রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক সভাপতি ও সাময়িক অব্যাহতি পাওয়া অধ্যাপক ড. মুসতাক আহমেদের বিরুদ্ধে একই বিভাগের এক কর্মকর্তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত বুধবার নগরের মতিহার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ওই কর্মকর্তা।
সাধারণ ডায়েরি করা ওই কর্মকর্তার নাম রেজাউল করিম হাওলাদার (৫৮)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের উপ-রেজিস্ট্রার পদে কর্মরত আছেন।
জিডিতে রেজাউল করিম হাওলাদার লিখেছেন, অধ্যাপক মুসতাক আহমেদের সভাপতির দায়িত্ব হস্তান্তরের কয়েকদিন পর (মে মাসে) বিভাগের অফিস কক্ষে ঢুকে কয়েকজন সহকর্মীর সামনে আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন যে, 'তোকে যদি জেলের ভাত খাওয়াতে না পারি, তবে আমার নাম মুসতাক না। তুই কী পেয়েছিস?'
এরপর গত বুধবার (২৩ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে অধ্যাপক মুসতাক আহমেদের স্ত্রী নুসরাত পারভীন শান্তা বিভাগের অফিসে আসেন। তিনি আমার হাতে স্যারের ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসের একটি পত্র দিয়ে বলেন, ‘আপনার স্যার আপনাকে সভাপতির কাছ থেকে এটি রিসিভ করিয়ে দিতে বলেছেন।’ তখন আমি তাকে জানাই, ‘ভাবি, এটাতো সভাপতি স্যারকে লেখা পত্র। আর সভাপতি স্যার আজ ছুটিতে আছেন। আপনি আজকে রেখে যান। সভাপতি স্যার অফিসে এলে আমি তাকে দিয়ে রিসিভ করিয়ে পিয়নের মাধ্যমে রিসিভ কপি পাঠিয়ে দেবো।’
এরপর ভাবি আমার কাছে জানতে চান, 'বিভাগে টাকা-পয়সার ব্যাপারে কী হয়েছে। আপনাদের স্যারতো সব টাকা পরিশোধ করে দিয়েছেন।' তখন আমি তাকে জানাই, বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন বকুল বলেছেন, 'সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ এ পর্যন্ত ১০ লাখ নাকি ২০ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন, তা তো আমি জানি না। তাকে সব জমার তালিকাসহ রসিদের ফটোকপি সংযুক্ত করে সভাপতি বরাবর জমা প্রদান করতে বা পাঠাতে বলবেন।' এরপর ভাবি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক এ বি এম সাইফুল ইসলাম স্যারের সঙ্গে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে অফিস ত্যাগ করেন।
জিডিতে রেজাউল করিম হাওলাদার আরও লিখেছেন, তিনি অফিস ত্যাগ করার কিছুক্ষণ পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অফিসের ল্যান্ডফোনে কল এলে আমি নিজেই তা রিসিভ করি। ফোন রিসিভ করার পর ফোনের অপর প্রান্ত থেকে অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ আমার কণ্ঠ শোনা মাত্রই আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন। আপাতত আমি কোনো আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক না। এ অবস্থায় আমি আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে অধ্যাপক মুসতাক আহমেদের মুঠোফোন নম্বরে কল দিলে তার স্ত্রী রিসিভ করে জানান, ড. মুসতাক আহমেদ অসুস্থ্য। তিনি কথা বলতে পারবেন না।
তিনি বলেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের একটা অংশ আমার স্বামীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এগুলো তাদের পূর্বপরিকল্পিত কাজ। আমরা সবকিছু আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছি। বিচারে যা হয় হবে।
এ বিষয়ে নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মালেক বলেন, ‘অভিযোগপত্রটি পেয়েছি। অভিযোগকারী ব্যক্তি পরবর্তী সময়ে যেমন চাইবেন, সেভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, গত ১ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক মুসতাক আহমেদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, ছাত্রলীগ নেতাকে ভুয়া প্রত্যয়নপত্র প্রদান, একাডেমিক পরিসরে দুর্নীতিসহ নানান অভিযোগ তুলে অপসারণের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন বিভাগের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় অধ্যাপক মুসতাক আহমেদকে বিভাগের সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।