লাইব্রেরিয়ান থেকে অধ্যক্ষ, আ. লীগ নেতার স্ত্রীর পদত্যাগ! - দৈনিকশিক্ষা

লাইব্রেরিয়ান থেকে অধ্যক্ষ, আ. লীগ নেতার স্ত্রীর পদত্যাগ!

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

এ যেন রীতিমতো ব্যাঙের লাফ! ১৩ থেকে এক-এ। ১১ জনকে ডিঙিয়ে লাইব্রেরিয়ান (গ্রন্থাগারিক) থেকে একেবারে প্রতিষ্ঠানপ্রধান- ‘প্রিন্সিপাল’। প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও মেয়রের স্ত্রী হওয়াটা যেন ওনার মূল যোগ্যতা!স্ত্রীর ‘শখ পূরণে’ বেশ কিছু কৌশলও নেন সেই নেতা ও জনপ্রতিনিধি। ডিঙিয়ে যাওয়া ১১ জনকে দিয়ে লিখিয়ে নেন দায়িত্ব নিতে তাদের অপারগতার কথা।আর এটাকে মূল পুঁজি হিসেবে ধরে নিয়ে কাগজ-কলমে শক্ত হয়ে দায়িত্ব নিয়ে বসেন।

তিনি তানিয়া আক্তার। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. তাকজিল খলিফা কাজলের স্ত্রী। তাকজিল খলিফা তিনবারের মেয়রও ছিলেন।সংস্কারের প্রয়োজনে অন্য মেয়রদের মতো তিনিও অপসারিত হন।

গ্রেফতার হওয়া সদ্যঃসাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের স্বাক্ষরে তানিয়া আক্তার লাইব্রেরিয়ান হয়েও প্রিন্সিপাল হয়েছিলেন। আনিসুল হক ওই কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি। তানিয়া আক্তারের স্বামী তাকজিল খলিফা হলেন সাবেক আইনমন্ত্রীর খুবই ঘনিষ্ঠজন।পাশাপাশি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিজের নামও লিখিয়েছেন তিনি। জাহানারা হক হলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মায়ের নাম।

৫ আগস্ট দুপুর থেকে তাকজিল খলিফা কাজল পলাতক রয়েছেন। বেশ কয়েক বছর ধরে বসবাস করা আখাউড়ার রাধানগর থেকে সরে গিয়ে নিজের পুরনো গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার কোড্ডায় অবস্থান করছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তানিয়া আক্তারকেও ঘটনার পর থেকে আখাউড়ায় দেখা যায়নি।৫ আগস্ট তাদের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

অবশ্য ৫ আগস্ট পরবর্তী সময় থেকে তানিয়া আক্তার আখাউড়ার জাহানারা হক মহিলা কলেজের প্রিন্সিপাল হিসেবে কাগজে কলমে কর্মরত ছিলেন। অবশ্য তিনি কলেজে আসেননি। তবে শেষ পর্যন্ত সমালোচনার মুখে অসুস্থতার কথা বলে তিনি চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন। ২৭ আগস্ট মঙ্গলবার তার অব্যাহতি সংক্রান্ত একটি কাগজ কলেজে পাঠানো হয় বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

২৭ আগস্ট তানিয়ার স্বাক্ষর করা ওই পদত্যাগপত্রে লেখা আছে, ‘আমি তানিয়া আক্তার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) জাহানারা হক মহিলা কলেজ, আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া গত ১৩-০২-২০২৪ তারিখ থেকে অদ্যাবধি কর্মরত ছিলাম। আমার শারীরিক অসুস্থতার জন্য আমি স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে উক্ত পদ থেকে পদত্যাগ করলাম। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তথা সভাপতি জাহানারা হক মহিলা কলেজ বরাবর তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। 

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি, জাহানারা হক মহিলা কলেজের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহা. শাহাজাহান মিয়া মারা যান। এরপর কলেজ পরিচালনা কমিটি জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে কোনো প্রভাষককে অধ্যক্ষের দায়িত্ব না দিয়ে লাইব্রেরিয়ান তানিয়া আক্তারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয়। কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীর নামের তালিকার বোর্ডে তার অবস্থান ১৩। এরপরই রয়েছে অফিস সহকারীর নাম।

