বংসকারী পদার্থের ওপর মন্ট্রিল প্রটোকল গৃহীত হয়। প্রটোকল অনুযায়ী সদস্যদেশগুলো ওজোন স্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যসমূহ যেমন ক্লোরোফ্লোরোকার্বন (সিএফসি) হ্যালন- কার্বন টেট্রাক্লোরাইড, মিথাইল ক্লোরোফর্ম, মিথাইল ব্রোমাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, হাইড্রোব্রোমোফ্লোরোকার্বন ইত্যাদির ব্যবহার ও উৎপাদন সীমিত ও নিষিদ্ধ করতে সম্মত হয়। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ মন্ট্রিল প্রটোকলে স্বাক্ষর করে। তাই বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব দেশকে  ওজোন স্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যসমূহের ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা ও এসব দ্রব্যের বিকল্প ব্যবহার নিশ্চিত ও সহজ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কিছুটা প্রাকৃতিক ও বেশিরভাগই মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে গ্রিনহাউস গ্যাসের উৎসারণ হচ্ছে এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ধীরে ধীরে ওজোন স্তর ক্ষয় হওয়াসহ দেখা দিচ্ছে নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ক্ষতিকর রশ্মি থেকে প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতকে রক্ষা করে আসছে ওজোন স্তর। ওজোন স্তর অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে। তিন ধরনের অতিবেগুনি রশ্মির মধ্যে জীবজগতের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক অতিবেগুনি রশ্মি হলো ‘সি’। মূলত এই রশ্মিটির কারণে পৃথিবী সৃষ্টির অনেক পরেও জীবের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে আরো অনেক পরে আজ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে অক্সিজেন ও ওজোন অণুর সাম্যবস্থা গড়ে ওঠার ফলে পৃথিবীতে প্রাণের সন্ধান পাওয়া যায়। তথ্য মতে, এক পরমাণু ক্লোরিন এক লাখ ওজোন অণুকে ধ্বংস করে দিতে পারে। ওজোন স্তরের যেসব অঞ্চলে ওজোন অণুর বিনাশ ঘটছে সে সব অঞ্চলে ওজোন স্তর হালকা হয়ে হোল বা গর্ত তৈরি হচ্ছে। গ্রিনহাউস গ্যাস ওজোন স্তরে গিয়ে এই স্তরকে ফুটো করে ফেলছে।

দিনে দিনে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বনজ সম্পদ হ্রাস পাচ্ছে, প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে। মানুষের আয়ু বাড়লেও অল্প বয়সে মানুষ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যদি ওজোন স্তরের মাত্রাতিরিক্ত ক্ষয় হতে শুরু করে তাহলে জীবজগতের জন্য ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে চলে আসবে। এটি সমগ্র জীবজগতের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। যেমন প্রাণীদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। চোখের ছানি, ত্বকের ক্যান্সার, এবং অন্যান্য নতুন নতুন রোগের উদ্ভব ঘটবে। এই রশ্মি খাদ্যশস্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। উদ্ভিদের পাতার রোগ বৃদ্ধি করবে। ফসলের রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণকে বাড়িয়ে দিবে। তথ্য মতে, পৃথিবীতে এক পঞ্চমাংশ অন্ধ রোগী ও নব্বই শতাংশ কর্কট রোগের কারণের জন্য দায়ী অতিবেগুনি রশ্মি। এই রশ্মির প্রভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সন্তানের জন্ম হয়ে থাকে। আর এত সব রোগ বেশি হয়ে থাকে পৃথিবীর উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে। এক কথায়, এই রশ্মির প্রভাবে প্রাণীজগতের অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হবে। যদিও এর জন্য দায়ী পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো। পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তন সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে এই ওজোন স্তর। ওজোন স্তরের ক্ষয় সামুদ্রিক শৈবাল ও প্লাংকটনসহ সামগ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণীর ওপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলছে। এ কথা মনে রাখা উচিত যে, উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতে বসবাসকারী সবারই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করতে ওজোন স্তরের ক্ষয় কমবেশি নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। ক্লোরোফ্লোরোকার্বন প্রধানত আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রপাতি, রেফ্রিজারেটর, অ্যারোসল, অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র, কম্পিউটার ও অন্যান্য যন্ত্রের সার্কিটে পরিষ্কারক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এক কথায় বলতে হয়, আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম থেকে ওজোন স্তর ধ্বংসকারী বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ উদ্গিরণ হচ্ছে। উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের বাস্তুসংস্থান রক্ষায় ওজোন স্তরের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। উন্নত দেশগুলোর শিল্পায়ন ও অতিবিলাসী জীবনযাপনের কারণে দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে আমাদের এই পৃথিবী। তাই ওজোন স্তর সংরক্ষণে প্রত্যেক দেশের সমান দায়িত্ব রয়েছে।

গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন যাতে কম হয় সে ব্যাপারে প্রত্যেক দেশকে মন্ট্রিল প্রটোকল মেনে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর দিকে নজর দিতে হবে। পৃথিবীর প্রায় ৬০ ভাগ কার্বন নিঃসরণ করে থাকে আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, ভারত, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। ওজোনস্তর রক্ষায় এসব দেশসমূহকে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে এনে বিকল্প জ্বালানির সন্ধান করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির প্রয়োগ কমিয়ে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। সূর্যশক্তি, বায়ুশক্তি, পানিশক্তির মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে। পৃথিবীতে আজ সর্বত্রই প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েই চলেছে। দৃশ্যমান হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। তাই আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও বাসযোগ্য সবুজ পৃথিবী রেখে যেতে হলে ওজোন স্তর রক্ষায় শিল্পোন্নত দেশসমূহকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। এ ব্যাপারে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওজোনস্তর রক্ষায় ও সামগ্রিক পরিবেশ সংরক্ষণে আরো বেশি উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এ ছাড়া বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা রোধ ও ওজোন স্তর ধ্বংসকারী দ্রব্যের ব্যবহার কমাতে মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।

লেখক: শিক্ষক

ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ঘেরাও শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ঘেরাও শিক্ষার্থীদের ঘুষকাণ্ডে গণধোলাই খাওয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেই কর্মকর্তা বললেন সব কয়টারে গু*লি কইরা মা*রমু - dainik shiksha ঘুষকাণ্ডে গণধোলাই খাওয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেই কর্মকর্তা বললেন সব কয়টারে গু*লি কইরা মা*রমু কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাবি ছা*ত্রীর মৃত্যু: বিচারের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা - dainik shiksha জাবি ছা*ত্রীর মৃত্যু: বিচারের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা পাঁচ বিসিএসে ১৮ হাজার প্রার্থী নিয়োগ দেবে সরকার - dainik shiksha পাঁচ বিসিএসে ১৮ হাজার প্রার্থী নিয়োগ দেবে সরকার পবিপ্রবিতে র‍্যা*গিংয়ে হাসপাতালে ৩ শিক্ষার্থী, বহি*স্কার ৭ - dainik shiksha পবিপ্রবিতে র‍্যা*গিংয়ে হাসপাতালে ৩ শিক্ষার্থী, বহি*স্কার ৭ কওমি-আলিয়া মাদ্রাসার ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে - dainik shiksha কওমি-আলিয়া মাদ্রাসার ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038139820098877