দৈনিক শিক্ষাডটকম, পঞ্চগড় : পঞ্চগড়ে ১০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বহুল পরিচিত ও ঐতিহ্যবাহী নামের বদলে নতুন নামকরণ করার প্রতিবাদ জোরালো হচ্ছে। সম্প্রতি শ্রুতিকটূ থেকে শ্রুতিমধুর নামে ঐতিহাসিক এসব প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হয়। এর প্রতিবাদের চলতি মাসের শুরু থেকে নানাভাবে প্রতিবাদসহ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত এসব প্রতিষ্ঠানের পূর্বের নাম বহাল রাখার দাবি জানানো হয়েছে।
শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ৩ এপ্রিল ২৪৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে পঞ্চগড়ের ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামও পরিবর্তন করা হয়। এর মধ্যে আটোয়ারী উপজেলায় তিনটি, তেঁতুলিয়া উপজেলায় ছয়টি এবং দেবীগঞ্জ উপজেলায় একটি বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে শতবর্ষী এবং ঐতিহ্যবাহী ভজনপুর দেবনগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামও পরিবর্তন করা হয়েছে।
তেঁতুলিয়া উপজেলার ছয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভজনপুর দেবনগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নামকরণ হাসনাহেনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পেদিয়াগছ আব্দুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নাম রজনীগন্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রাখায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর থেকে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকসহ এলাকার লোকজন মানববন্ধন, সভা সমাবেশসহ সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল।
সর্বশেষ বুধবার (১৭ এপ্রিল) তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা ও গণসাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয়রা। পরে তারা দুই প্রতিষ্ঠানের পূর্বের নাম বহালের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে স্মারকলিপি দেন।
মানববন্ধনে ভজনপুর দেবনগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম, প্রাক্তন ছাত্র ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আবু তোয়বুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আইবুল হক, কলেজ শিক্ষক আবু তৈয়ব, ইউপি সদস্য মোজাফ্ফর আলী, পেদিয়াগছ আব্দুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম, কলেজ শিক্ষক আব্দুল আজিজ মন্ডলসহ স্থানীয়রা বক্তব্য রাখেন।
তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আব্দুল লতিফ তারিন ও তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী আনিছুর রহমান।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আবু তোয়বুর রহমান বলেন, শ্রুতিকটূ না হলেও যুগ যুগ ধরে এলাকার নামে পরিচিত ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক বিদ্যালয়ের নাম অযৌক্তিকভাবে পরিবর্তন করে ফুলের নামে নামকরণ করা হয়েছে। ম্যানেজিং কমিটি ও স্থানীয়দের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই উপজেলা কমিটি খেয়াল খুশি মতো এই কাজ করেছেন।
স্কুল শিক্ষক মোকতারুল ইসলাম বলেন, ভজনপুর দেবনগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামটিতে ভজনপুর ও দেবনগড় দুই এলাকার নাম হওয়ায় ভজনপুর শব্দটি বাদ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুরোটা বাদ দিয়ে হাসনাহেনা করা হয়েছে। অথচ এই বিদ্যালয়টি ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই নামে পরিচিত। পূর্বের নামটি কোনো অর্থে শ্রুতিকটূ মনে হলো বুঝে আসে না। দেবনগড় পঞ্চগড়ের ঐতিহাসিক পাঁচ গড়ের অন্যতম একটি গড় এর নাম।
তেঁতুলিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম শ্রুতিকটূ বা নেতিবাচক ছিল, উপজেলা পর্যায়ে কমিটির মাধ্যমে সেসব প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পাঠানো হয়। ফুলের নাম, নদীর নামে বিদ্যালয়গুলোর নামকরণ করা হয়েছে। শিশুদের কাছে এই নামগুলো যেমন শ্রুতিমধুর, তেমনি সুন্দর।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে রাব্বি বলেন, তেঁতুলিয়া উপজেলায় মিটিং এবং আলোচনার মাধ্যমে রেজুলেশন করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়। এখন দুটি বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা পুরাতন নাম বহাল রাখার জন্য দাবি তুলেছেন। আমরা আবারো উপজেলা কমিটির আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে পরবর্তি সিদ্ধান্ত নিবো।।