দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (এমপিওভুক্ত) শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে বছরে ঘাটতি ৫৬০ কোটি টাকা টাকার বেশি। প্রতি বছরই এ ঘাটতি আরও বাড়ছে। ফলে অবসর সুবিধার জন্য বছরের পর বছর শিক্ষকদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও অপেক্ষার শেষ হচ্ছে না। অনেকেই অবসর সুবিধা না পেয়ে অর্থাভাবে চিকিৎসা নিতে না পেরে মারাও যাচ্ছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির আলোচনায় এ বিষয়টি উঠে এসেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধার অনিষ্পন্ন ৬১ হাজারের বেশি আবেদন নিষ্পত্তির জন্য সংসদীয় কমিটির সহায়তা চাওয়া হয়েছে। অপরদিকে এসব অনিষ্পন্ন আবেদন নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে।
সংসদীয় কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রথম বৈঠকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধার আবেদন সময়মত নিষ্পত্তি না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে শিক্ষা সচিব সোলায়মান খান নিজেই প্রসঙ্গটি তোলেন।
সচিব বলেন, বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসর সুবিধা খাতে বছরে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তার চেয়ে বরাদ্দ অনেক কম হওয়ায় প্রতি বছর ঘাটতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে একজন শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন পার হলেও তার আবেদন নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। বর্তমানে অর্থভাবে প্রায় ৩৪ হাজার আবেদন অনিষ্পন্ন অবস্থায় আছে। এগুলো নিষ্পত্তি করতে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি প্রয়োজন।
কল্যাণ ট্রাস্টে অনিষ্পন্ন ২৭ হাজার আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রায় ২ হাজার কোটি ৪০০’শ কোটি টাকা প্রয়োজন বলেও তিনি কমিটিতে জানান। পরে তিনি এ বিষয়ে কমিটির সহায়তা কামনা করেন।
বিষয়টি নিয়ে কমিটির সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বৈঠকে বলেন, চাকরি শেষে যে অবসর সুবিধা পাওয়ার কথা সেটাও যথাসময়ে না পাওয়ায় তারা জনপ্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হয়ে থাকেন। এমনকি শেষ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে অর্থাভাবে চিকিৎসা নিতে না পরায় অবসর সুবিধা ভোগ না করেই অনেকে মারা যান। তিনি এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
নাছিম তার বক্তব্যে দেশে শিক্ষার পরিবেশ নষ্টের মূলকারণ হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, অতিরিক্ত অর্থ আদায় প্রতিষ্ঠানের তহবিলের প্রতি অনৈতিক লোভলালসার কথা তুলে ধরেন।
কমিটির সদস্য আহমদ হোসেন তার বক্তব্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবসর সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা দ্রুত নিরসণ করার প্রস্তাব করেন।
পরে বৈঠকে বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের অনিষ্পন্ন আবেদন দ্রুত নিষ্পন্ন করার সুপারিশ করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধার অনিষ্পন্ন আবেদন নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধা পেতে বছরে গড়ে ১৬ হাজার ৮শটি আবেদন জমা পড়ে। এসব আবেদন নিষ্পত্তির জন্য বছরে তাদের প্রয়োজন ৭২০ কোটি। কিন্তু এমপিও থেকে ৪ শতাংশ হারে কর্তন থেকে বছরে ৫৭৬ কোটি টাকা ও ব্যাংক সুদ থেকে বছরে ২৪ কোটিসহ বছরে তাদের আয় ৬০০ কোটি টাকা। বছরে তাদের ঘাটতি থাকছে ১২০ কোটি।
অবসর সুবিধা বোর্ডের ২০২০ সালের আগস্ট থেকে মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত ৩৪ হাজার আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে। এর জন্য প্রয়োজন প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।
এ খাতে বছরে প্রায় ১০ হাজার ৮’শটি আবেদন পড়ে। এগুলো নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজন ১ হাজার ৩২০ কোটি। এ খাতে শিক্ষকদের বেতন থেকে কর্তন থেকে বছরে আয় ৮৪০ কোটি ও ব্যাংক এফডিআর থেকে আয় ৩৬ কোটি। এ খাতে বছরে ঘাটতি থাকে ৪৪৪ কোটি টাকা। বর্তমানে সরকারি কর্মচরীদের মতো শিক্ষকদেরও বার্ষিক বেতন প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে এ দুটি খাতে ঘাটতি আরও বাড়ছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।