শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক

ড. মুহাম্মদ আব্দুল মুমীত, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

জন্মকালীন অসহায়ত্ব কাটাতে মানব সন্তানকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় অন্যের নিবিড় তত্ত্বাবধানে। এই পরনির্ভরশীলতার মাঝে মানব শিশুর অভিযোজন ঘটে পরিবেশের সঙ্গে, তৈরি হয় বন্ধন। জন্মপরবর্তী এ বন্ধন বাবা-মার হাত ধরে মিলন ঘটায় সমাজের সঙ্গে। তাই পিতা-মাতাই শিশুর প্রথম ও বুনিয়াদি শিক্ষক। শিক্ষক হিসেবে পিতা-মাতার এ সময়ের শিক্ষা, শিশুর পরবর্তী সারা জীবনকেই প্রভাবিত করে। এটি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্কের সূচনা পর্ব। শৈশবকালে বাবা-মার সামান্যতম অবহেলা শিশুর চলার ছান্দিক স্বকীয়তা ও শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত করতে পারে। 

‘পিতামাতার অন্যপ্রান্তে বিদ্যালয় আর বিদ্যালয়ের অন্যপ্রান্তে বাড়ি’- এই হলো শিশুর ঠিকানা। এ পর্যায়টি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্রিক এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের প্রাতিষ্ঠানিক পর্ব। শিশুরা এ সময় জ্ঞানার্জনের জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক বলতে মূলত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কালকেই বিবেচনায় নেয়া হয়; যা প্রাথমিক হতে শুরু হয়ে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ পর্যন্ত বিস্তৃত।

প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা কাদামাটির মতো। এ স্তরের শিক্ষক কুমারের মতো যেমন খুশি শিক্ষার্থীকে গড়ে তুলতে পারেন। এ স্তরের শিক্ষা হলো উচ্চশিক্ষা বা জাতীয় উন্নয়নের ভিত্তি ভূমি। ফ্রেয়বেল এর মতে, শিক্ষকের কাজ ফুল বাগানের মালির মতো। ফুলের চারা লালন পালন করে ফুলফল ধরানোই হলো শিক্ষকের কাজ। একজন শিক্ষক একটি শিশুর প্রজ্ঞা ও জ্ঞানলাভের দরজা স্বরূপ। শিশুর ভেতরে সৃষ্টিশীলতা জাগ্রত করতে শিক্ষককে অনুসরণীয় মডেল হিসেবে আবির্ভূত হতে হয়। এ পি জে আবুল কালাম এর মতে, ‘বাবা, মা ও শিক্ষক এই তিনজনই একটি শিশুর ত্রি-মত্রিক রোল মোডেল’। 

মাধ্যমিক স্তর শিক্ষার্থীকে আত্মদর্শনের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার ধারনা হতে নিজেকে জানার সুযোগ করে দেয়। এক্ষেত্রে একজন শিক্ষক শিল্পীর ন্যায় শিক্ষার্থীর মনের সহজাত প্রবৃত্তির সুপ্ত সম্ভাবনার পরিস্ফুটন ঘটিয়ে সত্যিকারের মানুষ তৈরির কাজে নিয়োজিত থাকেন। এ সময় শিক্ষার্থীর মধ্যে জ্ঞান পিপাসা ও স্বপ্ন সৃষ্টিই শিক্ষকের মূল কাজ। আনুষ্ঠানিক এ শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে দাতা ও গ্রহিতার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। রসায়নের ভাষায়, দাতা ও গ্রহিতা মৌলের সমান আসক্তির ফলেই আয়নিক বন্ধন  গঠিত হয়। অর্থাৎ শিক্ষকের জানানোর আগ্রহ এবং শিক্ষার্থীর জানার আসক্তি প্রবল না হলে শিখন-শিখানো প্রক্রিয়া যথাযথ হয় না। 

অন্যভাবে বলতে গেলে শিক্ষক হলো প্রবাহমান নদীর মতো। স্রোতস্বিনী যেভাবে ময়লা-জঞ্জাল ধুয়ে পুতপবিত্র করে তোলে এবং নিজ প্রবাহ গুণে অচল বস্তুকেও গতিশীল করতে পারে একজন শিক্ষকও ঠিক তাই। শিক্ষক তার জ্ঞানের দ্বীপ্তি ছড়িয়ে শিক্ষার্থীর মনের অন্ধকার বিদূরিত করে শিক্ষার্থীকে উজ্জীবিত করে তোলে সত্য ও ন্যায়ের পথে। অন্যের অক্ষমতাকে অনায়াসেই সক্ষম করে তোলেন তিনি, এখানেই একজন শিক্ষকের সফলতা ও নিজস্বতা।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে এক অজানা অদৃশ্য বন্ধন তৈরি হয়, যা আত্মীক ও পবিত্র। সুগভীর এ সম্পর্ক জাগতিক কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনীয় নয়। এখানেই শিক্ষক মহান, যাকে কেউ স্পর্শ করতে পারে না। এ আসন শুধুই শিক্ষকের যা বেস্টিত থাকে আত্মমর্যাদা ও আত্মতৃপ্তির অদৃশ্য ছোঁয়ায়। একজন সুশিক্ষকের সম্পর্ক শিক্ষার্থীর পরিবারকেও আকর্ষিত করে, ফলে পরিবারের লোকজনও তাকে সম্মানের চোখে দেখেন। হেনরী এডাস এর মতে, ‘শিক্ষকের প্রভাব অনন্ত কালে গিয়েও শেষ হয় না’। অর্থাৎ একজন আদর্শ শিক্ষক শিক্ষার্থীর মনোরাজ্যের এমন একটি স্থান দখল করে রাখেন যা শিক্ষার্থীকে জীবনের অন্তিম ক্ষণেও স্মরণ করাতে বাধ্য করে। 

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পাকিস্তানী পদার্থ বিজ্ঞানী ড. আব্দুস সালাম নোবেল জয়ের পর লাহোর থেকে কলকাতায় এসে তার শিক্ষাগুরু শ্রী অনিলেন্দু গাঙ্গুলীর সঙ্গে দেখা করে মুমূর্ষু শ্রী গাঙ্গুলীকে বলেছিলেন, ‘এই পদকের ওপর আমার চেয়ে আপনার অধিকার বেশি, আপনি আমাকে গণিত ভালোবাসতে শিখিয়েছিলেন’। শিক্ষক তার অর্জিত জ্ঞানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর হৃদয়ে যে আলোর মশাল জ্বালিয়ে দেন তা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত প্রজ্বলিত থাকে। এ অদৃশ্য আলোর অস্পর্শী দীপশিখা শিক্ষার্থীর অন্তরকে নাড়া দিতে থাকে সামনে থেকে আলোকবর্তিকার মতো। যে আলোয় শিক্ষার্থীরা স্পষ্টতই প্রভেদ করতে শেখে ন্যায়-অন্যায় আর সত্য-মিথ্যের,যা খুব সহজেই খুঁজে পেতে সাহায্য করে কর্তব্যবোধ, মূল্যবোধ, সমাজবোধ ও দেশপ্রেম। 

লেখক: উপজেলা এডুকেশন সুপারভাইজার, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, বাগমারা, রাজশাহী

পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু - dainik shiksha পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত - dainik shiksha অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প - dainik shiksha নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি - dainik shiksha শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে - dainik shiksha গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033860206604004