ঈদুল আজহার ছুটি শেষে আগামী রোববার খুলছে দেশের সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে রোববার সকাল থেকেই নিয়মিত ক্লাস শুরু হবে। স্কুল-কলেজ খোলার আগে এবার সংশ্লিষ্টদের ভাবনায় ফেলছে ডেঙ্গু ও বন্যা। রাজধানীসহ সারা দেশে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এরই মধ্যে রাজধানীতে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের এক ছাত্রীর ও চট্টগ্রাম নগরীতেও এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এদিকে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রামসহ দেশের বেশকিছু স্থানে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যদিও শিক্ষার অধিদপ্তরগুলো বলছে, বিষয়গুলো নিয়ে তারা সচেতন। এসব বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে।
ঈদুল আজহার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলোতে টানা বন্ধ ছিলো। এর মধ্যে গত কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হয়েছে। অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশা প্রজননের জন্য বেশ উপযোগী। এসব প্রতিষ্ঠানের অনেক ফাঁকা জায়গায় পানি জমে থাকে। সেসব জায়গা এডিস মশার প্রজননস্থল হিসেবে কাজ করে। এবার স্কুলগুলোতে এডিস মশার বিস্তার ঘটতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, মহানগরীর ৪৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ বহুতল ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। রাজধানীর সবাই ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২০ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ বাড়িতে ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। আমরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪০টি ওয়ার্ডে এবং দক্ষিণ সিটির ৫৮টি ওয়ার্ডে সর্বমোট ৩ হাজার ১৪৯টি বাড়িতে সার্ভে (জরিপ) করেছি, এর মধ্যে ৫৪৯টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কার্যক্রমে রাস্তাঘাট উঁচু হওয়ায় অব্যবহৃত নিচতলায়, ভবনের পার্কিংয়ে জমে থাকা পানিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকা মহানগরের সবাই ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। সবার সচেতনতা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
রাজধানীর বনশ্রী আইডিয়াল স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ফজিলাতুন নাহার শাম্মী দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বাসায় সন্তানকে মশারির মধ্যে রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু রোববার থেকে স্কুল শুরু হলে কি হয় সে চিন্তায় আছি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ডেঙ্গুর পরিস্থিতির বিষয়ে তারা অবগত। তারা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও শিক্ষকদের সচেতন থাকতে বলছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জিয়াউল হায়দার হেনরী দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে আগেও একাধিকবার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ডেঙ্গুর প্রকোপের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। এবিষয়ে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের সচেতন থাকতে বলা হবে।
ডেঙ্গু রোধে ঈদুল আজহার ছুটির আগে ও পরে খোলার সময়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচ্ছন্ন করতে নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ২৫ জুন জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সারাদেশে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সিটি কর্পোরোশন ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়-বিভাগ এবং দপ্তর-সংস্থার কার্যক্রম পর্যালোচনার ভিত্তিতে গত ২২ জুন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে দ্বিতীয় আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় মন্ত্রী নির্দেশনা দেন, সব মন্ত্রণালয়-বিভাগ নিজ উদ্যোগে তাদের অধীনস্থ দপ্তর-সংস্থার আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে মশাবাহিত রোগ, বিশেষ করে এডিস মশার প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধের লক্ষ্যে এডিস মশার লার্ভা জন্মদান যাতে করতে না পরে সে ব্যবস্থা নেবে। সেজন্য ঈদুল আজহার ছুটির পর অফিস-বিদ্যালয় খোলার আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়ার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সংস্থাগুলোকে বলেছে মন্ত্রণালয়।
এদিকে শিশুদের ডেঙ্গুর হাত থেকে রক্ষা করতে সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা। বিশিষ্ট শিক্ষা বিশেষজ্ঞ মাছুম বিল্লাহ দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, শিক্ষক ও অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীদেরও সচেতন হতে হবে ডেঙ্গুর প্রকোপ থামাতে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।