বিখ্যাত ডেনিশ লেখক ও কবি হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তবে শিশু-সাহিত্যিক হিসেবে তিনি অধিক পরিচিত। রূপকথা লেখার জন্য তাকে রূপকথার জাদুকর নামে অভিহিত করা হয়।
এন্ডারসনের রূপকথার সংখ্যা ৩ হাজার ৩৮১ এর মতো। বিশ্বের ১২৫ টিরও বেশি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে তার রূপকথা। তার সবচেয়ে বিখ্যাত রূপকথাসমূহ হল ‘দ্য এমপেরর্স নিউ ক্লদস’, ‘দ্য লিটল মারমেইড’, ‘দ্য নাইটিংগেল’, ‘দ্য স্নো কুইন’, ‘দ্য আগলি ডাকলিং’, ‘থাম্বেলিনা’। তার গল্পসমূহ বেলে, নাটক, এবং অ্যানিমেটেড এবং লাইভ-অ্যাকশন চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। কোপেনহেগেনের সবচেয়ে বিস্তৃত এবং সবচেয়ে ব্যস্ত বলেভার্ডের একটি হলো ‘এইচ সি এন্ডারসন্স ব্যুলোভার্ড।
হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন ১৮০৫ খ্রিষ্টাব্দের ২ এপ্রিল ডেনমার্কের ওডেন্সে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার পিতামাতার একমাত্র সন্তান ছিলেন। অ্যান্ডারসনের বাবা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত পড়াশুনা করেছিলেন। তিনি তাকে সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি তাকে আরব্য রজনীর গল্প পড়ে শুনাতেন। অ্যান্ডারসনকে অসচ্ছল ছেলেমেয়েদের জন্য নির্মিত স্থানীয় স্কুলে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি মৌলিক শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং একজন তাঁতির ও পরে একজন দর্জির সহকারী হিসেবে কাজ করে নিজের ভরণপোষণ করতেন। চৌদ্দ বছর বয়সে তিনি অভিনেতার কাজ খুঁজতে কোপেনহেগেনে যান। চমৎকার সুরেলা কণ্ঠের জন্য রয়েল ডেনিশ থিয়েটার তাকে গ্রহণ করে, কিন্তু শীঘ্রই তার কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হয়ে যায়। থিয়েটারের একজন সহকর্মী তাকে বলেন যে তিনি এন্ডারসনকে একজন কবি ভেবেছিলেন। এই পরামর্শ গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে, এন্ডারসন লেখার ওপর মনোযোগ দিতে শুরু করেন।
অ্যান্ডারসনের রূপকথার গল্প লেখার প্রাথমিক প্রচেষ্টা ছিলো শৈশবে তিনি যেসব গল্প শুনেছেন তার পুনর্বিন্যাস। প্রথমদিকে তার মৌলিক রূপকথাসমূহ অনুবাদ করতে অসুবিধার কারণে তেমন স্বীকৃতি লাভ করেনি। ১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দে সুইডেন ভ্রমণের পর এন্ডারসন স্ক্যান্ডিনেভিজম থেকে অনুপ্রাণিত হন এবং একটি কবিতা লেখার জন্য মনঃস্থির করেন যেখানে সুইডেন, ডেনস, এবং নরওয়েজিয়ানদের সম্পর্ককে উল্লেখ থাকবে। ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে ফুনেন দ্বীপে ভ্রমণকালে এন্ডারসন ‘নর্ডিকের সৌন্দর্য, তিনটি জাতির একসঙ্গে বেড়ে ওঠা’ নিয়ে লিখেন তার কবিতা ‘জেগ এর এন স্ক্যান্ডিনভ’ (‘আমি একজন স্ক্যান্ডিনেভিয়ান’), যা স্ক্যান্ডিনেভিয়ার জাতীয় সংগীতের অংশ। সুরকার অটো লিন্ডব্লাড কবিতাটিকে সংগীতে রূপান্তর করেন এবং ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে এই সংগীতের সুরটি প্রকাশিত হয়। ১৮৪৫ খ্রিষ্টাব্দে এটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করে।
১৮৪৫ খ্রিষ্টাব্দ ছিলো অ্যান্ডারসনের সবচেয়ে সফল বছর। এই বছরে চারটি রপকথার অনুবাদ প্রকাশিত হয়। ‘দ্য লিটল মারমেইড’ সাময়িকী বেন্টলিস মিসেলানিতে প্রকাশিত হয় এবং এর পরপরই দ্বিতীয় সংকলন ‘ওয়ান্ডারফুল স্টোরিজ ফর চিলড্রেন’ প্রকাশিত হয়। অন্য দুটি সংকলন, ‘আ ডেনিশ স্টোরি বুক’ এবং ‘ডেনিশ ফেয়ারি টেলস অ্যান্ড লিজেন্ডস’ও গৃহীত হয়।
১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দের বসন্তে অ্যান্ডারসন তার বিছানা থেকে পড়ে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন। এই আঘাত থেকে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন নি। এর পরপরই তার যকৃতের ক্যান্সার দেখা দেয়। ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে তিনি কোপেনহেগেনে মৃত্যুবরণ করেন।