Valuing teacher voices : towards a new social contract for education’ ‘শিক্ষকের কণ্ঠস্বর : শিক্ষায় একটি নতুন সামাজিক অঙ্গীকার’। এই প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস-২০২৪। শিক্ষকতা হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাপূর্ণ পেশা। এখনো সব পেশার মানুষ শিক্ষকদেরকেই বেশি ভক্তি ও শ্রদ্ধা করে থাকেন। মা-বাবার পরের স্থান হচ্ছে শিক্ষকের। সমাজ ও দক্ষ মানব সমাজের বিনির্মাণে শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষক সমাজকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার কারিগর। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মাঝে নৈতিকতা সৃষ্টি করে থাকে। যার ফলে শিক্ষার্থী সুনাগরিক হয়ে গড়ে ওঠে। সমাজ ও দেশের প্রতি তারা দায়িত্বশীল ও শ্রদ্ধাশীল হয়। শিক্ষকের এইসব কৃতিত্বের স্বীকারোক্তির জন্য তাদের স্মরণ করতে ও কল্যাণ কামনার জন্য শিক্ষকের যে গুরুত্ব, সেটা স্বীকার করার জন্য প্রতিবছর তাদের সম্মানার্থে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়।
২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম বিশ্ব শিক্ষক দিবসের সরকারিভাবে পালনের সূচনা হয়েছে। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে অন্তবর্তীকালীন সরকার এই দিবসকে গুণীজনদের সম্মানিত করবার মাধ্যমে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন। অতীতে দীর্ঘ সময় থেকে প্রবীণ শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ বেসরকারিভাবে ইউনেস্কোর সহযোগিতায় কেন্দ্রীয়ভাবে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন করে আসছেন। সে সময় থেকে সরকারি ভাবে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালনে দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ। সরকারিভাবে গুণী শিক্ষক সম্মানিত হওয়ায় বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ আজ গর্বিত।
পরিতাপের বিষয় হলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পেশাজীবিদের মধ্যে বেশি হেনস্তার শিকার হয়েছে, শিক্ষক সমাজ। এদেশের সচিব থেকে শুরু করে শিক্ষক সমাজ রাজনৈতিক বলয়ে আবদ্ধ। মন্ত্রী, এমপিসহ তৃণমূলের হোমরা-চামরা এমনকি বর্তমান সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও আন্দোলনকারী দলের হস্তক্ষেপ থেকে তারা মুক্ত হতে পারছেন না। ক্ষমতাশীল দলের মন জুগিয়ে চলতে না পারলে পেশাগত দায়িত্ব পালন করা দায়। বিপুল সংখ্যক শিক্ষককে অপমান, অপদস্থ করে চাকরি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। যা আইন বা রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে অপরাধ। বড় বড় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি আমলাদের তথা এমপি মন্ত্রীদের রিমান্ডে যেতে দেখেছি। অথচ শিক্ষক হেনস্তার কারণে বিচারের মুখোমুখি করতে তেমন দৃশ্যমান হয়নি। বেশিরভাগ শিক্ষক হেনস্তা করা হয়েছিলো বেসরকারি স্কুল, কলেজ শিক্ষকদের। তাদের চাকরি বেসরকারি বিধায় তাদের হয়রানিমুক্ত ও মর্যাদা নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনসহ স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপনের প্রয়াসে তাদের চাকরি জাতীয়করণ করা জরুরি। পাশাপাশি শিক্ষক হেনস্তাকারীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোও অন্তর্বতীকালীন সরকারের কাছে প্রত্যাশা। অন্যদিকে বেতনগ্রেডের বৈষম্য বেড়াজাল আবদ্ধ প্রাথমিকের শিক্ষক সমাজ। তাদের বেতন গ্রেডের বৈষম্যের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করার প্রয়াসে সময়ক্ষেপণ কাম্য নয়। সমস্যার মাঝে আবদ্ধ থেকে শিক্ষকের কণ্ঠস্বর শিক্ষায় নতুন সামাজিক অঙ্গীকার চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়বে।
লেখক- শিক্ষাবিদ