সরকারিকৃত রাজধানীর সরকারি রূপনগর মডেল স্কুল অ্যন্ড কলেজের অবৈধ নিয়োগ পাওয়া ২৩ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর পৃথক পৃথক অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে।
স্থানীয় এক ব্যক্তির অভিযোগের পর ডিআইএ কার্যালয় থেকে গত ৩ জুন অভিযোগ তদন্তে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির প্রধান শিক্ষা পরিদর্শক ড. এনামুল হক। আর সদস্য রয়েছেন অডিট অফিসার সুলতান আহম্মদ।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সরকারি রূপনগর মডেল স্কুল অ্যন্ড কলেজে ২০১০ থেকে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের জন্য ২৩ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব শিক্ষকের মাধ্যমিক স্তরে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ করা হয়নি। অথচ মাধ্যমিক স্তরের সরকারি শিক্ষক হিসেবে দ্বিতীয় শ্রেণির ডেজেটেড কর্মকর্তা হিসেবে তারা বেতন পাচ্ছেন। মাধ্যমিক স্তরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই প্রাথমিক স্তরে নিয়োগ করা ২৩ জন সহকারী শিক্ষক মাধ্যমিক স্তরের সরকারি শিক্ষক হিসেবে চাকরি করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি সরকারি হয়েছে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে। সরকারিকরণের গেজেট প্রকাশের দিন থেকে সরকারি বেতন-ভাতা পাচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরে করা লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, ২৩ জন শিক্ষককের মধ্যে একজন নারী শিক্ষক ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে ৩.১৩ জিপিএ নিয়ে এসএসসি পাস করেন। তিনি ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে ৩.৪০ জিপিএসহ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। এরপর ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে বিএ (সম্মান) এবং ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলায় ২য় শ্রেণিতে মাস্টার্স ডিগ্রিলাভ করেন। এসএসসি থেকে এইচএসসি পাস করতে ন্যূনতম দুই বছর সময় লাগে। নিয়ম অনুসারে ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি পাস করলে ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি পাস করার কথা। কিন্তু এক বছর আগেই ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি পাস কীভাবে করলেন?
অভিযোগে এই নারী শিক্ষকের বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১ নভেম্বর দৈনিক নিউ নেশন পত্রিকায় সার্কুলার ও অফিস আদেশ অনুসারে সহকারী শিক্ষক (প্রাথমিক শাখা) নিয়োগ পেলেও এখন তিনি মাধ্যমিক শাখায় সরকারি চাকরি করছেন। মাধ্যমিক শাখায় নিয়োগের জন্য বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যায়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সনদের প্রয়োজন হয়। কিন্তু তার এনটিআরসিএ সনদ নেই। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের ২০ মার্চ থেকে সরকারি ছাড়া সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদে আবেদন করতেই এনটিআরসিএর সনদ বাধ্যতামূলক। কাজেই তিনি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, মো. জাহিদুল ইসলাম ও মো. আরিফুল ইসলামও একইভাবে পত্রিকায় সার্কুলার ও অফিস আদেশ অনুসারে সহকারী শিক্ষক (প্রাথমিক শাখা) নিয়োগ পেলেও এখন অবৈধভাবে মাধ্যমিক শাখায় সরকারি চাকুরি করছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর সরকারি রূপনগর মডেল স্কুল অ্যন্ড কলেজের অবৈধ ২৩ জন শিক্ষকের চাকরি বহাল রাখতে অধ্যক্ষকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল বলেও অভিযোগ জমা হয়েছে। অধ্যক্ষ বিষয়টির দায়িত্ব নিতে না চাওয়ায় অধ্যক্ষকের বিরুদ্ধে দু্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ করেন সিটি করপোরেশনে ট্রেড লাইসেন্স ও শিক্ষা ভবনে এমপিওর দালালি করা এক ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে ট্রেড লাইসেন্স করানোসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।