সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং সার্বজনীন পেনশন বাতিলের দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলন ও কর্মবিরতি সরকার খুবই সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের নেতাদের এক যৌথসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এই কথা জানান।
শোকাবহ আগস্ট উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালনের বিষয়ে এ যৌথসভার আয়োজন করা হয়।
সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। পাশাপাশি পেনশনের বিষয়ে শিক্ষক সমাজের একটি আন্দোলন ও কর্মবিরতি চলছে। আমরা সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
তিনি বলেন, যতটুকু জেনেছি, আজ শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি নেই। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমরা এও শুনেছি, কোটার বিষয়ে উচ্চ আদালতে যে মামলা চলছে, সেখানে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য শিক্ষার্থীরা তাদের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগ করেছে এবং যথা সময়ে তারা আদালতে হাজির হবে। এটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত। সে কারণেও তাদের ধন্যবাদ জানাই।
কোটা সংস্কারের বিষয়ে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রধানমন্ত্রী একটি পরিপত্র জারি করে সরকারি চাকরিতে কোটা মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী এতদিন সরকারি কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এখন মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের সাতজন মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়ে আদালতে মামলা করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদালত একটি রায় দিয়েছেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করেছে। আমরা আশা করি শিগগিরই এর শুনানি হবে। আমাদের অবস্থান এখানে পরিষ্কার।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, এখন যেহেতু কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে, সেহেতু আদালত তাদের কথা শুনবেন, সরকার পক্ষের কথা শুনবেন। সব পক্ষের কথা শুনে দেশের সর্বোচ্চ আদালত বাস্তবসম্মত একটি সিদ্ধান্ত নেবেন, এটিই আমরা আশা করি। ওই পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করতে আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করছি। জনদুর্ভোগ যাতে সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে আন্দোলনকারীদের সতর্ক মনোযোগ আশা করছি। এ নিয়ে আমরা কেউ কারো উসকানিতে যাব না।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলন করছে, তাই ছাত্রলীগকে খুব সতর্কভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। কোন অবস্থায় উসকানি দেওয়া যাবে না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকেও নেত্রী নির্দেশ দিয়ে গেছেন, তাদের পক্ষ থেকে যেন কোনো ধরনের উসকানি না দেওয়া হয়।
শিক্ষকদের আন্দোলনের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষকদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। যদিও আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক তাদের সঙ্গে হয়নি। এটি কোনো জটিল সমস্যা নয়। অচিরেই সমাধান হয়ে যাবে আশা করি।
তবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে উদ্বেগের কথাও জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন অরাজনৈতিক। এ অরাজনৈতিক আন্দোলনে বিএনপি ও সমমনা কারো কারো রাজনৈতিক সমর্থনের বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। এ অশুভ মহল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দাবিতে উসকানি ও ইন্ধন দিয়ে যাতে দেশে বিশৃঙ্খল আবহ তৈরি করতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সাবধান থাকতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি নিজেরা আন্দোলনে ব্যর্থ। হেরে যাওয়ার ভয়ে তারা নির্বাচনে যায়নি। তারা ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দেও কোটাবিরোধী আন্দোলনে ভর করেছিল। এখন আবার শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ভর করে সরকার হঠানোর দুরভিসন্ধি বাস্তবায়ন করতে চায়। অশুভ তৎপরতা সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক কারণে জামিন দেওয়া হচ্ছে না- বিএনপির এমন দাবির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, কারণটা আইনি, রাজনৈতিক নয়। তারা সবকিছুতে রাজনীতির গন্ধ খুঁজে পায়। আইনি মোকাবিলা তারা খালেদা জিয়ার জন্য করেনি। মাসের পর মাস, এমনকি বছর কেটে গেছে, তারা খালেদা জিয়াকে আদালতে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত রেখেছে, জামিনও চায়নি। তারা আইনি মোকাবিলায় ব্যর্থ। তারা খালেদা জিয়ার জন্য শহরে একটি দৃশ্যমান বিক্ষোভ মিছিল করেছে, এমন প্রমাণ আমরা পাইনি।
আগস্ট মাসে কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি পালন করার জন্য নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, শোকের মাস আগস্ট আবার ফিরে এসেছে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১ আগস্ট থেকে আমরা মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করব। নেতাকর্মীদের কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানাই।
যৌথসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ, ঢাকা ৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিমসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।