শিক্ষাসচিব থাকাকালে অসচ্ছল শিক্ষককদের জমানো শত কোটি টাকা লুট করায় অভিযুক্ত কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বিএনপির মহাসমাবেশে হামলায় মকবুল নিহতের ঘটনায় পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় কামাল আবদুল নাসের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়। রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালত শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিন, চার দিনের রিমান্ড শেষে আবু নাসেরকে আদালতে হাজির করে তাঁকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন মডেল থানার উপপরিদর্শক নাজমুল হাচান। আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ২ অক্টোবর আদালত তাঁর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সচিব ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ছিলেন।
২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর একদফা দাবি আদায়ের কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর আগে ৭ ডিসেম্বর ডিবি পুলিশের হারুন অর রশীদ, মেহেদী হাসান ও বিপ্লব কুমার বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে অভিযান চালায়। কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়। কার্যালয়ের পাশে থাকা হাজার হাজার নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালায়। এতে মকবুল হোসেন নামে এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
শিক্ষা সচিব থাকাকালে কামাল চৌধুরী কবি কাজী কাদের নেওয়াজের শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতা, আবদুল হাকিমের বঙ্গবাণী, কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর কোন এক মাকে কবিতাগুলো বাদ দিয়েছিলেন। শিক্ষাসচিব থাকাকালে নিজের নিম্নমানের কবিতা নবম-দশম শ্রেণিতে পাঠ্য করেন।
এছাড়াও অনেক অপকর্মের মধ্যে অসচ্ছল শিক্ষকদের জমানো টাকা লুট করতেন।
অবসরে যাওয়ার পর এককালীন কিছু আর্থিক সুবিধা পান বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। আর এই সুবিধা পেতে চাকরিকালীন তাদের প্রতি মাসের এমপিও (বেতন-ভাতার সরকারি অংশ) থেকে অবসর ও কল্যাণ ফান্ডে যথাক্রমে ৬ ও ৪ শতাংশ করে টাকা কেটে রাখা হয়। বিধান অনুযায়ী সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর প্রতিমাসের এমপিও থেকে চাঁদা বাবদ কর্তন করা কোটি কোটি টাকা জমা থাকার কথা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে। সেখান থেকে সুদ পাওয়া যায়। ফলে জমা টাকার মূলধন বাড়ে।
পদাধিকার বলে অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতি শিক্ষাসচিব। আর ২১ সদস্যের কমিটির দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি হলেন সচিব। যিনি মূলত কোনো এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ। গতকাল পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ পর্যন্ত শিক্ষাসচিব ছিলেন। ওই সময়ে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে অবসর ও কল্যাণ ফান্ডের সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন হিসেবে জমানো প্রায় সাতশ কোটি টাকার ৯৯ শতাংশ তুলে বিভিন্ন বেসরকারি নতুন ও রুগ্ন ব্যাংকে রাখেন। যদিও অর্থ বিভাগের নির্দেশ ২৫ শতাংশের বেশি বেসরকারি ব্যাংকে রাখা যাবে না। কিন্তু, একেবারে নতুন অথবা রুগ্ন ব্যাংকে টাকার রাখায় ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হন কামাল চৌধুরী। সোনালী ব্যাংক থেকে বারবার তাগাদা দিলেও তাতে পাত্তা দেননি তখনকার দাপুটে শিক্ষাসচিব।
আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে জানা যায়, রুগ্ন ব্যাংকগুলোকে সবল করতে গিয়ে শিক্ষকদের টাকাগুলো আটকে রাখা হয়। বলা হয় ফান্ড নেই। তাতে বঞ্চিত হন বেসরকারি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকরা। অবসরের পর বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও অবসর ও কল্যাণ ফান্ডের টাকা পান না তারা।