পরীক্ষার খাতা কেড়ে নেয়ায় শিক্ষককে থাপ্পড় দেয়া ছাত্র সাইফুল আমিন শীর্ষকে স্কুল ছাড়তে হবে। চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তাকে বহিষ্কার করবে শিক্ষা প্রশাসন। ভিডিয়ো ফুটেজে ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীর ভূমিকা স্পষ্ট হওয়ায় ইতোমধ্যে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করা তাকে বহিষ্কার করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে, বহিষ্কারের আগে এ ঘটনা তদন্ত হবে। গতকাল সোমবার দুপুরে শিক্ষা প্রশাসনের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে নিশ্চিত করেন।
এদিকে ঘটনা তদন্তে ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন। অপরদিকে বিষয়টি তদন্তে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসির টেস্ট পরীক্ষা চলছিলো। গত রোববার সকালে বাণিজ্য বিভাগের হিসাব বিজ্ঞান পরীক্ষায় শিক্ষার্থী সাইফুল আমিন শীর্ষ হলের ভেতর অন্যের খাতা দেখে লিখলে শিক্ষক নিষেধ করেন ও পরে খাতা কেড়ে নেন। এরপর ওই ছাত্র শিক্ষকের দুই গালে থাপ্পড় মারেন। সিসি ক্যামেরায় এ ঘটনা পুরোটাই রেকর্ড হয়। যে ভিডিয়ো ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। গতকাল সোমবার শিক্ষা প্রশাসনে এ ঘটনা ছিলো আলোচনার তুঙ্গে। সারা দেশের শিক্ষকরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
এ ঘটনায় শিক্ষা প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে শিক্ষা প্রশাসনের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ওই ছাত্রের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ওই ছাত্রকে মনে হয় ওই স্কুলে রাখা সম্ভব হবে না। ভিডিয়ো ফুটেজে তার ভূমিকা স্পষ্ট। পরীক্ষার সময় দেখাদেখি করলে শিক্ষকরা খাতা নিয়ে যাবেন, ৫-১০ মিনিট পরে তা আবার ছাত্রকে ফেরত দেবেন-এটা খুব সাধারণ ঘটনা। যারাই স্কুল-কলেজে পড়েছেন তারা সবাই এটা জানেন। তবে শিক্ষকের গায়ে হাত তোলার মতো গর্হিত অপরাধ কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কাম্য নয়। আর কেউ যেনো এমনটি করার সাহস না পায় তাই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। তবে তার আগে যে তদন্তগুলো হচ্ছে সেগুলোর প্রতিবেদনও পর্যালোচনা করা হবে।
এদিকে এ ঘটনা তদন্তে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।গতকাল সোমবার দুপুরে তিনি দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ইতোমধ্যে বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কমিটির প্রধান হবেন চুয়াডাঙ্গার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। একটি সরকারি স্কুলের প্রসিদ্ধ প্রধান শিক্ষককে এ কমিটির সদস্য করতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমনটি না করতে পারে।
এদিকে ঘটনার পরদিন গতকাল সোমবার সকালে চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা। ফিরে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাদের লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে কমিটি। প্রতিবেদন পেলে তারপর ব্যবস্থা নেয়া হবে। একাডেমিক বিষয়ে বিদ্যালয় ব্যবস্থা নেবে। দায়ী ব্যক্তিকে চিহ্নিত, পরবর্তী করণীয় ও বিষয়গুলো যেভাবে উঠে আসবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, ঘটনা তদন্তে চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছেন জেলা প্রশাসন। কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শারমিন আক্তারকে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিযুক্ত ছাত্রের বাবা একটি বেসরকারি টিভির চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি ও স্থানীয় একটি পত্রিকার সম্পাদক। গত রোববার দুপুরে ঘটনা ঘটার পর ওই রাতে ছাত্র সাইফুল আমিন শীর্ষ ও তার বাবা কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে শিক্ষকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে রাতেই থানায় একটা অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।