রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় নির্মাণাধীন স্কুল ভবনের রড চুরির অভিযোগে এক স্কুলছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মোহাম্মদপুরের আজিজ মহল্লায় বরাবো মোহনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মো. আকাশ (১৪) স্থানীয় হাজী চিনু মিয়া স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নির্মাণাধীন ভবনের সামনে আকাশ কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে সিগারেট খেতে আসে। এ সময় শ্রমিকরা চোর চোর বলে তাদের ধাওয়া করে। অন্যরা পালিয়ে গেলেও আকাশ শ্রমিকদের হাতে ধরা পড়ে। এরপর স্কুলের ভেতর নিয়ে ঠিকাদারের উপস্থিতিতে তাকে শ্রমিকরা রাতভর রড দিয়ে পেটায়। একপর্যায়ে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন আকাশের ফুপুকে মোবাইল ফোনে কল করে তাকে বাসায় নিয়ে যেতে বলে মারধরকারীরা। বাসায় নেওয়ার কিছুক্ষণ পর আকাশ মারা যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এর আগেও মাদকাসক্ত শ্রমিকরা এলাকার বেশ কয়েকজনকে চোর বলে ধাওয়া করেছিল। এ বিষয়ে ঠিকাদারকে বললেও তিনি কোনো কর্ণপাত করেননি। বরং উলটো এলাকার মানুষকে তিনি হুমকিধমকি দেন। আকাশের ফুপু মালতী বেগম জানান, রাতে আকাশ বাসায় ফেরেনি। বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে মোবাইল ফোন থেকে আমাকে ফোন করে জানায়, চুরির সময় আপনার ছেলেকে আমরা আটক করে বেঁধে রেখেছি। একটা রিকশা নিয়ে এসে চুপচাপ স্কুলের ভেতর থেকে তাকে বাসায় নিয়ে যান। এ বিষয়ে কেউ জানলে আপনার খবর আছে। পরে স্কুলের সামনে থেকে তাকে অসুস্থ অবস্থায় বাসায় নিয়ে আসি। গোসল করালে সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। পানি পানের কিছুক্ষণ পরই সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আকাশের বোনজামাই লিখন মিয়া জানান, রাতে বাসা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়ে আকাশ আর ফেরেনি। আমরা ভেবেছিলাম-হয়তো বন্ধুর বাসায় আছে, সকাল হলেই চলে আসবে। কিন্তু ভোরের দিকে আমার ফুপুশাশুড়িকে ফোন করে বলা হয়-কাউকে কিছু না জানিয়ে চুপচাপ এসে আকাশকে নিয়ে যেতে। তখন সে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে কাতরাচ্ছিল। বাসায় নিয়ে দেখি তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় জখমের চিহ্ন।
জানা যায়, স্কুল ভবনটির নির্মাণকাজ করছে আক্কাছ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড কোম্পানি। বারবার যোগাযোগ করেও কোম্পানির কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মৃত্যুঞ্জয় দে সজল জানান, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, তা তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।