দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : রাজনীতি বিশ্লেষক, কলামিস্ট ও শিল্পপতি মনোয়ারুল হক আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক তুখোড় এই ছাত্রনেতার মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিলো ৭১ বছর। গতকাল বুধবার সন বৃহস্পতিবার আজিমপুর কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন হবে বলে জানা গেছে।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর মগবাজারে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হসপিটালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে মগবাজারের সেঞ্চুরি টাওয়ারে মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তি, মরহুমের আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহীরা উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় সেঞ্চুরি টাওয়ারে দ্বিতীয় জানাজা এবং দুপুর আড়াইটায় ঢাকা ক্লাবে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে আজিমপুর কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হবে।
মনোয়ারুল হক ঢাকা ক্লাব ও গোল্ডেন হোমস সোসাইটি লিমিটেডের সদস্য ছিলেন। বহু গুণে গুণান্বিত এই সমাজহিতৈষী এক ছেলে, স্ত্রী ও অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন। তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে গোল্ডেন হোমস সোসাইটি।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ অসংখ্য শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিক এবং দেশের একমাত্র শিক্ষাবিষয়ক ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম ও প্রিন্ট জাতীয় দৈনিক আমাদের বার্তা পরিবার।
তিনি শিক্ষাসহ নানা বিষয় নিয়ে পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করতেন। সময়ের স্বর, নেতা, টুকে রাখা কথামালাসহ পাঠকপ্রিয় কয়েকটি বইয়ের লেখক তিনি।
উল্লেখ্য, পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝিতে পিরোজপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মগ্রহণকারী লেখক মনোয়ারুল হক-এর বেড়ে ওঠা ঢাকা শহরে। প্রাথমিক-মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা ঢাকা শহরে। তদানীন্তন সেন্ট্রাল গভমেন্ট স্কুল তারপরে জগন্নাথ এবং নটরডেম কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করেন।
১৯৭০-এর গণ-আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কিশোর বয়সের সম্পৃক্ততা এবং ঘটনাবলি দ্বারা নানানভাবে প্রভাবিত- মনোয়ারুল হকের মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ১৯৬৯- এর ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় বন্ধুদের সঙ্গে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলো। ১৯৬৯-১৯৭১ সময়কাল জীবনের ওপরের প্রভাব সৃষ্টি করেছিরো ফলে মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক ছাত্র থাকাকালীন সময়ে গভীরভাবে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন পরিণতিতে নিয়মিত শিক্ষাজীবনে কিছুটা ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় এবং এই পরিবেশ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি না হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭৫ খি্রষ্টাব্দে ছাত্রজীবন শুরু করেন।
প্রথমদিকে নিজেকে নিয়মিত ছাত্র হিসেবে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক কোর্সে মনোযোগের সঙ্গে অংশ নেয়া শুরু করেন। কিন্তু ১৯৭৭- এর সামরিক সরকার দেশে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে পুনর্বহালের প্রক্রিয়া হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানের সামরিক জেনারেল টিক্কা খানের মনোনীত উপাচার্য ডক্টর আব্দুল বারীকে ১৯৭৭- এর জুন মাসে পুনর্নিয়োগ দিলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর প্রবল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
ফলে গড়ে ওঠে উপাচার্য আব্দুল বারীর বিরুদ্ধে আন্দোলন। বারীর অপসারণের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দশ-বারোজন ছাত্রকে সে সময়ের সামরিক শাসক ১৯৭৮/৭৯ খ্রিষ্টাব্দের দীর্ঘ সময় বিনা বিচারে কারাগারে আটক রাখে- মনোয়ারুল হক তাদেরই একজন।
বছরের অধিককাল কারাগারে আটক থাকার পরে কারাগার থেকে থেকে মুক্তি পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পদার্থবিজ্ঞান ও আইন অনুষদের ছাত্র হিসেবে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।
১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করে রাজনৈতিক জীবনের সংশ্লিষ্টতা পরিহার করে ব্যক্তি জীবনে প্রবেশ করেন এবং মনোয়ারুল হক পেশা হিসেবে ব্যবসা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত হন।
দীর্ঘ সময় ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জীবন এবং সমাজের নানান ঘটনার সাক্ষী হিসেবে আহরিত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে লিখে গেছেন কয়েকটি বই।