মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল করা হলেও জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরছেন না। গত বুধবার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আন্দোলনরত এসব শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্তের জানান। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ নিয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়। তবে শিক্ষক নেতারা তার এই দাবি না মেনে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
এদিকে, আগামীকাল রোববার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে আজ শনিবার আন্দোলনের ১২তম দিনে এসে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ ব্যতীত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ফের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এসময় তারা ক্লাসে না ফেরার কথাও জানান।
বিকেল ৫টার পর রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি থেকে এই ঘোষণা হয়। এসময় মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে জাতীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করার কথা জানানো হয়। আন্দোলনরত শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ এ ঘোষণা দেন।
একই সময়ে তিনি বলেন, শিক্ষকদের এই অবস্থান আগামীকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত মূলতুবি। সকালে আবার এখানে আসবেন।
এদিকে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে। গত ১১ জুলাই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শুরু হওয়া অবস্থান কর্মসূচি আজ শনিবার ১২তম দিনে গড়ালো।
কাওছার আহমেদ জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে জাতীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়েছে। এই জোটের আহবায়ক হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমান মিয়া, বাকি সংগঠনের সভাপতিরা যুগ্ম আহবায়কের দায়িত্বে থাকবেন। আর জোটের প্রধান সমন্বয়কারী বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ, বাকি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকরা সমন্বয়কারীর দায়িত্বে থাকবেন।
এসময় আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি আমাদের অভিভাবক, আপনি বললে আর কারও কথা লাগবে না।
“আপনি আমাদের ৫ মিনিট সময় দেন যেনো আমরা সুন্দরভাবে ফিরে যেতে পারি। আপনি ৫ মিনিট না পারেন অন্তত ২ মিনিট আমাদের সাথে বসুন। আপনার কাছে আমাদের কোন দাবি নাই। আপনি শুধু বলবেন, আমাদের নির্দেশ দিবেন, আমরা শুনে ক্লাসরুমে ফিরে যাবো। অন্যথায় আমরা কারও আশ্বাসে ক্লাসরুমে ফিরে যাবো না।”
তিনি আরও বলেন, সাড়ে ৫ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী গত ১২ দিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে যাচ্ছে কিন্তু আমাদের আশ্বাসও দেয়া হচ্ছে না। কিছুদিন আগে শিক্ষামন্ত্রী দুইটি কমিটি করে দিয়েছেন। একটি অর্থনৈতিক অন্যটি গবেষণার জন্য। আমরা ভেবেছিলাম যেহেতু উনি এটা করেছেন সেহেতু প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবি মেনে নিবেন। তিনি এর আগেও ৩৪০টি কলেজ জাতীয়করণ করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের নিয়মানুযায়ী অনুযায়ী ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, ১০০০ টাকা বাসা ভাড়া পাই। এটাকে সংশোধন করতে বলেছি আমর কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী সেটাকে অস্বীকার করে বললেন সামনে নির্বাচন এখন কোন জাতীয়করণ করা বা অন্যান্য ঘোষণা দেয়া যাবে না, কোন পরিবর্তনও আনা যাবে না৷ এর পরে আবার আমাদেরকে মাতৃভাষা ইনস্টিটিটিউটে মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের জন্য ডাকা হলে আমরা গিয়ে দেখি সেখানে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ নামের ব্যানারে রাজনৈতিক নেতারা আসন দখল করে বসে আছেন, আমাদের বসতেও দেয়া হয়নি ঠিকমতো। এটা আমাদের শিক্ষকসমাজের অপমান স্বরূপ। পরে আমরা বুঝেছিলাম মন্ত্রীর কথায় কিছু হবে না। আমরা মনে করি শুধু প্রধানমন্ত্রীই পারবেন আমাদের বেসিরকারি সাড়ে ৫ লাখ শিক্ষককে জাতীয়করণের আওতায় নিয়ে আসা।