বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন একাংশের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) সংসদের ১১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের কাউন্সিল শেষে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ দিন সন্ধ্যায় নতুন কমিটির দপ্তর সম্পাদক মুন হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। তবে, নতুন এই কমিটির সভাপতি ও সহকারি সাধারণ সম্পাদক ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, নতুন কমিটিতে মাসুদ কিবরিয়া সভাপতি এবং পরমা মোস্তফা সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন। কমিটিতে থাকা অন্যরা হলেন- সহসভাপতি মেহেদী হাসান, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মুক্তাদির করিম কুয়াশা, সাংগঠনিক সম্পাদক তাওফিক ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ মেহের, দপ্তর সম্পাদক মুন হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক লাবিব হক। এ ছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছে শাকিলা খাতুন, মিনহাজ হাবিব ও গোলাম মোস্তফা। চারটি সদস্যপদ খালি রাখা হয়েছে যা পরবর্তীতে কাজের মধ্য দিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে পূরণ করা হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রক্তে আমার সাগর দোলার ছন্দ চাই, অশুভের সঙ্গে আপোষবিহীন দ্বন্দ্ব চাই- এই স্লোগানকে ধারণ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের ৩২ তম কাউন্সিল শনিবার বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শাকিলা খাতুন। কাউন্সিল অধিবেশন থেকে সর্বসম্মতিক্রমে মাসুদ কিবরিয়াকে সভাপতি, পরমা মোস্তফাকে সাধারণ সম্পাদক এবং তাওসিফ ইসলামকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান কেন্দ্রীয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ।
এ দিকে নতুন কমিটির সভাপতি মাসুদ কিবরিয়া ও সহকারি সাধারণ সম্পাদক মুক্তাদির করিম কুয়াশা রাবি শাখা ছাত্রলীগের কর্মী বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) জাতীয় পরিষদের সদস্য ও রাবি সংসদের (একাংশ) যুগ্মআহ্বায়ক রাকিব হোসেন। মাসুদ কিবরিয়া ছাত্রলীগের শোডাউনে ছিলেন- এমন কয়েকটি ছবিও এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এছাড়া, একই অভিযোগ করছেন রাবি ক্যাম্পাসে কর্মরত সাবেক ও বর্তমান একাধিক সাংবাদিক।
রাকিব হোসেন বলেন, মাসুদ কিবরিয়া ছাত্রলীগের কর্মী ছিল। তিনি রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী ছিল। তিনি একসময় শিবিরের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিল বলে জানা যায়। গত ১৬ জুলাই বঙ্গবন্ধু হলে ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতাকর্মীদের মত মাসুদ কিবরিয়ার রুমও শিক্ষার্থীরা ভেঙেছিল। মুক্তাদির করিম কুয়াশাও ছাত্রলীগের কর্মী। তিনি ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। আমরা মনে করি, এটা একটা পরিকল্পিত এবং ভুয়া কমিটি। এটার সঙ্গে একটা গোষ্ঠী জড়িত। তারা ছাত্রলীগের প্রত্যাবাসন করতে চাচ্ছে। এটা ছাত্র ইউনিয়নের কমিটি না।
তবে, এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন ছাত্র ইউনিয়ন রাবি সংসদের নতুন ঘোষিত কমিটির সভাপতি মাসুদ কিবরিয়া।
তিনি বলেন, আমরা কখনোই ছাত্রলীগ করি নাই। তারা একটা বিতর্ক তৈরি করার চেষ্টা করছে। এই ক্যাম্পাসে একটা সময় ছাত্রলীগের দ্বারস্থ হয়েই হলে সিট নিতে হতো। হলের প্রভোস্টরাই অনেক সময় ছাত্রলীগ নেতাদের অনুমতি নিয়ে আসতে বলতো। সেই জায়গা থেকে আমাদের দুই-একজন হয়তোবা ছাত্রলীগের কাছে গেছে হলের সিটের জন্য।
এছাড়া, ছাত্রলীগের কোনো মিছিল-মিটিংয়ে গিয়েছে বা, ছাত্রলীগের মতাদর্শ বিশ্বাস করে- এমন কেউ আমাদের কমিটিতে নেই। আর আমি মতিহার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। এ বিষয়েও ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন নামে বর্তমানে দুইটি সংগঠন রয়েছে। দুই পক্ষই নিজেদের বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বলে পরিচয় দিয়ে থাকে। একটা পক্ষের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাগীব নাঈম ও সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি। আরেকটা অংশের সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা এবং সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন শুভ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাগীব নাঈম বলেন, আমাদের রাবি সংসদের আজকে কোনো নতুন কমিটি গঠন করা হয়নি। সেখানে আমাদের একটি আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। আমাদের কেন্দ্রীয় সংসদে আলিফ মাহমুদ নামে কোনো সাংগঠনিক সম্পাদক নেই। আর শাকিলা খাতুন কয়েকবছর আগে আমাদের রাবি সংসদে সভাপতি ছিলেন।
আরেকটা অংশের কেন্দ্রীয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন থেকে কিছু ব্যক্তি বের হয়ে গিয়েছেন। তারা নিজেদের ছাত্র ইউনিয়ন বলে দাবি করেন।