রিট থেকে নাম প্রত্যাহারের ঘোষণা ঢাবি ছাত্রের - দৈনিকশিক্ষা

রিট থেকে নাম প্রত্যাহারের ঘোষণা ঢাবি ছাত্রের

দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি |

সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল রেখে হাইকোর্টের রায় বাতিলের আপিল শুনানিতে অংশ নিতে চেম্বার আদালতে আবেদনকারী ঢাবি শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান রিট থেকে নাম প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছেন। 

গত মঙ্গলবার (৯ জুলাই) প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে রিট করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আল সাদী ভূঁইয়া।

আহনাফ সাঈদ খান

পরদিন বুধবার শুনানি শেষে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংক্রান্ত বিষয়বস্তুর ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়ে সব পক্ষকে এ স্থিতাবস্থা মেলে চলতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

এরপর আদালত আগামী ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানি ও আদেশের তারিখ রাখেন।

আদালতে দুই শিক্ষার্থীর পক্ষে শুনানি করেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এম হারুনুর রশীদ খান।

তবে শুরু থেকেই তবে কোটাবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেলে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে রিট থেকে নিজের নাম প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন আহনাফ সাঈদ খান। এ বিষয়ে তিনি আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বলেও জানান।

আহনাফ তার দীর্ঘ ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, 'আপনারা জানেন গত ৯ জুলাই আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দুইজন শিক্ষার্থী হাইকোর্টের বাতিল করে দেয়া ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের পরিপত্রের রায়ের বিপক্ষে আপিল বিভাগে রিট করি। এখানে আমরা আপিল করি ভুক্তভোগী এবং সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি হিসেবে।

একই রায় এর বিরুদ্ধে পূর্বে রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা একটি আপিল এর শুনানি হয় গত ৪ জুলাই যেখানে হাইকোর্টের বাতিল করে দেয়া পরিপত্রটি স্থগিত না করে পরবর্তী শুনানির জন্য অপেক্ষায় থাকতে বলা হয়। সর্বশেষ ১০ জুলাই আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় এর স্থিতাবস্থা জারি করেন। এখানে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয় যে আমরা আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে রিটটি করি অথচ আমি নিজে সরাসরি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি এবং ৫ জুন যখন হাইকোর্ট পরিপত্রটি বাতিল করে তখন থেকেই বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এবং কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার চেয়ে আমি কথা বলে আসছি।'

তিনি আরো বলেন, 'যদিও আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল আদালতে এ ব্যাপারে যাওয়া হবে না এবং বৈষম্য মূলক কোটার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ লড়াইটি রাজপথে হবে। এখানে আমি ভেবেছিলাম ভুক্তভোগী কেউ আদালতে যাক কিংবা না যাক আদালতে চলমান আইনি প্রক্রিয়া নিজস্ব গতিতেই চলবে, তাই ভুক্তভোগীরা এখানে আপিল করলে চলমান বিষয়টির আইনি প্রক্রিয়ায় কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের ব্যাপারে একটি শক্তিশালী গ্রাউন্ড তৈরি হবে।

পরবর্তীতে আপিল বিভাগের দেয়া স্ট্যাটাস্কো কিংবা স্থিতাবস্থা পর থেকে নানাভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে যে যেহেতু আদালতে সমাধান হয়ে গেছে তাই আর আন্দোলনের কোন যৌক্তিকতা নেই। অথচ না এখানে হাইকোর্টের পরিপত্র বাতিল করে দেয়া রায়টি স্থগিত করা হয়েছে না কোটা ব্যবস্থা কোন সমাধান হয়েছে। ২০১৮ এর পরিপত্র ফিরিয়ে আনা হলেও এখানে কোটা সমস্যার কোন সমাধান হয় না কেননা ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের পরিপত্রেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কোটা বাতিল কিংবা সংস্কার কোন কিছুই পরিবর্তন করে পরিপত্রটি জারি হয়নি। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের পরিপত্র পুনর্বল করা হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক কথা প্রথাটি রয়ে যাচ্ছে। উক্ত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে জনপরিসরে এমন একটি ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে আমাদের দায়ের করা আপিলটির কারণেই আন্দোলন বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিংবা আন্দোলনের গ্রাউন্ড নষ্ট করা হয়েছে আমাদের রিট করার মাধ্যমে।'

