'তোমাকে দেখে তো হতদরিদ্র বলে মনে হয় না। তোমার বাবা এতদিন তোমাকে বাইরে রাখতে পেরেছে, আর কিছুদিন পারবে বলে আমার মনে হয়। তুমি একটু কষ্ট করে মেসেই থাকো। আগে ৫টা জামা কিনলে এখন ২টা কিনবা।'
চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী হয়েও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রহমতুন্নেছা হলে আবেদন করে সিট না পাওয়ায় হল প্রাধ্যক্ষের কাছে গেলে ওই ছাত্রীকে এমন পরামর্শ দেন অধ্যাপক ইসমাত আরা বেগম।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রীকে তাহমিদা নাসরিন কনক নিজেই এ অভিযোগ করেন।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রণীত আবাসিক হলে সিট বরাদ্দের নীতিমালা অনুসারে জ্যেষ্ঠতা ও একাডেমিক ফলাফলের ভিত্তিতে তার সিট নিশ্চিতভাবে হবার কথা থাকলেও তা হয়নি বলে দাবি কনক।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর আবাসিকতার জন্য হলে আবেদন আহবান করা হলে বিধি মোতাবেক আবেদন করি ও সাক্ষাৎকার দেই। সম্প্রতি হলে আবাসিকতা বা সিট বরাদ্দের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রণীত হলে সিট বরাদ্দের নীতিমালা অনুসারে জ্যেষ্ঠতা ও একাডেমিক ফলাফলের দুরূহ গাণিতিক হিসাবনিকাশেই হোক, কিংবা ন্যায়-ন্যায্যতার অন্য যেকোনো মানদণেইই হোক, আমার সিট নিশ্চিতভাবেই হবার কথা। কিন্তু, তা হয়নি।
তিনি বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী জেষ্ঠ্যতায় ৩৯, মেধা বিবেচনায় ৫০ ও সহ-শিক্ষা কাজে ৩ মিলে আমার সর্বমোট স্কোর হয় ৯২। প্রকাশিত ফলাফল বিবেচনা করলে যা সর্বোচ্চ স্কোর হবার কথা। হলে ৮৪ নম্বর পেয়ে অন্য বিভাগের জুনিয়র শিক্ষার্থীরা আসন পেলেও আমাকে মেরিট লিস্টে দেখানো হয়নি।
হল প্রাধ্যক্ষ অসহযোগিতামূলক আচরণ ও অপমানজনক মন্তব্য করেছে দাবি করে কনক জানান, এ বিষয়ে কথা বলতে সোমবার সকাল ১০টায় হলে গিয়ে তিন ঘণ্টা অবস্থান করেও প্রাধ্যক্ষের দেখা পাইনি। হলের অফিসে প্রাধ্যক্ষের যোগাযোগ নম্বর চাইলেও দেয়নি। পরে বিকেল ৫টায় তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়। এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি বলেন, তুমি কি আগের প্রশাসনের প্রতিনিধিত্ব করতে এসেছো? এর আর্থিক সমস্যার কথা জানিয়ে হলে সিটের জন্য আবেদনপত্র দিতে গেলে প্রাধ্যক্ষ বলেন, ‘তোমাকে দেখে তো হতদরিদ্র মনে হয় না। তোমার বাবা এতদিন তোমাকে বাইরে রাখতে পেরেছে, আর কিছুদিন পারবে। তুমি একটু কষ্ট করে বাইরেই থাকো। আগে ৫টা জামা কিনলে এখন ২টা কিনবা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রহমাতুন্নেসা হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ইসমাত আরা বেগম বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুসরণ করে সম্পুর্ণ স্বচ্ছতার সাথে সিটের বণ্টন করেছি। ওই শিক্ষার্থী আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ দিয়েছেন এগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট। এ গুলো সব আমাকে হয়রানির উদ্দেশে করা হচ্ছে।
আর্থিক অবস্থা ও পোশাক নিয়ে মন্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, সাক্ষাৎকারের সময় শিক্ষার্থীদের অনেককেই এ কথা গুলো বলে তাদের অবস্থা জানার চেষ্টা করেছি। ছাত্রদের অপমানিত করার উদ্দেশে কিছু বলিনি।