কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শিক্ষক-প্রশাসন দ্বন্দ্বে কারণে প্রায় দু’মাস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার পর গত ২৩ জুন ক্লাসে ফেরেন শিক্ষকরা। তবে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারসহ তিন দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণায় আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যায়। ফলে তীব্র সেশনজটের শঙ্কায় পড়েছেন কুবি শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, শিক্ষক-প্রশাসন দ্বন্দ্বের পর এবার পেনশন স্কিম-সংক্রান্ত দাবি আদায়ে ক্লাস বন্ধ হওয়ায় হুমকিতে পড়তে যাচ্ছে তাদের শিক্ষাজীবন।
জানা যায়, শিক্ষকদের সাত দফা দাবিকে কেন্দ্র করে উপাচার্য ড. এ এফ এম আবদুল মঈনসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষক নেতারা। ফলে শিক্ষকদের তিন দফায় ক্লাস বর্জনসহ প্রায় দুই মাস বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এতে অনেক বিভাগের মিড, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন ও সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা পেছাতে হয়েছে।
পরিক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর সূত্রমতে, শিক্ষক-প্রশাসন দ্বন্দ্বে বিভিন্ন বিভাগে প্রায় আটটি চূড়ান্ত পরিক্ষা স্থগিত হয়েছে। এছাড়াও সাতটি বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষার রুটিন স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে পেনশন স্কিম-সংক্রান্ত দাবি আদায়ে গত ২৪ জুন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন অর্ধদিবস এবং ৩০ জুন পূর্ণ দিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হওয়ায় ১ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যায় শিক্ষকরা। ৩০ তারিখ পর্যন্ত প্রথম দফার আন্দোলনে পরীক্ষা আওতামুক্ত রাখা হয়েছিলো। কিন্তু আজ (১ জুলাই) থেকে সব ধরনের পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কার্যক্রমও বন্ধ রাখা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক ফেডারেশনের এ ঘোষণার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে কুবি শিক্ষকরাও সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে আবারও ব্যাহত হতে যাচ্ছে শিক্ষাজীবন।
কুবি শিক্ষার্থীরা জানান, করোনা মহামারি, শিক্ষক- প্রশাসন দ্বন্দ্ব এবং শিক্ষক রাজনীতির কারণে এমনিতেই ধ্বংসের পথে তাদের পড়াশোনা। নতুন করে যোগ হয়েছে শিক্ষক ফেডারেশনের আন্দোলন। পরিবারের স্বপ্ন পূরণের আশায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে শিক্ষাজীবন শেষ করতেই সাত থেকে আট বছর সময় লেগে যাচ্ছে। সবাই নিজেদের স্বার্থ আদায়ে আন্দোলন করলেও শিক্ষার্থীদের স্বার্থ দেখার কেউ নেই।
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইকরামুল বলেন, করোনায় সৃষ্ট সেশনজট কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হয় শিক্ষক-প্রশাসন দ্বন্দ্ব। ফলে আমরা দীর্ঘদিন ক্লাস করতে পারিনি। আমাদের সেমিস্টারও পিছিয়েছে। যদিও গত ২৩ তারিখ থেকে অল্প পরিসরে ক্লাস শুরু হয়েছিল। কিন্তু ১ জুলাই থেকে সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণায় পুনরায় সেশনজটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে শুধু একাডেমিকভাবে পিছিয়ে পড়ব না, মানসিকভাবেও ভেঙে পড়ব। বর্তমানে এভাবে বারবার ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের হতাশায় দিন কাটাচ্ছি।।
এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু তাহের জানান, এটি শিক্ষকদের অস্তিত্বের লড়াই। কুবি শিক্ষক সমিতি ও সব শিক্ষকরা ফেডারেশনের সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করেছেন। শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরিক্ষার বিষয়ে শিক্ষক ফেডারেশন থেকে যে ঘোষণা আসবে, সেই অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নেব।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, শিক্ষকদের অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানিতে কোনো আপস হবে না। যতদিন দাবি আদায় হবে না, ততদিন আন্দোলন চলবে। আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসের কোনো নির্দেশনা আছে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত কোনো ধরনের ক্লাস নেব না। দাবি আদায় হলে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেবেন শিক্ষকরা।