আহনাফ আরো বলেছেন, 'সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বারবার বলা হচ্ছিল কোটা সমস্যার সমাধান আদালতেই হবে কেননা ব্যাপারটি এখন আদালতে গড়িয়েছে এখানে সরকারের আর কোন কিছুই করার নেই। গতকাল হাইকোর্টের দেয়া গত ৫ জুনের রায়টির একটি অংশ প্রকাশিত হয়েছে সেখানে হাইকোর্ট থেকে বলা হয়েছে সরকার চাইলে কোটার পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন, সংস্কার কিংবা যে কোন কিছুই করতে পারে। অর্থাৎ এই মুহূর্তে নির্ভর নির্বাহী বিভাগের একথা বলার সুযোগ থাকে না যে ব্যাপারটি পুরোটাই আদালতের বিচার প্রক্রিয়াধীন, তাই তাদের কিছুই করার নেই। বরং আদালতের মাধ্যমেই এটা স্পষ্ট হয় যে, কোটা ব্যবস্থার পরবর্তী পদক্ষেপ সরকারকেই নিতে হবে। এর ফলে আন্দোলনকারীদের দাবি অনুযায়ী এই সমস্যার সমাধান যে সরকারকেই করতে হবে এ দাবিটির সম্পূর্ণ যৌক্তিকতা আবারো প্রমাণ হলো। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী হিসেবে এবং আন্দোলনে আমার পূর্ণ সমর্থন থাকা অবস্থায় এটা আমি কোনোভাবেই চাইতে পারি না যে আমার নেয়া আইনি পদক্ষেপ কে আন্দোলনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে। তাই পুরো ঘটনাচক্রের পরিপ্রেক্ষিতে রিট থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ব্যাপারে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছি৷'

তিনি আরো বলেন, মহামান্য আদালতের রায় অনুযায়ী, চলমান আন্দোলনের প্রতি আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে৷ আন্দোলনের মাঠ থেকে এর স্থায়ী সমাধান নিয়েই পড়ার টেবিলে ফিরে আসবো আমরা।

এ বিষয়ে তিনি জানতে চাইলে আহনাফ বলেন, 'আমি ভেবেছিলাম যদি ভুক্তভোগী বা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি হিসেবে অংশগ্রহণ করি তাহলে হয়তো বা আপিল বিভাগের যে কার্যক্রমটা বা গ্রাউন্ডটা সেটা আরেকটু স্ট্রং হয়। পরবর্তীতে দেখলাম যে এই ব্যাপারটাকে ইস্যু করে আন্দোলন দমন করার একটা চেষ্টা করা হচ্ছে। নাগরিক হিসেবে সাংবিধানিক অধিকারের জায়গা থেকে শিক্ষার্থীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে এই কাজটা করি। যদিও আমি আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে করিনি। তো এই সমস্ত কারণে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে রিট আবেদনটা আমি করি সেখান থেকে আমার নামটা প্রত্যাহার করার।'

শুক্র ও শনিবার আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে, আদালত কার্যক্রম খুললে তিনি নাম প্রত্যাহার করার আইনি কাজ শুরু করবেন বলে জানান তিনি।

হামলায় মোল্লা কলেজের ৩ শিক্ষার্থী নিহত, দাবি কর্তৃপক্ষের - dainik shiksha হামলায় মোল্লা কলেজের ৩ শিক্ষার্থী নিহত, দাবি কর্তৃপক্ষের সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত নৈরাজ্যকারীদের প্রতিহত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান কাজ: সারজিস - dainik shiksha নৈরাজ্যকারীদের প্রতিহত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান কাজ: সারজিস মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! সোহরাওয়ার্দী কলেজ বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha সোহরাওয়ার্দী কলেজ বন্ধ ঘোষণা সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে অনতিবিলম্বে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করতে হবে: নুর - dainik shiksha অনতিবিলম্বে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করতে হবে: নুর কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035371780395508