ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে রংপুর বিভাগে ১০৫ জন ধরা পড়েছেন। এরমধ্যে রংপুরে ১৯, গাইবান্ধায় ৩৫, লালমনিরহাটে ১৩, দিনাজপুরে ১৫, ঠাকুরগাঁও ৭ ও নীলফামারীতে জালিয়াত চক্রের পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। আর ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে জালিয়াতি করে পরীক্ষা দেয়ায় কুড়িগ্রামে ১২ জন প্রার্থী আটক।
শুক্রবার দুপুরে রংপুর মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান দিনাজপুরের ১০জনসহ মোট ৮৯ জন প্রার্থীকে গ্রেফতারের তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, গ্রেফতার প্রার্থীদের কাছ থেকে ১১টি বিশেষ ইলেকট্রিক ডিভাইস এবং ৮০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে একটি চক্র জালিয়াতি করতে পারে এমন তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) গভীর রাত থেকে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায় রংপুর মহানগর পুলিশ। অভিযানে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জালিয়াতি চক্রের মূল হোতাসহ পাঁচজন। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের জালে একে একে ধরা পড়ে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত তিন শিক্ষকসহ ১১ পরীক্ষার্থী।
পুলিশ কমিশনার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরি নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি করে আসছিলো। চক্রটির একজন করে সদস্য পরীক্ষার হলের ভেতরে থাকেন, যারা প্রশ্ন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিভাইসের মাধ্যমে বাইরে থাকা সহযোগীদের প্রশ্নটি পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তীতে তারা স্বল্প সময়ের মধ্যে সেগুলো সমাধান করে পরীক্ষার্থীদের বিশেষ ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহ করে থাকে। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপপরিচালক মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, বিভাগের ৮ জেলায় ২৯৭ কেন্দ্রে ২ লাখ ২ হাজার পরীক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষক পরীক্ষায় অংশ নেন। প্রশ্নপত্র ফাঁস বা পরীক্ষার্থীরা জালিয়াতির সুযোগ না পাওয়ায় নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের সম্ভাবনা নেই। গতকাল রাত থেকে প্রতিটি জেলায় আমাদের কর্মকর্তারাসহ প্রশাসন তৎপর ছিলো।
এদিকে পরীক্ষা শেষে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে জালিয়াতি করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়র সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা দেয়ায় কুড়িগ্রামে ১২ জন প্রার্থী আটক হয়েছেন। আর তিনজন প্রার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এদিকে দুপুরে রংপুরের পুলিশ কমিশনার দিনাজপুরের ১০ জন প্রার্থীকে গ্রেফতারের তথ্য জানালেও সন্ধ্যায় দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: ফরিদ হোসেন জানান, শুক্রবার দিনাজপুরে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে দিনাজপুর আদর্শ কলেজ কেন্দ্র থেকে ৫ জন, ক্রিসেন্ট কিন্ডারগার্টেন গালস স্কুল থেকে ১ জন, দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে ২ জন, কেবিএম কলেজিয়েইট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৩ জন, ডিআইএসটি সেন্টার থেকে ২ জন ও দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ২ জনকে আটক করা হয়েছে।