কলেজে থাকা একটি বোর্ডে দেখা যায়, তানিয়া আক্তারের নামের পাশে বিএসসি (সম্মান) আর্কিটেক্ট এমএসসি (গ্রন্থাগার) লেখা আছে। পদবিতে লেখা শিক্ষক। সূত্র মতে, গ্রন্থাগারিক অর্থাৎ লাইব্রেরিয়ানদের সম্প্রতি শিক্ষকের পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তবে ওনার কোনো ইনডেক্স নম্বর নেই, যা কলেজের দুই পরিচ্ছন্নতাকর্মীও রয়েছে।

সূত্র জানায়, লাইব্রেরিয়ান হিসেবে তানিয়া আক্তার নয় হাজার টাকা বেতন নিতেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরুর পর তাকে ১৫ হাজার টাকা বেতন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ একবার দেশের বাইরে যাওয়ার সময় তানিয়া আক্তারকে ভারপ্রাপ্ত দেওয়ার যে রেজল্যুশন করা হয় সেটির ওপর ভিত্তি করেই দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ নিয়ে প্রভাষকদের মাঝে অসন্তোষ থাকলেও এত দিন তাদের কেউ মুখ খুলতে পারেননি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অনেকে নড়েচড়ে বসেছেন। তারা যে বৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন, সেটি থেকে বের হওয়ারও আশায় ছিলেন তারা।

এ ব্যাপারে কলেজ পরিচালনায় থাকা আহ্বায়ক কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি প্রভাষক মো. ইলিয়াস মুন্সী সাংবাদিকদের জানান, কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং কলেজের প্রতিষ্ঠাতা তাকজিল খলিফা কাজলের পরামর্শে সাময়িক সময়ের জন্য তানিয়া আক্তারকে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল করা হয়। পরবর্তী সময়ে নতুন প্রিন্সিপাল নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। 

এ বিষয়ে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) গাজাল পারভীন রুহি বুধবার দুপুরে জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে হাতে না আসা পর্যন্ত এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। কলেজ করা নিয়েও ছলচাতুরী

২০১১ খ্রিষ্টাব্দে আখাউড়া পৌর এলাকার নাছরীন নবী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কলেজ শাখা চালু করে ‘নাছরীন নবী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ’ নামে পাঠ কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে স্কুল থেকে কলেজটি আলাদা করা হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ কলেজকে কিছু জায়গা দান করে দেন, যা সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূতভাবে করা হয়।

এদিকে স্কুলের ভূমিতে কলেজের কার্যক্রম চললেও কলেজের নাম ও প্রতিষ্ঠাতার নাম পাল্টে যায়। তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মায়ের নামে ‘জাহানারা হক মহিলা কলেজ’ নামকরণ করা হয়। প্রতিষ্ঠাতা হয়ে যান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল। তবে এ জন্য তিনি কলেজ ফান্ডে ১৫ লাখ টাকা দিয়েছেন বলে একটি সূত্র জানায়। 

২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ জুলাই কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়। কলেজের ১১ জন প্রভাষক ও তিন কর্মচারী এমপিওভুক্ত হয়। এর মধ্যে তানিয়া আক্তারের (সহকারী লাইব্রেরিয়ান) পদটি এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি (যে কারণে ইনডেক্স নম্বর নেই)। তিনি ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২০ সেপ্টেম্বর এ কলেজে যোগদান করেন।

সরকারি চাকরি থেকে ২০ শিক্ষককে অব্যাহতি - dainik shiksha সরকারি চাকরি থেকে ২০ শিক্ষককে অব্যাহতি ইউজিসি চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্বে বহাল থাকছেন অধ্যাপক আলমগীর - dainik shiksha ইউজিসি চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্বে বহাল থাকছেন অধ্যাপক আলমগীর চার তারিখের মধ্যে মাদরাসা শিক্ষকদের এমপিওর আবেদন - dainik shiksha চার তারিখের মধ্যে মাদরাসা শিক্ষকদের এমপিওর আবেদন ত্রাণ দিতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনা, আহত ১২ চবি শিক্ষার্থী - dainik shiksha ত্রাণ দিতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনা, আহত ১২ চবি শিক্ষার্থী ব্যাংকের অনিয়ম তদন্তে কমিশন গঠন হচ্ছে - dainik shiksha ব্যাংকের অনিয়ম তদন্তে কমিশন গঠন হচ্ছে শীট মেশিন সম্বলিত প্রতিষ্ঠানের জন্য পুনরায় দরপত্র দাবি - dainik shiksha শীট মেশিন সম্বলিত প্রতিষ্ঠানের জন্য পুনরায় দরপত্র দাবি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.007314920425415