জাতি গড়ার কারিগর হিসেবে শিক্ষকতাই সর্বোৎকৃষ্ট পেশা হিসাবে বিবেচিত। আল্লাহ শিক্ষকের ভূমিকায় হযরত আদম (আ.)কে সব জিনিসের নাম শিখিয়ে দিলেন- (সূরা আল বাকারা- ৩১)। আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন, ‘আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। একমাত্র শিক্ষকই মাথা উঁচু করে বলতে পারবেন, শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার।
মানব শিশুর প্রথম শিক্ষক মা। শিশু মা-বাবার কাছ থেকে পরিবেশ কেন্দ্রীক শিক্ষা গ্রহণ করে থাকেন। পরবর্তীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের কাছ থেকে শিশুর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়। উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদের মন্ত্রী, সচিব, মহাপরিচালকসহ সকল শিক্ষিত নাগরিকদের শিক্ষার সূচনাপর্ব শুরু করেন প্রাথমিক শিক্ষকেরা।
আমদের বড় হয়ে নিজেদের শৈশবের কথা মনে থাকার কথা নয়। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সন্তানদের লালন, পালন ও প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে শৈশবের কথা উপলব্ধি করার সুযোগ রয়েছে। বাড়িতে একটা ছোট শিশুর খেদমতে পুরো পরিবারের লোকজন একাকার হয়ে পড়ে। সেই অবুঝ শিশুকে মানব শিশুতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্রাথমিক শিক্ষকেরা। পরিবারের পরিবেশ থেকে বিদ্যালয়ের অপরিচিত পরিবেশ আদর-যত্ন, ভালোবাসা দিয়ে মুগ্ধ করে জড়িয়ে রাখেন প্রাথমিক শিক্ষকেরা।
সকল পেশার মধ্যে কঠিন পেশা প্রাথমিকের শিক্ষাদান। প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করে অবহেলিত পেশাকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও প্রাথমিক শিক্ষকদের কাজের কাঠিন্য ও যোগ্যতার মাপকাঠিতে প্রাথমিক শিক্ষকদের ১ম শ্রেণির মর্যাদা থাকার প্রয়োজন। তবুও ক্ষমতায় এসে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু প্রধান শিক্ষকদের ২য় শ্রেণির মর্যাদা দিয়েছেন। শিক্ষকতো শিক্ষক, তিনি উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা যেখানেই থাকুক তাঁদের মর্যাদা হওয়া প্রয়োজন ১ম শ্রেণির, থার্ড ক্লাস ও সেকেন্ড ক্লাস মর্যাদা দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের নাগরিক তৈরি করা সম্বব নয বরেই অনেকে মনে করেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যকার বিরূপ মনোভাব নিয়ে শিখন ঘাটতি সম্পর্কে বলেন আর সুশিক্ষিত নাগরিক তৈরি করাই বলুন- ভালোবাসা ছাড়া একবিন্দুও এগুনো সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাঝে দেশ, জনগনকে ভালবাসার পাশাপাশি, তাদের হৃদয়ে আছে শিশুদের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা। কিন্তু নানা কর্মে সংশ্লিষ্টদের হৃদয় থেকে শিশু তথা শিক্ষকদের প্রতি তাঁদের ভালোবাসার অনুপস্থিতি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। শিশু শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা ও রমজান মাসে নৈতিক শিক্ষা অর্জনে শিশুদের রোজারাখা, নামায শিক্ষা, কায়দা, আমপারা ও কোরান শরীফ শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
শিশুদের প্রতি তাদের ভালোবাসা মোটেই নেই, তা যথার্থ নয়। বেসরকারি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখা, কিন্ডারগার্টেন শিশুদের প্রতি তাঁদের অগাধ ভালোবাসা। কারণ তাঁদের নিজদের ও আত্মীয়স্বজনদের ছেলে-মেয়েরা সে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করে থাকেন। সে সব বিদ্যালয়ে শিশুদের বেলা ২টার আগে ছুটি হয়ে থাকে। যার ফলে তাকে বাড়িতে এনে গোসল করে গরম ভাত খেয়ে নির্বিঘ্ণে ঘুমিয়ে বা বিশ্রাম নিয়ে বিকাল বেলা খেলাধুলা বা বিনোদনে ছুটে যান। এসব স্কুলের শিক্ষার্থীরা রোজার মাসে পুরো বন্ধের মধ্যে ধর্মীয় কাজ করে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন। আর সংশ্লিষ্টরা উচ্চ বিদ্যালয়কে নার্সারী থেকে প্রাথমিক শাখা খোলার পৃষ্টপোষকতা করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছেন।
এতে করে আগামী প্রজন্মের একাংশকে শিশুশিক্ষায় শিক্ষাদান থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিদের্শনা মোতাবেক শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষার মূল্যায়ন ব্যবস্থার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। অথচ সরকারি-বেসরকারি হাইস্কুলের প্রাথমিক শাখা, কিন্ডারগার্টেন এ আদেশ জারি না করে তাদের পূর্বের নিয়মে পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু করার সুযোগ অব্যাহত রেখেছেন। যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনার পরিপন্থী। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ শিশুদের কেউ বিকাল বেলা খেলাধুলা, বিনোদন করবে, রোজার মাসে পুরো বন্ধ ভোগ করবে, কেউ পরীক্ষা দিবে- এ ধরনের দ্বৈত নীতি কোনো অবস্থায় কাম্য নয়। শিশু শিক্ষা চলা প্রয়োজন শিশু শিক্ষায় অভিজ্ঞ মেধা ও জনবল দিয়ে। এতে শিশুশিক্ষার শিশুবান্ধব ব্যবস্থা কায়েমের সুযোগ তৈরি হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
লেখক : সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ ও সম্পাদকীয় উপদেষ্টা দৈনিক শিক্ষা ডটকম