দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার সাদি মহম্মদের মরদেহ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে না। বৃহস্পতিবার বাদ যোহর মোহাম্মদপুর জামে মসজিদে জানাজা শেষে মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তার দাফন হবে। বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ভাই শিবলী মহম্মদ।
তিনি জানান, মানুষের ভালোবাসা তার ভাই পেয়েছেন। এই যে এত মানুষ এখানে ছুটে এসেছেন, এটাই তার প্রতি সবার ভালোবাসা। মরদেহ শহীদ মিনারে নেওয়া হবে না। মরদেহ রাতে হিমঘরে রাখা হবে, সেখান থেকে সকালে আনা হবে। বৃহস্পতিবার বাদ যোহর বাসার পাশে তাজমহল রোডের কবরস্থানে তার ভাইকে দাফন করা হবে এবং তার আগে কবরস্থানের জামে মসজিদেই তার জানাজা হবে বলেও জানান তিনি।
বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাদি মহম্মদের মরদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ধানমন্ডিতে নেওয়া হয়েছে। রাতেই আল মারকাজুলে তার গোসল সম্পন্ন হবে বলে পরিবারের সদস্যরা জানান।
বুধবার সন্ধ্যার পর মোহাম্মদপুরের নিজ বাসভবন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে সাড়ে নয়টার দিকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেয়া হয়। মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বাসায় যে ঘরে বসে সাদী মহম্মদ গান করতেন, সেখানেই তার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সাগতিক লোহানী জানান, তার গলায় দাগ রয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে সাত থেকে আটটার মধ্যে নিজ রুমে থেকে উদ্ধার করেন পরিবারের সদস্যরা। এখানে সাড়ে ৯টার দিকে নিয়ে আসলে তাকে মৃত অবস্থায় পান তারা। প্রাথমিক সিদ্ধান্তে এটাকে আত্মহত্যা হিসেবে মনে করছেন তারাও।
সাদী মহম্মদের দীর্ঘদিনের সহকারী সোহেল মাহমুদ জানান, সন্ধ্যায় তিনি সবার সঙ্গে ইফতার করেছেন। তারপর নিজ ঘরে গিয়ে তানপুরা নিয়ে রেওয়াজও করেছেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তিনি বেশ কিছুদিন থেকে হতাশায় ভুগছিলেন। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পাওয়ায় তার ক্ষোভ ছিল বলে তার ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছেন।
সাদি মহম্মদের মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ (৯৬) গত বছরের ৮ জুলাই বার্ধক্যজনিত রোগে মারা গেছেন। সাদি মহম্মদের ভাই নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ জানান, মায়ের মৃত্যুর পর থেকে মানসিকভাবে স্বাভাবিক ছিলেন না সাদি। মাকে হারানোর বেদনা সম্ভবত তিনি নিতে পারেননি।
সাদি মহম্মদ রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওপরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতে তার মূল পরিচিতি গড়ে উঠলেও আধুনিক গানেও তিনি সমান পরিচিত ছিলেন। অসংখ্য রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে তার কণ্ঠে, সঙ্গে আধুনিক গানও। অসংখ্য সিনেমা ও নাটকে প্লেব্যাকও করেছেন তিনি।
এছাড়াও সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন সাদি মহম্মদ। সঙ্গীতে তার অসামান্য অবদানের জন্য ২০১২ সালে তাকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার দেয় চ্যানেল আই। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি থেকে তিনি পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার।