কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার পূর্ব চরপুমদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মুজিবুর রহমানকে ফাঁসাতে বিদ্যালয়েরই ৩ শিক্ষিকা তাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ, উত্যক্ত করা ও কুপ্রস্তাবের মিথ্যা অভিযোগ করেছিলেন। এসব অভিযোগ তদন্তে গঠিত ৫টি কমিটির সবগুলোর তদন্ত প্রতিবেদনে ৩ শিক্ষিকার মিথ্যা অভিযোগের বিষয়টি প্রমাণিত হয়। এ প্রেক্ষিতে মিথ্যা অভিযোগ করা ৩ শিক্ষিকাকে লঘু দণ্ড হিসেবে তিরস্কার করার মাধ্যমে বিভাগীয় মামলার দায় হতে অব্যাহতি দিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুব্রত কুমার বণিক।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রাথমিক শিক্ষা ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালকের কাছে যৌন হয়রানির মিথ্যা অভিযোগের বিচার-মানহানি মামলা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন প্রধান শিক্ষক মো. মুজিবুর রহমান। গত ২০শে নভেম্বর হোসেনপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে তিনি এ আবেদন করেছেন।
জানা গেছে, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা এপ্রিল মো. মুজিবুর রহমান প্রধান শিক্ষক হিসেবে পূর্ব চরপুমদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ছাড়া ৪ জন সহকারী শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন, যাদের ৪ জনই নারী। কিন্তু বেশিরভাগ শিক্ষক বিদ্যালয়টিতে সময়মতো আসা-যাওয়া করতেন না। এ পরিস্থিতিতে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের ফলাফল খুব খারাপ হয়। এরপর এসএমসি সভাপতি হেলাল উদ্দিন ভূঞার নির্দেশনায় প্রধান শিক্ষক মো. মুজিবুর রহমান সহকারী শিক্ষিকাদের বিদ্যালয়ে নিয়মিত করার চেষ্টা করেন।
এতে ক্ষুব্ধ হন ৩ সহকারী শিক্ষিকা নাজনীন সুলতানা, শারমিন আক্তার ও তাজমিনা খানম। পরবর্তীতে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই মার্চ তারা হোসেনপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সহকারী শিক্ষিকাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ, উত্যক্তকরণ ও কুপ্রস্তাব দেয়ার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। মামলা করার অনুমতির আবেদনে প্রধান শিক্ষক মো. মুজিবুর রহমান উল্লেখ করেন, সহকারী শিক্ষিকাগণকে বিদ্যালয়ে সঠিক সময়ে (আগমন-প্রস্থান) কার্যকর করার পদক্ষেপ নিলে ৩ জন সহকারী শিক্ষিকা নাজনীন সুলতানা, শারমিন আক্তার ও তাজমিনা খানম একত্রে প্রধান শিক্ষককে অন্যত্র বদলি ও চাকরিচ্যুতি করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু হয়। প্রথমে হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ.এস.এম. জাহিদুর রহমান তদন্ত করেন। এরপর করিমগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মফিজুল হক তদন্ত করেন। পরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকার উপ-পরিচালক (অর্থ) মো. নবুওয়াত হোসেন সরকার ও গবেষণা কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা তদন্ত করেন। এরপর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুব্রত কুমার বণিক তদন্ত করেন।
সর্বশেষ নিকলী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাকিল আহমেদ তদন্ত করেন। ৫টি তদন্ত কমিটির সবক’টি তদন্ত রিপোর্টে শিক্ষিকাগণকে যৌন হয়রানির অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। ফলে ৩ শিক্ষিকা নাজনীন সুলতানা, শারমিন আক্তার ও তাজমিনা খানমের বিরুদ্ধে গত ১৪ই নভেম্বর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তিরস্কার দিয়ে পত্র জারি করেন। এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অর্থ) মো. নবুওয়াত হোসেন সরকার এর তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর গত ৩রা জানুয়ারি অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) তাপস কুমার আচার্য্য অভিযোগকারী শিক্ষকগণের বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার কারণ দর্শানোর জন্য বলেন। এরপর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুব্রত কুমার বণিক ৩ শিক্ষিকাকে লঘুদণ্ড হিসেবে তিরস্কার করেন। প্রধান শিক্ষক মো. মুজিবুর রহমান জানান, বিভাগীয় ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু তিরস্কার করে এমন গুরুতর অপরাধকে মাটিচাপা দেয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, শিক্ষিকাগণ যৌন হয়রানির মিথ্যা অভিযোগ করায় আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি, সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হই, পারিবারিকভাবে চরম অশান্তিতে দিনাতিপাত করি। তাই মিথ্যা অভিযোগকারী শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করতে চাই। এজন্যে অনুমতি চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন দিয়েছি।