শরীয়তপুরে ১০ ছাত্রলীগ নেতাকে সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ও বুধবার (১৭ জুলাই) জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মো. মহসিন মাদবর ও যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ উজ্জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই ১০ নেতাকে অব্যাহতি দেয়ার কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে ওই দশ নেতা ছাত্রলীগের নীতি আদর্শ, শৃঙ্খলা পরিপন্থী এবং সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় এমন কার্যক্রমে জড়িত আছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। মঙ্গলবার ও বুধবার অব্যাহতির প্রেস বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে আসে।
বহিষ্কার ও অব্যাহতি পাওয়া দশ নেতা হলেন: শরীয়তপুর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন রাফি, সহসম্পাদক বিএম জাহাঙ্গীর আলম রনি, দফতর সম্পাদক মো. ফাহাদ হোসেন, কার্য নির্বাহী সদস্য এইচএম ওয়াসিম মাদবর, ভেদরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুরঞ্জন সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক অন্তর মাদবর, ভেদরগঞ্জ পৌরসভা ৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি জয় মাদবর, মহিষার ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান হাওলাদার, গোসাইরহাট উপজেলার ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তৌসিফ আহমেদ।
ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া শরীয়তপুর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন রাফি ফেসবুকে লিখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ কোটার বিপক্ষে কথা বলার জন্য ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার। যে কমিটিতে রাখছিলেন তার পরিচয় কখনও কারো কাছে বলিও নাই। হইতাম পৌরসভার সাধারণ সম্পাদক, পাহাড়দের সাথে দল করি দেখে আমাকে বাদ দিলেন। ঐ দিন থেকেই তো আমার আশা ভরসা শেষ হয়ে গেছে। তার পরে যা দিয়েছেন এগুলো Rashed Uzzaman আপনার ইচ্ছেমত করে সাজাইছেন কমিটি।’
তিনি আরো লিখেন, ‘ন্যায় যেটা তাই বলছিলাম। বাংলাদেশে কোটা থাকবে না। এই টাই দোস, আপনাদের মতন না, আপনারা ছাত্রলীগের সাইনবোর্ড দেখিয়ে অনেক কিছুই করে নিয়েছেন। আমি বলতে পারবো ছাত্রলীগ করে মানুষের ধানকেটে দিছি, যতটুকু পারছি অসহায় মানুষের পাশে করোনাসহ সবসময় ছিলাম। কিন্তু ছাত্রলীগের পরিচয় দিয়ে কোনও ধান্দা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, করিনি। দুই পয়সা কারো কাছ থেকে ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে নেইনি। শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগ সুন্দর সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ।’
বোরহান উদ্দিন রাফি বলেন, ‘যে ছাত্রলীগ করে জীবনের ১৫টি বছর কাটাইছি। দল থেকে কখনও কোনও সুবিধা ভোগ করিনি। বরং নেতার কথা রাখতে গিয়ে শরীরের রক্ত পর্যন্ত ঝরছে। যে অন্ধ বিশ্বাস করতাম। তার মূল্য ছাত্রলীগের অভিভাবক একমাত্র শেখ হাসিনা। আজকে যারা আমাকে স্বাক্ষর দিয়েছে, তাদের আগে অব্যাহতি নিতে হয়। কারণ তাদের তো ছাত্রত্বই নেই। আল্লাহর কাছে দোয়া রইল আপনারা যেন আমৃত্যু ছাত্রলীগের নেতা থাকেন। আপনারা যে নীতিমালা ভঙ্গের কথা বলতাছেন তার কিছুই করিনি। আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতাছি ঐ লিস্টে উল্লেখ করে দেন যে, সত্যের জন্য বলা কথা, কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে পোস্ট করার জন্য এবং ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বর অত্যাচার করছে, পুলিশ সাধারণ শিক্ষার্থীদের গুলি করে হত্যা করেছে। যার কারণে স্ব-ইচ্ছে ছাত্রলীগ থেকে বোরহান উদ্দিন রাফি অব্যাহতি নিয়েছে। মহসিন ভাই ও রাশেদ ভাই আসসালামু আলাইকুম।’
জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মো. মহসিন মাদবর বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার কারণে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। অব্যাহতির পর থেকে তাদের কোনও কর্মকাণ্ডের দায়ভার ছাত্রলীগ বহন করবে না।
অব্যাহতি পাওয়া ছাত্রলীগ নেতাদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে। এরসঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই।