দৈনিক শিক্ষাডটকম, রংপুর : রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আরেক সহকারী শিক্ষককে জুতাপেটা ও নাকে কিল-ঘুষি মেরে রক্তাক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
গতকাল রোববার বিকেলে লতিবপুর ইউনিয়নের বাতাসন হজরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক তারিকুজ্জামান বাবু মাদকাসক্ত বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি প্রধান শিক্ষকের আপন বোন হওয়ায় কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই সরকারি বরাদ্দের টাকা লুটপাট, অনিয়মিত আসা-যাওয়া এবং বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মাদক সেবন করার অভিযোগ রয়েছে এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
প্রতক্ষ্যদর্শী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাতাসন হজরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি এবং উপজেলার পাইকান উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আব্দুল আউয়াল বিকেলের দিকে বিদ্যালয়ে গিয়ে ছাত্রছাত্রী কম দেখতে পান। বিষয়টি তিনি প্রধান শিক্ষক তারিকুজ্জামান বাবুকে অবগত করেন। এ সময় শিক্ষার্থী বৃদ্ধিসহ লেখাপড়ার মান বৃদ্ধির পরামর্শও দেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষক সহকারী শিক্ষকদের দোষারোপ করেন। নিজের দোষ ঢাকতে সহকারী শিক্ষকদের দোষারোপ করার প্রতিবাদ করলে প্রধান শিক্ষক তাৎক্ষণিক ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং জুতা খুলে সহকারী শিক্ষক হারুনর রশীদের গালে আঘাত করেন। এতে তার নাক ফেটে যায়। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী বিদ্যালয় মাঠে জড়ো হয়ে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।
অভিভাবকরা বলেন, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মাদকাসক্ত। বিদ্যালয়ে এসে তিনি মাদক সেবন করেন।সরকারি বরাদ্দ স্লিপের টাকাসহ অন্যান্য বরাদ্দের টাকা লুটপাট করেন। বিদ্যালয়ের কোনো কাজ করেন না তিনি।
অভিভাবক ও স্থানীয়রা আরও জানান, প্রধান শিক্ষকের কারণে বিদ্যালয়ে পাঠদান হয় না। সভাপতি প্রধান শিক্ষকের আপন বোন হওয়ায় প্রধান শিক্ষক নিজের ইচ্ছেমতো বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করেন। সরকারি বরাদ্দ পাওয়ার পরেও বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেননি। বিদ্যালয়ের ল্যাপটপ, পানির ট্যাংকি, পাইপ বাসায় নিয়ে ব্যবহার করছেন তিনি।
রায়হানুল কবির নামে একজন জানান, প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতি বিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে ভুয়া নিয়োগ বাণিজ্য করে মোসরেফুল ইসলাম নামে একজনের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ভুক্তভোগী মোসরেফুল টাকা ফেরত চাইতে গেলে প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতি দুই ভাইবোন মিলে তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখান। এমনকি বিদ্যালয়ের সব বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক তারিকুজ্জামান বাবু বলেন, সরকার এখন নানা নিয়মনীতি করেছে। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। আমি প্রধান শিক্ষক। আমি সবখানে সবকিছু বলতে বাধ্য নই। যেখানে বলার বলব। মারামারির ঘটনা ঘটলেও সব অভিযোগ সত্য নয়।
বিদ্যালয়টির সভাপতি প্রধান শিক্ষক তারিকুজ্জামান বাবুর বড় বোন লুৎফুন নাহার রত্না জানান, খবরটি শুনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তারিকুজ্জামান বাবু ও সহকারী শিক্ষক হারুনুর রশিদের সঙ্গে কথা বলে তাদের বোঝানো হয়েছে। বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি থেকে হয়েছে। আলোচনা করে সমাধান করা হবে।
মিঠাপুকুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আকতারুল ইসলাম জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা দুঃখজনক। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মিঠাপুকুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আকতারুল ইসলাম জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা দুঃখজনক। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।