দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রাখতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের একাংশ। প্রয়োজন হলে এর জন্য আইনের সংস্কারের দাবিও তোলেন তারা। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দীর্ঘ চিঠি পড়ে শোনান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাধারণ শিক্ষার্থী ব্যানারে কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, বুয়েট ক্যাম্পাসে এই চার বছর আমরা নির্বিঘ্নে কাটিয়েছি, সেখানে ছায়া হয়ে অভয় দিলেন আমাদের শিক্ষকেরা। আমাদের মতো দেশ জুড়ে লাখো শিক্ষার্থী এমন একটা ক্যাম্পাসের স্বপ্ন নিয়েই বাড়ি যাবেন যেখানে তাদের ওপর অকারণে জুলুম হবে না, নির্যাতিত হতে হবে না, দিন-রাত কারো ভয়ে থাকতে হবে না, বাবা মাকে দুশ্চিন্তায় চোখের পানি ফেলতে হবে না।
আরো পড়ুন : স্মার্ট ছাত্র রাজনীতির মডেল প্ল্যাটফর্ম হবে বুয়েট: ছাত্রলীগ
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তারা বলেন, চার বছর আগে আপনার দৃঢ় এবং দ্রুত হস্তক্ষেপে আমরা নতুন করে এই ক্যাম্পাসে বাঁচতে শিখেছি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এই ছোট্ট একটা চাওয়ার কারণে আমরা প্রতিনিয়ত হুমকি পাচ্ছি। আমরা আর একবার সেই অন্ধকার দিনগুলোর সাক্ষী হতে চাই না।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ভিসি এবং সব শিক্ষকের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। আমরা জানি তারা তাদের সন্তানদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় সর্বদা সচেষ্ট আছেন এবং থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাছে সবিনয়ে অনুরোধ আপনি আমাদের পাশে দাঁড়ান। আপনি সবসময়ে শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছেন, এই দুর্দিনে আপনি আমাদের ফেলে যাবেন না।
প্রধানমন্ত্রী প্রতি আকুতি জানিয়ে চিঠিতে শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী, আপনার প্রতি আমাদের আকুল আবেদন, বুয়েটকে নিয়ে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে পলিসি গ্রহণ করেদিলেন, তার বাস্তবায়ন করুন। বুয়েটকে ছাত্ররাজনীতির বাইরে রাখুন, প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে হলেও। কারণ, সুবিচারের জনাই আইনের সৃষ্টি। আমাদের অনুরোধ, আপনি দয়া করে আমাদের ক্যাম্পাসে আসুন। ছাত্ররাজনীতিহীন বুয়েট গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের জন্য যে আদর্শ ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে, সেটা আমরা আপনাকে দেখাতে চাই। আমরা আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা প্রযুক্তিবিদ্যায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পেছনে ফেলে দেবো।
তারা আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী বুয়েটের পড়াশোনার পরিবেশের গুরুত্ব, দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বুয়েটের প্রকৌশলী এবং দক্ষ প্রযুক্তিবিদের গুরুত্ব বঙ্গবন্ধুর চিন্তায় প্রাধান্য পেয়েছে সবসময়। আপনারা সবাই জানেন দেশের জনা এই সময়ে মেধাবী দক্ষ প্রকৌশলীর কতোটা গুরুত্ব।
আমরা উন্নত বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখি, তারা তাদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার, কাঠামোগত উন্নয়নকে নিরবচ্ছিন্ন করার লক্ষে বিশেষভাবে তাদের প্রকৌশলীদের সমৃদ্ধ করার ব্যবস্থা করছে। কিন্তু বলতে ভীষণ কষ্ট হয় অনেক কষ্টে পাওয়া সেই আকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ এবং ভবিষ্যৎ প্রকৌশলীরা ছাত্ররাজনীতির থাবা থেকে নিজেকে রক্ষার যুদ্ধ করছে। এই বিদ্যাপীঠে ঠিকমত গড়াশোনা ও গবেষণায় মনোনিবেশ করার পর কোনো ছাত্রের পক্ষে রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নেয়ার সময় দেয়া সম্ভব নয়। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলছি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসার মাটিতে দাঁড়িয়ে এই ভবিষ্যৎ প্রকৌশলীদের দিনের পর দিন রাস্তায় থাকার কথা নয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বুয়েটকে ঘিরে আমাদের জাতির জনকের যে লক্ষ্য ছিলো, তাকে বাস্তবায়ন করা হোক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন বুয়েটের প্রকৃতি ভিন্ন। তাই তিনি নিজে রাজনীতির আওতা থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বাইরে রেখেছিলেন।
সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে তারা বলেন, তারই গড়ে তোলা রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা বুয়েটের মতো বিশেষায়িত একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে যেকোনো মূল্যে রাজনীতির আওতায় আনার কথা বলে, আমরা বিশ্বাস করি তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও সিদ্ধান্তকে অপমান করা হয়।